ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল সাড়ে ৩টা। ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস তখন ছেড়েছে শমশেরনগর রেলস্টেশন। আউটার সিগনালে ট্রেনটি পৌঁছামাত্র হঠাৎ রেললাইনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এক ব্যক্তি। মুহূর্তেই মাথাসহ শরীর কয়েক খণ্ড হয়ে যায়। ওই ব্যক্তির সঙ্গে ছিল একটি মোবাইল ফোন। পাশেই পাওয়া যায় একটি কীটনাশকের বোতল।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার (জিআরপি) পুলিশ সংবাদ পেয়ে লাশ উদ্ধার করে। একপর্যায়ে মৃত ব্যক্তির মোবাইল ফোনে কল আসে। সেই সূত্রে জানা যায় তাঁর পরিচয়। মৃত মহরম আলী (৫৫) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের চানগাঁওয়ের বাসিন্দা। স্থানীয় পীরের বাজারে মুদি দোকান রয়েছে তাঁর। পুলিশের কাছে স্বজন জানান, ঋণের চাপে বিপর্যস্ত ছিলেন মহরম। এ কারণেই তিনি চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিতে পারেন।
মহরম আলীর তিন ছেলে। তাদের মধ্যে বড় ছেলে প্রবাসী। মেঝো ছেলেটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ও ছোট ছেলে কেজি স্কুলে পড়ে। তাঁর বড় ভাইয়ের স্ত্রী মালা বেগম জানান, গ্রামের মহাজন ও কয়েকটি এনজিও থেকে নানা সময়ে ঋণ নিয়েছিলেন মহরম আলী। সেই টাকা বাড়তে বাড়তে ২০ লাখ টাকার বেশি হয়ে গেছে। কিছুদিন ধরে কিস্তি বা মূল টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এ কারণে পাওনাদাররা মহরমকে চাপ দিচ্ছিলেন।
হাজীপুর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাজা মিয়া বলেন, তিনিও জানতে পেরেছেন মুদি ব্যবসায়ী মহরম আলী ঋণগ্রস্ত ছিলেন। ঋণের চাপ সইতে না পেরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে সবার ধারণা।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার (জিআরপি) উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক সরকার বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত মহরম আলীর লাশ উদ্ধার করে সেদিনই ময়নাতদন্ত করা হয়। মঙ্গলবার রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গজারিয়ায় পরিবারকে জিম্মি করে অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি বাড়িতে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে স্বর্ণালংকারসহ অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা।
রবিবার (২ নভেম্বর) মধ্যরাত ৩টার দিকে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি দক্ষিণপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হকের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে বেঁধে ডাকাতি
বগুড়ায় বৃদ্ধাকে খুন করে ডাকাতি: গ্রেপ্তার ৪, টাকা উদ্ধার
ভুক্তভোগী সাথী বেগম বলেন, “রাত ১টার দিকে একটি শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভাঙে। সে সময় বিষয়টি সেভাবে আমলে নেইনি। রাত ৩টার দিকে উঠে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে বসলে জানালার গ্রিল কেটে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে দুই যুবক। তারা প্রথমে আমাকে, পরে আমার ছেলে সাবিদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে তারা আমাদের বিল্ডিংয়ের চারটি ফ্ল্যাটের প্রত্যেকটিতে একের পর এক লুট করতে থাকে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে এই ডাকাতি।”
তিনি বলেন, “ডাকতরা নগদ ৩ লাখ টাকা, ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৯টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রেখে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে যায়।”
প্রত্যক্ষদর্শী সাবিদ বলেন, “জানালার গ্রিল কেটে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দুইজন। পরে ডাকাত দলের আরো ২২-২৩ জন সদস্য বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। বাইরে আরো কয়েকজন পাহারায় ছিল। ডাকাত দলের অধিকাংশ সদস্যের মুখে মাস্ক ও গামছা ছিল। তারা অস্ত্রের মুখে আমাকে জিম্মি করে আমাকে দিয়েই অন্যান্য ফ্ল্যাটের দরজা খোলান। আমার চোখের সামনে একের পর এক রুমে ডাকাতি হয়।”
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হক বলেন, “আমার তিন ছেলে দেশের বাহিরে থাকে। তাদের পাঠানো প্রায় ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার, কয়েকদিন আগে ব্যাংক থেকে তোলা নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৯টি মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তারা আমাদের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু জানত। কোন রুমে কী আছে, আমরা কবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছি এমনকি বাসায় ওয়াইফাই বন্ধ সবই জানত। আমার ধারণা, স্থানীয় লোক এর সঙ্গে জড়িত। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেব।”
ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী লাক মিয়া বলেন, “আমরা ভোর ৫টার দিকে বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারি। পরবর্তীতে বাইরে থেকে লক করা রুম খুলে আমরা আটকে থাকা পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করি। তারপর বিষয়টি জানাজানি হয়।”
রবিবার (৩ নভেম্বর) গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “সকাল ৬টার দিকে দিকে আমি ৯৯৯ থেকে একটি কল পেয়ে এ বিষয়ে জানতে পারি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।”
ঢাকা/রতন/মাসুদ