দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর মঙ্গলবার কংগ্রেসে প্রথম ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’। ক্ষমতায় বসার ছয় সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন, বাণিজ্যযুদ্ধ আবার শুরু এবং সরকারি হাজার হাজার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার পর দেওয়া এ ভাষণের সময় উজ্জীবিত দেখা যায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।
আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এদিন কংগ্রেসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্টের বক্তব্য দেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিতের পরদিন কংগ্রেসে দেওয়া তাঁর এ ভাষণ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন বিশ্বনেতারা। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বাগ্বিতণ্ডার পর দেশটিতে সামরিক সহায়তা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে ইউক্রেনের প্রচেষ্টা হুমকির মুখে পড়েছে। তিন বছর আগে ইউক্রেনে এ হামলা শুরু করে রাশিয়া। এত দিন জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে এসেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির এ পরিবর্তন ট্রাম্পের রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ারই বার্তা দিচ্ছে।
ট্রাম্প তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে মাত্র কয়েক মিনিট পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলেছেন। ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজ চুক্তি সই এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বাগ্বিতণ্ডার পর এ চুক্তি সই পিছিয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে এবং তারা শান্তির জন্য প্রস্তুত এমন জোরালো ইঙ্গিত পেয়েছি। এটি কি চমৎকার হবে না?’
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং আব্রাহাম চুক্তির পরিধি আরও বাড়ানোর বিষয়ে আবারও নিজের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। তাঁর প্রথম মেয়াদে ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আব্রাহাম চুক্তি সই হয়েছিল।
যুদ্ধ শুরুর জন্য ট্রাম্প দৃশ্যত ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন। তবে রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দুই–তৃতীয়াংশ রিপাবলিকানসহ ৭০ শতাংশ মার্কিনি এ জন্য রাশিয়াকে বেশি দায়ী করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে ভারসাম্য আনার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। যদিও ব্যাপকহারে কর কমানোর জন্য বিল পাসে আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে কেন্দ্রীয় সরকারের ৩৬ লাখ কোটি ডলারের ঋণের বোঝার সঙ্গে আরও পাঁচ লাখ কোটি ডলার যোগ হবে। এ বছরের শেষের দিকে কংগ্রেসকে দেশটির ঋণের সীমা বাড়াতে হবে, অন্যথায় ভয়াবহ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
ট্রাম্পের বক্তব্যে তাঁর নির্বাচনী প্রচারের কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে আসে। তিনি বারবার তাঁর পূর্বসূরি ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। অপরাধে জড়িত অভিবাসীদের ‘বর্বর’ আখ্যায়িত করেন। এ ছাড়া ‘লিঙ্গ রূপান্তরের মতাদর্শ’ নিষিদ্ধের প্রতিশ্রুতি দেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) বিকেলে চালানো এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার ডেপুটি হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন।
রবিবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
ইরানে আবারো হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরো জানিয়েছে, তেহরানে ইসরায়েলের নতুন হামলায় আইআরজিসির তৃতীয় ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরিও নিহত হয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের প্রথম হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয় জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল ইরান।
রবিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার ইরানজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। হতাহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন নারী এবং বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ