স্মার্ট যাত্রার টেকসই সমাধান-টেইলজি ই-মোটরসাইকেল
Published: 6th, March 2025 GMT
আচ্ছা ভাবুন তো, সারা সপ্তাহে নিশ্চিন্তে বাইক চালালেন, তেল নিয়ে টেনশন নেই এমনকি নেই প্রতিদিন হিসাব করে চার্জ দেয়ার টেনশন। সপ্তাহে মাত্র ১ বার চার্জ দিয়ে সারা সপ্তাহে প্রায় ১২০ কিলোমিটারের ও বেশি চলাচল করতে পারবেন। কিন্তু এটাও কি সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। এডিসনের টেইলজি ই-মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছে এই অবিশ্বাস্য সুযোগ।
বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব যানবাহনের প্রসারে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে এডিসন ও টেইলজি। এই দুই কোম্পানীর যৌথ উদ্যোগে শীঘ্রই বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে টেইলজি ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল যা দেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে আরো টেকসই করতে এবং জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে সক্ষম হবে।
এডিসন: উদ্ভাবন ও উন্নয়নের পথিকৃৎ
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এডিসন গ্রুপ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর একটি। প্রযুক্তি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, রিয়েল এস্টেট, ইলেকট্রনিক্সসহ নানা খাতে উদ্ভাবন ও উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
এডিসন গ্রুপের শীর্ষ শিল্পখাতগুলির মধ্যে মোবাইলফোন, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ই-কমার্স, জেনারেটর ও সাবস্টেশন, ফায়ার সেফটি এবং আইটি অন্যতম। গুণগতমান এবং উন্নত প্রযুক্তি তাদের অনন্য প্রতিশ্রুতি। প্রতিদিনের জীবনযাত্রা ও জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়নে ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবদান রেখে চলেছে এডিসন।
টেইলজি: ইলেকট্রিক যানবাহনের বিশ্বস্ত নাম
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত টেইলজি গ্রুপ বৈদ্যুতিক যানবাহনের উন্নয়ন, উৎপাদন, বিক্রয় এবং সার্ভিসিংয়ে এক অনন্য নাম।
গ্লোবাল ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল শিল্পে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্র্যান্ড টেইলজি। ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল শিল্পে টেইলজি ৯০টিরও বেশি দেশে তাদের পন্য রপ্তানি করে আসছে। ফলশ্রুতিস্বরূপ, প্রতিষ্ঠানটি ইউএন সাসটেইনেবিলিটি পার্টনার, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড (সর্বাধিক মাইলেজ অর্জনে) ও জার্মান রেড ডট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এছাড়াও তাদের রয়েছে ২০০০ এরও বেশি নিজস্ব পেটেন্ট। টেইলজি’র একমাত্র লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহন শিল্পে বৈশ্বিক পরিবর্তন নিয়ে আসা।
গবেষণা ও উৎপাদন খাতেও বেশ অবদান রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশে টেইলজি আনার লক্ষ্য: এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা
এডিসন বাংলাদেশে টেইলজি এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস) অর্জনে অবদান রাখতে চায়। লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা এবং ৩০% যানবাহনকে ইলেকট্রিক যানবাহনে রূপান্তর করা যা বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়ক হবে।"এডিসন গ্রুপ এবং টেলজি গ্রুপের পার্টনারশিপ, একটি পরিবেশবান্ধব ও পরিবহনে দীর্ঘমেয়াদি ইকো-সিস্টেম তৈরি করতে সহযোগিতা করবে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক”- এডিসন গ্রুপের চেয়াম্যান আমিনুর রশীদ।
কোন ধরনের মডেল নিয়ে আসছে টেইলজি?
Saibei (F71): এতে রয়েছে ১৫০০ ওয়াট মোটর এবং ৭২ ভোল্ট ৩৫ অ্যাম্পিয়ার গ্রাফিন ব্যাটারি। ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ এবং ৫৫ কিমি/ঘণ্টা সর্বোচ্চ গতি। ৬৮০ মিলিমিটার প্রশস্ত সিট।এতে রয়েছে ডাবল ডিস্ক ব্রেক ডিজাইন, যা উচ্চ গতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আরও আছে ৫০,০০০ cd হাই-ব্রাইটনেস ডুয়াল-আই বায়োনিক হেডলাইট ও স্টাইলিশ ডিসপ্লে ড্যাশবোর্ড। সাইবেই (F71) মডেলের বাইক পেয়ে যাচ্ছেন আকর্ষণীয় অলিভ গ্রীণ ও স্টোন হোয়াইট কালারের মধ্যে।
Mengsu (R30): ১০০০ ওয়াট মোটর এবং ৬০ ভোল্ট ২৩ অ্যাম্পিয়ার গ্রাফিন ব্যাটারি। ৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ এবং ৪৫ কিমি/ঘণ্টা সর্বোচ্চ গতি। এই মডেলের বিশেষত্ব হলো নিরাপদ ব্রেকিং সিস্টেম এবং চমৎকার ডিজাইন। কমপ্যাক্ট সাইজ এবং লাইটওয়েট বডি সংকীর্ণ রাস্তায় সহজে চলাচলের সুবিধা দেয়। মেংসু (R30) মডেলের বাইক পেয়ে যাচ্ছেন আকর্ষণীয় গোস্ট হোয়াইট ও মেটালিক রেড কালারের মধ্যে।
ডিজাইনের দিক থেকেও অনেক এগিয়ে টেইলজি। উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হল:
লং-রেঞ্জ ব্যাটারি: এতে ব্যাবহার করা হয়েছে গ্রাফিন ব্যাটারি প্রযুক্তি, যা ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম।
পাওয়ারফুল মোটর: দ্রুতগতি সম্পন্ন ।
এনার্জি ইফিশিয়েন্সি: রাস্তা যেমনই হোক, টেইলজি’র রয়েছে ৯৩% এনার্জি ইফিশিয়েন্সি যা যেকোনো রাস্তায় স্মুথলি চলতে সক্ষম।
IPX6: এতে রয়েছে ওয়াটার প্রুফ টেকনোলজি যার ফলে ভারী বৃষ্টিপাতে বা জলাবদ্ধ রাস্তায় চলতেও কোনো সমস্যা হবেনা।
ব্যবহারকারীরা কি কোনো সুবিধা পাবে?
১০০% পাবে। বয়স ১৮ হোক কিংবা ৫০, টেইলজি ই-মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবে সবাই। প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে মাত্র ১৫ পয়সা, যা সাধারণ বাইকের তুলনায় ৯৭% কম। চিন্তা করতে হবেনা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ নিয়ে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হোম চার্জিং সিস্টেমের মাধ্যমে দেয়া যাবে চার্জ। অন্যান্য ই-মোটরসাইকেলের তুলনায় এই মোটরসাইকেলের দাম তুলনামূলক সহজলভ্য। তাই কর্মজীবি, ছাত্র-ছাত্রী, নারী সহ যে কেউই স্বল্প দামে কেনার সুযোগ পাবে এই বাইকটি।
মূল্য ও ওয়ারেন্টি সুবিধা
রমজান মাস উপলক্ষে টেইলজির ই-মোটরসাইকেলে রয়েছে অবিশ্বাস্য মূল্য ছাড়। বর্তমানে Saibei (F71) বাইকের দাম মাত্র ১,৩৯,৯৯০ টাকা যার রেগুলার প্রাইস (১,৪৯,৯৯০) টাকা। Mengsu (R30) বাইকের দাম ৯৯,৯৯০ টাকা যার রেগুলার প্রাইস (১,০৯,৯৯০) টাকা। অর্থাৎ এই রমজান উপলক্ষে টেইলজি’র যেকোনো বাইক কিনলেই থাকছে স্পেশাল ডিসকাউন্ট। শুধু তাই নয় বাইক কেনার সাথে সাথে গ্রাহকরা গিফট হিসেবে পেয়ে যাবেন আকর্ষণীয় ১টি হেলমেট। টেইলজি ই-মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা পেয়ে যাবেন ২ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি এবং ১৮ মাসের ব্যাটারি পরিবর্তনের ওয়ারেন্টি। এমনকি ব্যবহারকারীরা পেয়ে যাচ্ছেন ৮টি সার্ভিস যার মধ্যে ৪টি আবার সম্পূর্ণ ফ্রি আর প্রতিটি শোরুমের সাথে আছে কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট, ফলে সার্ভিস নিয়ে নেই কোনো ভাবনা।
অনুমোদন ও রেজিস্ট্রেশন সুবিধা
টেইলজির ই-মোটরসাইকেলগুলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দ্বারা পরীক্ষিত এবং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) দ্বারা অনুমোদিত। কেনার সময় কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই ব্যবহারকারীরা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তাহলে আর দেরী কেন? এই রমজানেই নিজের করে নিন আপনার স্বপ্নের বাইক, স্বপ্ন পূরণ হোক টেইলজির সাথে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ