ঢাকার সাভারে বাসায় ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী (২৫) ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার পলাতক আরেক আসামি বিপ্লব রোজারিওকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এর মধ্য দিয়ে মামলায় উল্লিখিত তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হলো। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার বিপ্লব রোজারিও সাভারের কমলাপুর গোয়ালিও এলাকার বানার্ড রোজারিওর ছেলে। এর আগে গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে গাজীপুরের কালীগঞ্জের নাগরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি সোহেল রোজারিওকে (৩৭) গ্রেপ্তার করে ঢাকা জেলা (উত্তর) পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং গতকাল ভোরে মিঠু বিশ্বাস (৩৫) নামের আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে সাভার মডেল থানা-পুলিশ। তাঁরা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা। মামলায় সোহেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং বিপ্লব ও মিঠুর বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুনসাভারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার৬ ঘণ্টা আগে

ভুক্তভোগী তরুণী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তাঁর পরিবার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের একটি এলাকায় বসবাস করে।

র‍্যাব-৪ (সিপিসি-২)–এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো.

নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ সোমবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের কাছ থেকে বিপ্লব রোজারিওকে গ্রেপ্তার করা হয়। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে সাভার মডেল থানায় হস্তান্তর করা হবে।

আরও পড়ুনসাভারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার৬ ঘণ্টা আগে

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী ওই তরুণী সাভারে এক ছাত্রকে প্রাইভেট পড়ানোর পর বাসায় ফেরেন। কিন্তু এসে দেখেন বাসা তালাবদ্ধ। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর মা বাসায় তালা দিয়ে পাশের এক চা-দোকানির কাছে চাবি রেখে গেছেন। পরে তিনি দোকান থেকে চাবি নিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন।

ফেরার পথে সোহেল রোজারিও ওই তরুণীকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিছু দূর যাওয়ার পর সোহেলের সঙ্গে অন্য দুই আসামির দেখা হয়। এরপর তাঁরা ওই তরুণীকে অনুসরণ করতে থাকেন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন সোহেল। এ ঘটনায় সহযোগিতা করেন অন্য দুই আসামি। ধর্ষণের পর সোহেল ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন ওই তরুণী।

আরও পড়ুনসাভারে বাসায় ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ১৮ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্ররা যেমন শিক্ষকদের সম্মান করেন, শিক্ষকদেরও ছাত্রদের প্রতি সম্মান দেখানো জরুরি: ইমরান রহমান

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় সপ্তম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ইমরান রহমান। আলোচনার বিষয় ছিল ‘সংগীত, শিক্ষা এবং পরিবর্তনশীল বিশ্বে নেতৃত্ব’।

‘প্রতিযোগিতামূলক এই সময়ে চাকরি পেতে শুধু সার্টিফিকেটই যথেষ্ট নয়, এর জন্য দক্ষতার প্রতি গুরুত্বারোপ এখন অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে এই পরামর্শ দেন অধ্যাপক ইমরান রহমান। পর্বটি প্রচারিত হয় শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত ৯টা ৩০ মিনিটে, প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

সঞ্চালক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হক পডকাস্টের শুরুতেই জানতে চান, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স—এই দুই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন। দুই প্রতিষ্ঠানের কোন চেতনা আপনাকে শিক্ষকতা পেশায় আসতে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে?

উত্তরে অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘আমার শিক্ষকতা পেশায় আসার ব্যাপারটি পরিকল্পিত ছিল না, বরং খানিকটা আকস্মিক। আমার ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল একটি ব্যাংকে। পরে দেখলাম ব্যাংকের সংস্কৃতির সঙ্গে আমার ঠিক মিলছে না। এরপর আমি আইবিএতে শিক্ষতায় যোগদান করি।’

প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, ব্যাংকে যখন আপনি যোগ দেন, তখন নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে ভেবেই যোগ দিয়েছিলেন। পরে এই ভালো না লাগার ব্যাপারটি কীভাবে এল?

অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘প্রথমে আসলে আমি ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসারের মতো খুবই ছোট একটি পদে যোগ দিই। ফলে ওপর থেকে যা নির্দেশ আসত, আমাকে তা–ই পালন করতে হতো। হিসাব করে দেখলাম, সেখানে স্বাধীনভাবে কাজ করার মতো পর্যায়ে যেতে আমার একটি দীর্ঘ সময় লাগবে। তত দিন আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব না। স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছা থেকেই মূলত আমি শিক্ষকতা পেশায় আসি।’

অধ্যাপক ইমরান রহমান দেশ এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন। দেশের বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের শিক্ষকতার কোন দর্শনটি আলাদা?

সঞ্চালক জানতে চাইলে অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষকতা পেশায় আসলে বেশ কিছু ভুল ধারণা বা মিথ রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, ভালো শিক্ষকেরা জন্ম নেন, তাঁদের তৈরি করা যায় না। আমি এই ব্যাপারটির সঙ্গে একেবারেই ভিন্নমত পোষণ করি। আসলেই একজন ভালো শিক্ষক তৈরি করা সম্ভব। এই পেশায় এলে আমরা আমাদের পূর্বের যে শিক্ষকেরা রয়েছেন, তাঁদের আদর্শ বানিয়ে ফেলি। এটি একেবারেই ঠিক নয়। সবার উচিত নিজের মধ্যে কী আছে, তা আবিষ্কার করা। সেটিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে অন্যদের থেকে আলাদা হওয়া যায়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া।’

অধ্যাপক ইমরান রহমান আরও বলেন, ‘দেশের বাইরের শিক্ষকদের একটি ব্যাপার ধরতে আমার অনেক দিন সময় লেগেছে, সেটি হলো শ্রদ্ধাবোধ। আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে এই ব্যাপারটি একেবারেই একপক্ষীয়। ছাত্ররাই শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করবেন বলে আমরা ধরে নিই। কিন্তু দেশের বাইরে ব্যাপারটি একেবারেই ভিন্ন। সেখানে এই বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়। দেশের বাইরে আমি দেখেছি, ছাত্র যে বয়সীই হোক না কেন, শিক্ষকেরা তাঁদের সম্মান দিয়ে কথা বলেন। এই যে দ্বিপক্ষীয় শ্রদ্ধাবোধের ব্যাপারটি, এটি আমাদের দেশেও চর্চা করা উচিত বলে আমি মনে করি।’

একজন অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার পাশাপাশি অধ্যাপক ইমরান রহমানের সংগীতের সঙ্গে রয়েছে একটি যোগসূত্র। তাঁর এই বহুমাত্রিক পেশাজীবনে সংগীতের কেমন প্রভাব রয়েছে—জানতে চান সঞ্চালক।

অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘সংগীতশিল্পী আর শিক্ষকদের মধ্যে একটি বিশেষ মিল রয়েছে। দুই পেশার মানুষকেই পারফর্ম করতে হয়। এটি আমাকে বেশ সাহায্য করেছে। ছাত্রদের মনোযোগ ধরে রাখতে আমি এমনভাবে পারফর্ম করার চেষ্টা করি যেন তাঁরা আকর্ষণ হারিয়ে ঘুমিয়ে না পড়েন।’

অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘আমি যখন মঞ্চে গিটার বাজাই কিংবা পারফর্ম করি, তা দেখে অনেকেই মজা পান। মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানে সবাই আমাকে ফরমাল হয়ে বসে থাকতে দেখার পর আবার যখন মঞ্চে উঠে গিটার বাজাতে দেখে, তখন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এটি আমার জন্য অমূল্য একটি অনুভূতি।’

এরপর সঞ্চালক জানতে চান, আইবিএর শিক্ষকতা ছেড়ে ইউল্যাবে যাওয়ার এই চ্যালেঞ্জ কেন নিলেন এবং তা কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘আমি আইবিএতে ২৩ বছর কাজ করেছি। এখানে আমার যা দেওয়ার ছিল, আমি তা দিয়েছি। আইবিএ একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান। তবে এটি একটি পাবলিক প্রতিষ্ঠান। তাই এখানে নতুন কিছু করা কিংবা নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া সহজ ছিল না। তাই ভাবলাম এবার প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করে দেখি। তাই ইউল্যাবে যোগ দিই, যেখানে বোর্ড অসাধারণ ছিল। ইউল্যাবে এসে যা যা করব বলে আমি ভেবে রেখেছিলাম, সত্যিই তা করতে পেরেছি বলে মনে করি।’

অধ্যাপক ইমরান আরও বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক অসাধারণ শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন নিয়মকানুনের কারণে তাঁরা নিজের ইচ্ছেমতো অনেক কিছু করতে পারেন না। তবে প্রাইভেট সেক্টরে এসেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে।’

বাংলাদেশে এখন ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার সমন্বয় নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে। প্রাইভেট ইউভার্সিটিগুলোতে এর চর্চা ঠিক কেমন? জানতে চাইলে অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাধীনতা থাকার কারণে এখানে এই সমন্বয় বেশি হচ্ছে। তবে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ চর্চা শুরু হয়েছে।’

সমাজের উন্নয়নে একজন শিক্ষকের ভূমিকা কতটুকু হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, সমাজের উন্নয়নে একজন শিক্ষকের যথেষ্ট ভূমিকা থাকতে হবে। কারণ তাঁরা ছাত্রদের জন্য উদাহরণস্বরূপ। তাঁরা যা করবেন ছাত্ররা তা–ই অনুসরণ করবেন। একজন শিক্ষকের কাজ শুধু পাঠ্যবই নির্ভর শিক্ষাদানে সীমাবদ্ধ নয়।

আলোচনার শেষ পর্যায়ে অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মনে করেন পড়াশোনা শেষ করে একটি সার্টিফিকেট পেলেই চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। এর জন্য বিভিন্ন স্কিল দরকার। এই স্কিলগুলো চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। এগুলো শৈশব থেকেই সন্তানদের শেখাতে হবে। এ ছাড়া আজকাল শিক্ষার্থীদের দেখি দু-এক জায়গায় চাকরির দরখাস্ত করে বসে থাকেন। এই সময়ে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, ১০০টি দরখাস্ত করে দু-একটিতে ডাক পাওয়া যায়। এই ব্যাপারগুলো মাথায় রাখা এখন অনেক জরুরি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডেঙ্গু আক্রান্ত ছাড়াল ৬০ হাজার
  • সরিষার তেলে পোড়া মবিল, একজনের যাবজ্জীবন
  • আন্দোলনের মুখ থেকে রাকসুর জিএস আম্মার
  • অস্টিওপোরোসিসে কেন অবহেলা করবেন না
  • সাভারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার
  • ধর্মের জন্য অভিনয়কে বিদায়: বিয়ে করে সমালোচনার মুখে জাইরা
  • জানমালের নিরাপত্তা যেখানে, আ.লীগের ভোটও সেখানে: মুফতি ফয়জুল 
  • উপদেষ্টারা জানেন নাকি, ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা, আহা মধু মধু মধু...
  • ছাত্ররা যেমন শিক্ষকদের সম্মান করেন, শিক্ষকদেরও ছাত্রদের প্রতি সম্মান দেখানো জরুরি: ইমরান রহমান