রাজশাহীতে ভরাট শুরু হওয়া পুকুর ফেরানো হচ্ছে আগের অবস্থায়
Published: 6th, March 2025 GMT
রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো ভরাট হওয়া একটি পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নগরের ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা আয়তনের এই পুকুরটি কিছুদিন ধরে ধীরে ধীরে ভরাট করা হচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করেন এবং শ্রমিক নিয়োগ করে পুকুরটির উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন।
নগরের ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লায় অবস্থিত এই পুকুরটি ‘জোড়া পুকুর’ নামে পরিচিত। এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সংরক্ষণের তালিকায় রয়েছে। পুকুরের অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি করে হিকু নামের এক ঠিকাদার কিছুদিন ধরে এটি ভরাট করছিলেন।
একসময় রাজশাহী শহরে অসংখ্য পুকুর ছিল, তবে অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। ২০১৪ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে রিট করলে, বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয়ের জরিপে নগরে ৯৫২টি পুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট এসব পুকুর সংরক্ষণ এবং ভরাট হওয়া পুকুরগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশকে এ নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশনার পরেও শহরের একাধিক পুকুর ভরাট হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও কোনো পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়নি। এবারই প্রথম ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লার এই পুকুরটি উদ্ধার করা হচ্ছে, যা এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত থেকে ভরাট কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ২১ জন শ্রমিক পুকুর থেকে মাটি অপসারণের কাজ করছেন। পুকুরের সামনে টাঙানো নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ। ময়লা/আবর্জনাসহ অন্য যে কোনো উপায়ে পুকুর ভরাট করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদেশক্রমে সহকারী কমিশনার, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।’
ভূমি অফিসের কর্মচারীরা জানান, পুকুরটির আয়তন প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা, যার মধ্যে দুই পাড়ে প্রায় ১০ কাঠা ভরাট করা হয়েছে। খতিয়ানে যে অংশটি পুকুর হিসেবে চিহ্নিত, সেটুকু উদ্ধার করা হবে এবং সেই মাটি পাড়ের অংশে ফেলা হবে।
বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের জানানোর পর আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। ভবিষ্যতেও যদি পুকুর ভরাটের কোনো তথ্য পাই, তাহলে অবশ্যই এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
ঢাকা/কেয়া/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?