রোজা থাকলে অনেক সময় মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে। চিকিৎসকেরা বলেন, মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার জন্য দায়ী মূলত দাঁতে জমে থাকা খাদ্যকণা এবং মুখের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সালফাইড ও অ্যামোনিয়া তৈরি হওয়া। রোজা রেখে অনেকে দাঁত ব্রাশ করেন না। এতে দাঁতে খাদ্যকণা জমে থাকতে পারে। এ ছাড়া খাবারের টুকরো, তেল ও চর্বি মুখের মৃত কোষ ও লালার সঙ্গে মিশে এক ধরণের ঝিল্লি তৈরি করতে পারে। এই ঝিল্লি জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে দাঁতের মাড়িতে প্রদাহ তৈরি করতে পারে।  চিকিৎসকেরা বলেন, নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করলে দাঁত ক্ষয় হওয়া শুরু করে। যেহেতু রমজানে আমাদের খাদ্য গ্রহণের সময় পরিবর্তন হয় এই সময়ে দাঁত পরিষ্কারের সময়ও পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার মোহাম্মদ এহতেশাম খালেদ, ডেন্টাল সার্জন, ডেন্টাল আর্ট-অ্যাসথেটিক স্মাইল ক্লিনিক।

একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে এই চিকিৎসক দাঁতের যত্নে যে পরামর্শ দিয়েছেন— ‘‘রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ও সেহেরির পর দাঁত ব্রাশ করতে হবে। নিয়মিত ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করে দাঁতে জমে থাকা খাদ্যকণা বের করে ফেলতে হবে। অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। টাং স্ক্রাপার দিয়ে জিহ্বায় লেগে থাকা ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।’’

শুধু দাঁত ব্রাশ করলেই হবে না পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি। ডাক্তার মোহাম্মদ এহতেশাম খালেদ বলেন, ‘‘ ইফতারের পর থেকে সেহেরির আগ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এতে মুখের আর্দ্রতা ঠিক থাকবে। এতে একদিকে অনেক রোগ প্রতিরোধ সম্ভব অন্যদিকে মুখের দুর্গন্ধ কমে যায়।’’

আরো পড়ুন:

রমজানে কখন, কত সময় ব্যায়াম করবেন 

যে ভুল করলে রোজা রাখলেও ওজন কমবে না

দাঁত ভালো রাখতে আরও যা মানতে হবে

১.

শাকসবজি এবং ভিটামিন-সি যুক্ত দেশি ফল খেতে হবে। 

২. ধূমপান করা যাবে না।

৩. ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংকস, চকলেট, তেলে ভাজা, অধিক মসলাদার এড়িয়ে যেতে হবে। 

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ