মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তাঁর বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন। তাঁরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান।

আজ শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুটির মা। সেই অনুযায়ী বেলা তিনটার দিকে মামলা রেকর্ড হয়। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪) এর ক/ ৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেপ্তার ৪৩ ঘণ্টা আগে

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটি ঢাকায় চিকিৎসাধীন। মায়ের পাঠানো এজাহার অনুযায়ী মামলা রুজু হয়েছে। আগে থেকে হেফাজতে থাকা চার আসামিকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শিশুটির বড় বোনের সঙ্গে মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালী মাঠপাড়ার হিটু শেখের (৪২) ছোট ছেলে সজীব শেখের (১৮) বিয়ে হয় চার মাস আগে। ওই বাড়িতে হিটু শেখ, তাঁর স্ত্রী জাহেদা খাতুন (৪৫), বড় ছেলে রাতুল শেখ (২০) ও ছোট ছেলে সজীব শেখ থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তাঁর শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ নিজনান্দুয়ালীতে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক, শরীরে পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত: চিকিৎসক৭ ঘণ্টা আগে

এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (সজীব) দরজা খুলে দিলে তাঁর বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে তাঁর কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।

এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তাঁর মাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তাঁর স্বামী সজীব শেখ মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখেন। সকালে জোহরা নামের এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর রাতুল শেখ দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাদী হাসপাতালে যান।

আরও পড়ুনবোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে শিশু ‘ধর্ষণের’ শিকার, ২৪ ঘণ্টা পরও জ্ঞান ফেরেনি ০৭ মার্চ ২০২৫

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভাশুর কেউই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি। তাঁরা অসংলগ্ন ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ায় ভুক্তভোগীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

শিশুটির বড় বোন সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০ দিনের মতো আগে আমার সঙ্গে একটা ঘটনা ঘটে। সেদিন সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। আমি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যাই। টয়লেট থেকে ফিরে দেখি ঘরে আলো বন্ধ। হঠাৎ করে একজন আমার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমি উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে বুঝতে পারি, সে আমার শ্বশুর। বিষয়টি আমার স্বামীকে জানালে সে উল্টো আমাকে আজেবাজে কথা বলে। আমি আমার বাড়িতেও এ কথা জানাই। বাড়িতে গিয়ে আর শ্বশুর বাড়ি ফিরতে চাই নাই। কিন্তু বাড়ি থেকে আমাকে বুঝিয়ে আবার পাঠানো হয়। আমার ভেতর সব সময় ভয় কাজ করত, যদি ওই ঘটনার চেয়ে খারাপ কিছু ঘটে। এ কারণে আমার সঙ্গে আমার ছোট বোনকে পাঠায়।’ তিনি বলেন, তিনি এলাকার লোকজনের কাছে শুনেছেন, এর আগেও দুইটা মেয়ের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল তাঁর শ্বশুর।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটি এখন লাইফ সাপোর্টে ১৮ ঘণ্টা আগে

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাড়ি জেলার শ্রীপুর উপজেলায়। কয়েক দিন আগে বড় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আজ বুধবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে সিএমএইচে নেওয়া হলো১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বড় ব ন অবস থ ঘটন য় ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।

এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ