যে ২ উপায়ে ট্রাম্পের কাছ থেকে ইউক্রেনকে মুক্ত করা যাবে
Published: 4th, March 2025 GMT
গত শুক্রবার অবন্ধুসুলভ আচরণের মুখোমুখি হয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউক্রেনীয় নেতার উদ্দেশে লেখেন, ‘শান্তির জন্য প্রস্তুত হলে আবার ফিরে আসবেন।’
শান্তি একটি শক্তিশালী শব্দ। কিন্তু এর পুরো অর্থ বুঝতে হলে যে পটভূমিতে এটি উচ্চারিত হচ্ছে, সেদিকে আমাদের তাকাতে হবে। ট্রাম্প যেদিন শান্তির গুরুত্ব নিয়ে বললেন এবং জেলেনস্কিকে চিন্তা করার জন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন, সেদিনই ইউক্রেনের শহরগুলোয় দেড় শতাধিক ড্রোন হামলা করে রাশিয়া। যদিও ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে শান্তির ব্যাপারে তিনি দুর্দান্ত অগ্রগতি ঘটিয়েছেন। বাস্তবতা হলো, তাঁর অভিষেকের পর ইউক্রেনে পুতিনের হামলা বেড়েছে।
গতকাল রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আমন্ত্রণে ইউরোপের নেতারা, ন্যাটোর মহাসচিব জেনারেল মার্ক রুট এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো লন্ডনে সমবেত হয়েছিলেন। ইউক্রেনের জন্য সমর্থন জোরদার করা এবং ট্রাম্পের সমর্থন জয় করে যুদ্ধ অবসানের একটি পরিকল্পনা তৈরির প্রতিশ্রুতি তাঁরা দিয়েছেন।
ইউরোপীয়রা বুঝতে পারছেন যে (যেটা ট্রাম্প প্রশাসন বুঝতে পারছে বলে মনে হয় না) ইউক্রেন এমন একটি শান্তি চুক্তি চায়, শর্তের কারণে যেন সেটা নষ্ট না হয়ে যায়। পুতিনের ভাবনায় রয়েছে পুরো ইউক্রেন; ন্যাটো কিংবা ইউক্রেনের ভূমির অংশবিশেষ নয়। চুক্তির পরও ইউক্রেন যদি স্বাধীন থাকে, ইউক্রেনের যদি নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকে, তাহলে পুতিন সেখানেই থেমে যাবেন না। তিনি এখন ইউক্রেনের একখণ্ড ভূমি নিয়ে সাময়িক বন্দোবস্তে আসবেন, যাতে করে ভবিষ্যতে গোটা ইউক্রেনকে নিজের করায়ত্তে নেওয়া যায়। ন্যাটো যদি পুতিনের চিন্তার কারণ হতো, তাহলে তিনি ২০২৩ সালে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তিকে এত সহজে মেনে নিতেন না। বর্তমানে ইউক্রেনের সীমানা থেকে মস্কোর দূরত্বের চেয়ে সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে ন্যাটোর সীমানা আরও কাছাকাছি।
পুতিন স্বাধীন ইউক্রেনকে সহ্য করতে পারেন না। তার কারণ হলো, গত ৩০০ বছরে তাঁর পূর্বসূরিদের কেউই এটা মেনে নিতে পারেননি। আরও একটি কারণ হলো, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেন যদি সফল হতে পারে, তাহলে সেটা পুতিনের স্বৈরতান্ত্রিক মডেলের শাসনের ওপর সরাসরি হুমকি তৈরি করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিকে তাঁর পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন। তিনি চান যেকোনো মূল্যেই সেটা সফল করতে।
বাইডেনের আমলে আফগানিস্তানে যেটা ঘটেছে, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প সেটা হতে দিতে পারেন না। নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফাঁদে নিজেই আটকা পড়ে ট্রাম্প তড়িঘড়ি একটা সাফল্য অর্জন করতে চাইছেন। সেখান থেকেই গত সপ্তাহে তিনি জেলেনস্কিকে আক্রমণ করেছেন।
পুতিন বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। সে কারণে তিনি ট্রাম্পের দেওয়া সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণ করার জন্য হয়তো একটা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে পারেন, কিন্তু ইউক্রেন ধ্বংস করে দেওয়ার কৌশলগত লক্ষ্য থেকে তিনি কখনোই সরে আসবেন না। নিরাপত্তা নিশ্চয়তা শর্ত ছাড়া চুক্তি হলে, সেই চুক্তি ভেঙে যাবে এবং যুদ্ধ আবারও শুরু হবে।
শুক্রবারের ঘটনা নতুন একটি বাস্তবতার প্রকাশ, যেটা কয়েক সপ্তাহ ধরে দৃশ্যমান হয়ে উঠছিল। আমেরিকা এখনো বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু এটা একটা আলাদা বিশ্ব। ওভাল অফিসে জেলেনস্কিকে ট্রাম্প ও জেডি ভ্যান্সের চেপে ধরার দৃশ্যটি ইউরোপজুড়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে মিউনিখ সম্মেলনে ইউরোপের নেতারা ভ্যান্সের উপদেশবাণী শুনেছিলেন। তাঁরা এরই মধ্যে বুঝতে পেরেছিলেন যে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো তাঁরা আর অপেক্ষা করে থাকতে পারবেন না। এরপরও কারও মধ্যে বিন্দুমাত্র দ্বিধা থাকলেও শুক্রবারের ঘটনায় সেটা ভেঙে গেছে।
ইউরোপ এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আরও বেশ কিছু চিন্তাভাবনা যেমন সম্মেলন, টেলিফোন আলাপ, প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর খসড়া সিদ্ধান্ত এবং ইউক্রেনকে সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দ্রুতগতিতে এসেছে। এই সব অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েই যে প্রশ্ন করা দরকার সেটি হলো, ইউক্রেন ও বাকি ইউরোপের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্নটির উত্তর দিতে এগুলো কখন ব্যর্থ হয়? এসব ধারণা কবে বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্তে পরিণত হবে?
ইউক্রেনের ওপর ট্রাম্পের খবরদারি করার জায়গাটি হলো অর্থ ও অস্ত্র। অস্তিত্বের লড়াই চালিয়ে যাওয়া এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে হলে এ দুটোই ইউক্রেনের দরকার। এখন দুটি উপায়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাত থেকে ইউরোপ তুরুপের তাসটি সরিয়ে নিতে পারে। এক.
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে পরিমাণ সহযোগিতা ও সমর্থন দেয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন ও নরওয়ে সম্মিলিতভাবেও সেটা প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। কিন্তু এই সব বাস্তববাদী পদক্ষেপ তাৎক্ষণিকভাবে ইউরোপের ভূমিকাকে এক ধাপ এগিয়ে নেবে এবং ইউক্রেনও তাতে শ্বাস নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাবে।
১৯১৮ সালে বলশেভিক রাশিয়া ইউক্রেনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান, সেনা প্রত্যাহার এবং প্রোপাগান্ডা বন্ধের অঙ্গীকার করে জার্মানির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল। একই সময়ে কিয়েভ তাদের বিশাল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের বিনিময়ে ইউক্রেনের স্বাধীনতা সুরক্ষা দেওয়া হবে এই শর্তে জার্মানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল।
এক বছরের মধ্যে চুক্তিটি ভেস্তে যায়। জার্মানির সেনারা চলে যায়, রাশিয়ার রেড আর্মি সেখানে প্রবেশ করে এবং ইউক্রেন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মুছে ফেলে। সেই চুক্তি এবং ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্যে ১০৪ বছর পার হওয়ার পর ইউরোপ অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যে ইউরোপের অংশ, তার স্বীকৃতি দিয়েছে।
মস্কো বাস্তবে কখনো বদলায় না, কিন্তু ইউরোপ এখনো বদলাতে পারে।
দিমিত্র কুলেবা ইউক্রেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। হার্ভার্ড বেলফার সেন্টারের একজন সিনিয়র ফেলো
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র স ইউর প র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।