সাত দিন পর নিহত যুবকের বাবার হত্যা মামলা
Published: 4th, March 2025 GMT
কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলা ও সংঘর্ষের সময় শিহাব কবির (৩০) নামের এক যুবক নিহতের ঘটনায় সাত দিন পর হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলাটি করেন শিহাবের বাবা মো. নাসির উদ্দিন। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ার বাসিন্দা ও প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের সাবেক সুপার।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে সমিতিপাড়ায় বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ-সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে এ ঘটনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি সমিতি পাড়ার দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৩০০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে বিমানবাহিনী। ওই মামলায় বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি ও লুটপাটের পরিমাণ দেখানো হয় ৬৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
হামলা ও সংঘর্ষে শিহাব কবিরের হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া সড়কে মৌন মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
শিহাবের বাবার করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে তিনি (বাদী) চোখের চিকিৎসা করাতে স্ত্রীকে (আমেনা খাতুন) নিয়ে বাড়ি থেকে শহরের কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে যান। দুপুর ১২টার দিকে সেখানে মহিউদ্দিন নামের এক যুবকের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, একমাত্র ছেলে শিহাব কবিরকে বিমানবাহিনীর জনৈক সদস্য গুলি করে হত্যা করেছেন এবং সন্তানের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পড়ে আছে। খবর শোনার পর তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান, পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) করার পর লাশ হস্তান্তর করা হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ হস্তান্তর করে। শিহাব কোনো রাজনীতি কিংবা বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। বিমানবাহিনীর সদস্য কিংবা অন্য কারও সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব–সংঘাতও ছিল না।
এজাহারে আরও বলা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে বিমানবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় যুবক জাহেদুল ইসলামকে ঘাঁটিতে নিয়ে নির্যাতন চালান। এ খবরে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং জাহেদুল ইসলামকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। শিহাব কবির রাস্তায় কী ঘটছে দেখার জন্য সমিতিপাড়ার জনৈক নাঈমের বাসার কাছে যান। তখন মাথায় গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়। এ সময় বিমানবাহিনীর সদস্যরা শিহাবকে নিয়ে যান। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে শিহাবকে হাসপাতালে না নিয়ে দেরি করেন, এর ফলে রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়।
৩০০ জনের বিরুদ্ধে বিমানবাহিনীর মামলাগত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সমিতি পাড়ার রাহাত ইকবাল ওরফে ইকবাল বাহার (৪২) ও এজাবত উল্লাহর (৪৩) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ একাধিক ধারায় মামলা করেন বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট মো.
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে নাশকতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিনষ্টের উদ্দেশ্যে বিমানবাহিনীর ঘাঁটির স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোর ওপর দেশি অস্ত্র, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ অতর্কিতে হামলা করে। দুষ্কৃতকারীরা বিমানবাহিনীর ছয়-সাতটি সিসিটিভি ক্যামেরা, দুটি মোটরসাইকেল, কয়েকটি সরকারি গাড়ি, একটি অফিস ভবন, নির্মাণাধীন দালান ভাঙচুর করে। নির্মাণসামগ্রীও লুটপাট করা হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
শিহাব কবির হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, মামলা দুটির তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে নিশ্চিত হওয়া যাবে শিহাব কবির গুলিতে, নাকি ইটপাটকেলের আঘাতে মারা গেছেন।
গুলিতে শিহাব কবিরের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবার ও এলাকাবাসী দাবি করলেও পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে গুলির কথা উল্লেখ নেই। হাসপাতাল মর্গে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই মুহাম্মদ আলী উদ্দিন। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত শিহাব কবিরের সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও মাথার খুলিতে ছয়-সাত ইঞ্চি গভীর গর্ত রয়েছে। মগজ সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসে। সুরতহাল প্রতিবেদনে উপস্থিত সাক্ষী হিসাবে নিহত শিহাবের বাবা-মায়ের নাম ও স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২৪ ফ ব র য় র স ঘর ষ তদন ত সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক