ইলন মাস্কের মালিকানাধীন মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্সের তৈরি একটি মহাকাশযান বিস্ফোরিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পরই এটি বিস্ফোরিত হয়।

এমন অবস্থায় ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিস্ফোরিত মহাকাশযানটির ধ্বংসাবশেষ নিচে ছিটকে পড়ার ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে।

স্পেসএক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীবিহীন মহাকাশযানটি রওনা করার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

স্পেসএক্স স্টারশিপ হলো এযাবৎকালে তৈরি সবচেয়ে বড় রকেট। গতকাল বৃহস্পতিবার উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পরই এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হওয়া বা ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ক্যারিবীয় সাগরে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর বাসিন্দাদের তোলা ছবিতে দেখা গেছে, জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষগুলো আকাশ থেকে ছিটকে ছিটকে আসছে।

এটি ছিল ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের রকেটটি নিয়ে অষ্টমবারের মতো পরীক্ষামূলক অভিযান। আর ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয়বারের মতো অভিযান ব্যর্থ হলো।

১২৩ মিটার দৈর্ঘ্যের মহাকাশযানটি এক ঘণ্টা ওড়ার পর ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে ফিরে আসার কথা ছিল। তবে উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পরই এটি বিস্ফোরিত হয়।

ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের প্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় শুরু করেছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ব্যর্থতার মূল কারণ ভালোভাবে বোঝার জন্য স্পেসএক্স কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন তথ্য খতিয়ে দেখছে। কয়েকটি ইঞ্জিন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার পরই বিস্ফোরণটি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পূর্বপরিকল্পিত এলাকার মধ্যে ধ্বংসাবশেষ পড়ার কথা। রকেটটিতে কোনো বিষাক্ত উপকরণ নেই।

গতকালের এ বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে মাস্ক এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি।

দুর্ঘটনার পর জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষ ছিটকে পড়ার আশঙ্কায় মায়ামি, অরল্যান্ডসহ ফ্লোরিডার বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (এফএএ) এক বিবৃতিতে বলেছে, বিভিন্ন বিমানবন্দরের দিকে আসা এবং সেখান থেকে রওনার অপেক্ষায় থাকে ফ্লাইটগুলো বিলম্বিত করা হচ্ছে।

এর আগে গত জানুয়ারিতে টেক্সাসে স্পেসএক্সের উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিট পরই একটি স্টারশিপ রকেট অভিযানে ব্যর্থ হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প সএক স

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ