রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো ভরাট হওয়া একটি পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নগরের ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা আয়তনের এই পুকুরটি কিছুদিন ধরে ধীরে ধীরে ভরাট করা হচ্ছিল। 

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করেন এবং শ্রমিক নিয়োগ করে পুকুরটির উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন।

নগরের ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লায় অবস্থিত এই পুকুরটি ‘জোড়া পুকুর’ নামে পরিচিত। এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সংরক্ষণের তালিকায় রয়েছে। পুকুরের অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি করে হিকু নামের এক ঠিকাদার কিছুদিন ধরে এটি ভরাট করছিলেন।

একসময় রাজশাহী শহরে অসংখ্য পুকুর ছিল, তবে অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। ২০১৪ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে রিট করলে, বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয়ের জরিপে নগরে ৯৫২টি পুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট এসব পুকুর সংরক্ষণ এবং ভরাট হওয়া পুকুরগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশকে এ নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশনার পরেও শহরের একাধিক পুকুর ভরাট হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও কোনো পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়নি। এবারই প্রথম ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লার এই পুকুরটি উদ্ধার করা হচ্ছে, যা এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত থেকে ভরাট কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ২১ জন শ্রমিক পুকুর থেকে মাটি অপসারণের কাজ করছেন। পুকুরের সামনে টাঙানো নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ। ময়লা/আবর্জনাসহ অন্য যে কোনো উপায়ে পুকুর ভরাট করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদেশক্রমে সহকারী কমিশনার, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।’

ভূমি অফিসের কর্মচারীরা জানান, পুকুরটির আয়তন প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা, যার মধ্যে দুই পাড়ে প্রায় ১০ কাঠা ভরাট করা হয়েছে। খতিয়ানে যে অংশটি পুকুর হিসেবে চিহ্নিত, সেটুকু উদ্ধার করা হবে এবং সেই মাটি পাড়ের অংশে ফেলা হবে।

বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের জানানোর পর আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। ভবিষ্যতেও যদি পুকুর ভরাটের কোনো তথ্য পাই, তাহলে অবশ্যই এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকা/কেয়া/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই প ক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ