খেলা শুরু হতে তখন বাকি ছিল ২০ মিনিট। হাজার হাজার দর্শকে ভর্তি গ্যালারি। দুই দলের ফুটবলাররা ম্যাচের আগে গা গরম করতে না আসায় তৈরি হয় ধোঁয়াশা।

এমন সময়ে ঘোষণা আসে বার্সেলোনার মূল দলের চিকিৎসক কার্লেস মিনারো গার্সিয়া মারা গেছেন। তাই ওসাসুনার বিপক্ষে গতকাল রাতে তাদের লা লিগার ম্যাচটি স্থগিত করা হয়।

৫৩ বছর বয়সী মিনারো গার্সিয়া ২০১৭ সাল থেকে বার্সেলোনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মূল দলের দায়িত্ব নেন গত গ্রীষ্মে, এর আগে কাজ করেছেন ক্লাবটির ফুটসাল দলে।

বার্সেলোনা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আজ (কাল স্থানীয় সময়) সন্ধ্যায় আমাদের প্রথম দলের চিকিৎসক কার্লেস মিনারো গার্সিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন। এই দুঃখজনক ঘটনার কারণে ওসাসুনার বিপক্ষে ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। পরে ম্যাচটির নতুন সূচি নির্ধারণ করা হবে। এই কঠিন সময়ে ক্লাব বোর্ড, খেলোয়াড় ও স্টাফরা তার পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে।’

অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ২টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল ম্যাচটি। এক সূত্রের বরাতে ইএসপিএন জানিয়েছে, খেলোয়াড়রা যখন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে পৌঁছান, তখনই তারা এই খবর জানতে পারেন। ম্যাচ স্থগিতের বিষয়ে পুরো দল একমত হয়। এরপর বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ লা লিগার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ম্যাচ স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে দ্রুতই।

বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘আমরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছি। কার্লেস সবার প্রিয় ছিলেন। বুঝতেই পারছেন আমরা সবাই শোকাহত।’

বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। মিডফিল্ডার দানি ওলমো লেখেন, ‘যা হয়েছে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কার্লেস, শুধু এই বছর নয়, আমার পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই তুমি আমাকে সাহায্য করেছ।’

মিডফিল্ডার গাভি ইনস্টাগ্রামে লিখেন, ‘চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবে, ডাক্তার।’
ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাউহো ‘এক্স’-এ লেখেন, ‘এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। শান্তিতে ঘুমাও, ডাক্তার। তোমার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা।’

এখনো ম্যাচটির নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। ২৬ ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদ দুইয়ে। তিনে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ৫৪।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ