নারীর প্রতি সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে: সিপিবি
Published: 7th, March 2025 GMT
বাংলাদেশের নারী ও প্রগতিশীল সমাজ বর্তমানে এক ভয়াবহ দুঃসময় পার করছে। দেশে নারী বিদ্বেষ ও নারীর প্রতি সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি গোষ্ঠী গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নানা অপচেষ্টা করছে। তারা নারীদের নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশি তাঁদের ওপর সহিংসতা ও আক্রমণ চালাচ্ছে, যা গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) এ কথা বলেছেন।
বিবৃতিতে সিপিবির নেতারা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক, শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলাম, সেটাকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। সমাজে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং সব কাজে সমান সুযোগ ও সমান মজুরি ছাড়া দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যাবে না।’
‘তৌহিদি জনতা’র নামে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী নারীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে সিপিবির বিবৃতিতে বলা হয়, একের পর এক আক্রমণের ঘটনা ঘটাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে নারীদের হেনস্তা করার পরও সরকার হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এসব অপশক্তিকে দমন করতে না পারার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে।
বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়ন এবং পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নারী সমাজকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করেন সিপিবির নেতারা। তাঁরা বলেন, দেশে গণতন্ত্র না থাকলে শোষণ-নিপীড়ন বাড়তেই থাকে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী সমাজ। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরও বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, খুন-ধর্ষণ ও শিশুহত্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো প্রান্তে নারী ও শিশুরা খুন-ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সিপিবির কেন্দ্রীয় নারী সেলের উদ্যোগে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনের সামনে সমাবেশ ও র্যালি করবে সিপিবি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।