জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশে বেকার থাকবে না: গোলাম পরওয়ার
Published: 20th, October 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সারা বাংলাদেশের মানুষ এবার দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিতে প্রস্তুত আছে। নতুন বাংলাদেশে যে ঢেউ শুরু হয়েছে, তা সারা বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামী গুম, খুন, লুটপাট ও দুর্নীতিমুক্ত একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায়।
আজ সোমবার বেলা তিনটায় সাতক্ষীরার তালায় অনুষ্ঠিত ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন গোলাম পরওয়ার।
একটি পক্ষ জামায়াতের গণজোয়ার রুখে দিতে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াত ঘের দখল করে না, জমি দখল করে না, বালু উত্তোলন করে না। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশে বেকার থাকবে না। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দেশে বেকারত্ব দূর করা হবে। সৃষ্টিকর্তার বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হলে হিন্দু ও মুসলিম সবাই ভালো থাকবে।’
বিএনপির সঙ্গে ২০ বছর সংসার করেছেন উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এখন আলাদাভাবে ভোট করছে জামায়াতে ইসলামী। তাই বলে জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে ছিঁড়ে ফেলা কিংবা পোস্টারের ওপর পোস্টার মারা, এটা তো বন্ধুসুলভ কাজ হয় না। দেশের চারটি শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের মেধাবী ছেলেরা পরিবর্তন চায়, সেই বার্তা দিয়েছে। অথচ বিএনপি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুরে কথা বলছে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে তিনটি দল আওয়ামী লীগ ২১ বছর, বিএনপি ১৫ বছর আর জাতীয় পার্টি ৯ বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেনি। করেছে নিজেদের পরিবর্তন। ক্ষমতায় যায়নি শুধু জামায়াতে ইসলামী। এবার জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিয়ে পরীক্ষা করুন। এ কথা বলতে পারি, জামায়াত ঘুষ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস করে না। দেশে দুর্নীতি ও লুটপাট থাকবে না। দেশের মানুষকে ভালো রাখবে।’
আরও পড়ুনবেকারত্ব, দুর্নীতি, বৈষম্যের কারণে ৫৫% তরুণ বিদেশে যেতে আগ্রহী: গবেষণা ০৭ নভেম্বর ২০২৪ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের ওপর ছাত্ররা আস্থা রেখেছেন। অতীতে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা জয়লাভ করে, জাতীয় নির্বাচনেও তারা সফল হয়। আগামী পরিবর্তনশীল বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর ওপর মানুষকে আস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
তালা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মফিদুল্লার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির শহিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি আজিজুর রহমান, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সুজায়েত আলী, সাতক্ষীরা শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আল মামুন, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি জুবায়ের হোসেন প্রমুখ।
আরও পড়ুনবিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষিত বেকার ভাতা চালু করবে: তারেক রহমান২৩ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র ইসল ম র ক ষমত য় ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সংখ্যালঘু প্রার্থী বাড়াতে পারে জামায়াত
জামায়াতে ইসলামী এর আগে কোনো জাতীয় নির্বাচনে দলের নেতাদের বাইরে কাউকে প্রার্থী করেনি। জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম রুকন পদধারী নেতারা ছিলেন। এবার সেখানে দলটি কিছুটা শিথিল অবস্থান নিয়েছে। ভিন্নধর্মাবলম্বীদেরও এবার প্রার্থী করছে জামায়াত।
জামায়াতে ইসলামী এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কয়েক ধাপে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। গত সপ্তাহে তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি। এর মধ্যে একটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। জামায়াতের সূত্র বলছে, আরও কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আলোচনা চলছে। অন্তত একটি আসনে হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আলোচনায় আছে, সেই আসনটি কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) হতে পারে। ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা (পদ স্থগিত) ফজলুর রহমান, যিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য–কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব থেকে আলোচনায় রয়েছেন।
কৃষ্ণ নন্দীর বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে, যেটি খুলনা-৫ আসনে পড়েছে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে তাঁর বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে।জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে যখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন হয়, তখন বেশির ভাগ দলের মতো জামায়াতও গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে। তখন থেকেই অন্য ধর্মের অনুসারীদের জামায়াতের প্রার্থী করার সুযোগ তৈরি হয়।
আরও পড়ুনবিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে এখনো সমঝোতার সুযোগ দেখছে এনসিপি ২ ঘণ্টা আগেজামায়াতের এই নেতা বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাদের পরামর্শ, জরিপের ফলাফলকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরপর জয়ের সম্ভাব্যতা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আরও কয়েকটি আসনে একইভাবে প্রার্থী পরিবর্তন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে আছেন। সেখান থেকে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা যাঁর যাঁর সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সংসদে যাবেন।হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রথম প্রার্থীজামায়াতে ইসলামী যে তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে খুলনা-১ আসনের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীকে নিয়ে। তিনি জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি। এর আগে আসনটিতে বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। গত বুধবার আবু ইউসুফের বদলে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াত।
কৃষ্ণ নন্দীর বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে, যেটি খুলনা-৫ আসনে পড়েছে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে তাঁর বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে। এসব সমাবেশে হিন্দুধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষও ছিলেন সরব।
কৃষ্ণ নন্দীকে জামায়াত প্রার্থী করেছে তাঁর নিজ এলাকার বাইরের বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে। এই আসন ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ নামে ছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত একবার ছাড়া প্রতিবারই এখানে হিন্দু প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অনেকের ধারণা, সেই হিসাব থেকে কৃষ্ণ নন্দীকে বেছে নিয়েছে জামায়াত।
আরও পড়ুনখালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যেই নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজে ফিরতে চায় বিএনপি ৪ ঘণ্টা আগেএ ছাড়া গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে জামায়াতের নতুন প্রার্থী হিসেবে দৈনিক আমার দেশ–এর সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অলিউল্লাহ নোমান বেশ কয়েক বছর যুক্তরাজ্যে ছিলেন। এ আসনে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুখলিছুর রহমানকে।
এর বাইরে লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে আগের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও লালমনিরহাট জেলার আমির মো. আবু তাহের। এর আগে প্রাথমিকভাবে রংপুর মহানগর শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. হারুন অর রশীদকে মনোনয়ন দিয়েছিল জামায়াত।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সময়ের প্রয়োজনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন করা হচ্ছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে আছেন। সেখান থেকে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা যাঁর যাঁর সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সংসদে যাবেন। সে জন্য যেসব দল রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে চায়, তাদের দলে সব সম্প্রদায়ের লোক থাকতে হবে। জামায়াত সব ধর্মের লোকদের বিষয়ে সচেতন। সময়ের চাহিদা ও জন–আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে এবার প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী কিছু বিষয়কে বিবেচনা করেছে।
চূড়ান্ত হয়নি আসন সমঝোতা‘এক আসনে এক প্রার্থী’—এই নীতি নিয়ে নির্বাচনে আসন সমঝোতার আলোচনায় রয়েছে জামায়াতসহ আট দল। অপর দলগুলো হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। কোন আসনে কাকে প্রার্থী করলে জয়ী হতে পারেন, সে বিষয়ে জরিপ করছে দলগুলো। ওই জরিপের ভিত্তিতে জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দলগুলোর আসনভিত্তিক জরিপ চলতি সপ্তাহে শেষ হতে পারে। এরপর কোন দলের কোন নেতাকে কোন আসনে জামায়াত ছাড় দেবে, তা চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া সম্ভাব্য এই নির্বাচনী সমঝোতায় আরও কয়েকটি দলকে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচিতে থাকা দলগুলোর একটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ৮ ডিসেম্বর আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আসন সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন লিয়াজোঁ কমিটিতে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করা দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।