২৯ বছর আগে চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলাটি তদন্তের জন্য রমনা থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীর আইনজীবী ফারুক আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি পিবিআই। এ কারণে চার বছর আগে (২০২১ সাল) পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নারাজি দিয়েছিলেন নীলা চৌধুরী। আজ আদালত সালমান শাহের মায়ের সেই রিভিশন আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। একই সঙ্গে এ মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আইনজীবী ফারুক আরও বলেন, সালমান শাহের মৃত্যুর দিনই অনেকটা পরিবারের অজান্তে সালমানের বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষর নিয়ে রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে পুলিশ। সেই মামলার তদন্ত চলছিল। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে রিজভি আহমেদ নামের একজন অন্য এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন, সালমান শাহকে হত্যা করে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হয়েছে এবং তিনি নিজেও সেই হত্যায় জড়িত ছিলেন। সালমানের বাবা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে নালিশি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলার যাঁরা আসামি, তাঁদের বিরুদ্ধে এখন হত্যা মামলা করা হবে। তাঁরা এখন হত্যা মামলার আসামি।

আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে সালমান শাহের মামা চিত্রপরিচালক আলমগীর কুমকুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সালমানের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের এই আদেশে আমরা খুশি। সালমান আত্মহত্যা করেনি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা খুনিদের বিচার চাই।’

আরও পড়ুনসালমান শাহ: ইস্কাটন রোডের ফ্ল্যাটে কী হয়েছিল সেই শুক্রবারে০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সালমান শাহের অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ঢাকার সিএমএম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৬০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, সালমান শাহকে খুন করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেন। এ আত্মহত্যার পেছনে পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করেন তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুনসেদিন সালমান শাহ মায়ের পা ধরে বলেছিলেন, ‘একটি মাত্র সিনেমা করব’ ২৫ মার্চ ২০২৩

সিআইডির প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সালমান শাহের বাবা ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়। এ আদেশের প্রায় ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এতেও সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবার রিভিশন আবেদন করেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় ভাড়া বাসায় পাওয়া যায় অভিনেতা সালমান শাহের লাশ। বাংলা সিনেমায় তাঁর জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি তখন মধ্যগগনে। স্ত্রী সামিরা হক তখন পুলিশকে জানিয়েছিলেন, সকালবেলা ড্রেসিংরুমে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমানের দেহ তাঁরা শনাক্ত করে দেহটি নামিয়ে আনেন। সালমান শাহকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুনসালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে সামিরা সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনআত্মহত্যা নাকি হত্যা? সালমান শাহর মৃত্যুর জট আজও অমীমাংসিত০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ম ত য র ঘটন স প ট ম বর অপম ত য তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে পোস্ট অফিস থেকে জাল টাকা সরবরাহ, গ্রেপ্তার ২

শেরপুর জেলা পোস্ট অফিস থেকে একাধিক গ্রাহককে জাল টাকা সরবরাহের অভিযোগে দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রবিবার (১৯ অক্টোবর) তাদের দুইজনকেই আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিয়েছে এবং অপরজনের বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

‘জাল টাকার খবরের’ পর সতর্ক থাকতে চার পরামর্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

নতুন টাকা বিনিময় শুরু, আসল-নকল চিনবেন যেভাবে

গ্রেপ্তার আসামি হলেন, শেরপুর পোস্ট অফিসের ক্যাশিয়ার মানিক মিয়া ও পোস্ট অফিসের ট্রেজারার হাফিজুর রহমান। এর মধ্যে মানিককে গত ১৬ অক্টোবর ও হাফিজুর রহমানকে ১৮ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর শেরপুর সদর উপজেলার গনইমমিনাকান্দা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নিরক্ষর বৃদ্ধা শাহিনা বেগম উত্তরা ব্যাংকে ২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জমা দিতে যান। উত্তরা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার টাকা গুণে নেওয়ার সময় দেখতে পায় ওই টাকার মধ্যে ৫৩টি ১ হাজার টাকার নোট জাল।

অপরদিকে, গত ৯ অক্টোবর দুপুরের পর শেরপুর সোনালী ব্যাংকে নুহূ নামে এক ব্যক্তি সরকারি চালানের ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা জমা দিতে যান। সোনালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার টাকা নেওয়ার সময় ২৫টি ১ হাজার টাকার নোট জাল পান।

ভুক্তভোগী দুই গ্রাহকই শেরপুর পোস্ট অফিস থেকে টাকাগুলো উত্তোলন করেছিলেন। তারপর থেকে বিষয়টি প্রশাসন, পোস্ট অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ নজরে আসে। এর ব্যাপারে সরকারের অন্তত তিনটি বিভাগ তদন্ত করছে।

শেরপুর কোর্ট পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “আসামি মানিক মিয়া এবং হাফিজুর রহমানকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হাফিজুর রহমান ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিয়েছে এবং মানিক মিয়াকে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আগামী ২৩ অক্টোবর রিমান্ড শুনানি হবে।”

এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জোবাইদুল আলম বলেন, “ঘটনাটি জানার পর থেকেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ইতোমধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো কয়েকজন সন্দেহের তালিকায় আছেন। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”

ঢাকা/তারিকুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ