গ্যাসের সিলিন্ডারে আগুন জ্বলছিল। রিকশাচালক ইসমাইল হাওলাদার এক আঙুল দিয়ে সিলিন্ডারের মুখ চেপে ধরলেন। এতে আগুন নিভে গেল তাৎক্ষণিক। পরে তিনি রেগুলেটরের চাবি চেপে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হওয়া বন্ধ করেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইসমাইল প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে সেখানে হাতে–কলমে আগুন নেভান।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এভাবেই হাত দিয়ে  আগুন নেভান।

ইসমাইল হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় থাকেন। তাঁর পরিবারে মেয়ে, মা ও ভাই রয়েছেন। ইসমাইল বলেন, তাঁদের ঘরে সিলিন্ডার রয়েছে। তাই সিলিন্ডারে আগুন লাগলে কীভাবে নেভাতে হয়, তা শিখে নিলেন।

আজ শাহবাগে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে এভাবে অনেক পথচারী আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ নেন। আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলে। ‘স্থির সমাবেশ’ কর্মসূচির আওতায় শাহবাগে পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দিল ফায়ার সার্ভিস। আর এর মধ্য দিয়েই শেষ হলো ফায়ার সার্ভিসের ১১ দিনের এই কর্মসূচি। এই সময়ে রাজধানীর ৩৮টি স্থানে এভাবে পথচারীদের আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দিল তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চার ধরনের প্রশিক্ষণ দেন। এর মধ্য একটি হলো আঙুল দিয়ে সিলিন্ডারের আগুন নেভানো। আগুন লাগা সিলিন্ডার ওপর থেকে বালতি দিয়ে চেপে ধরলেও তা নিভে যায়। ফায়ার এক্সটিংগুইশারে থাকা লোহার সেপটিপিন মোচড় দিলে প্লাস্টিকের বাঁধন খুলে যায়। এরপর লোহার সেপটিপিন খুলে ফেলতে হবে। এতে এক্সটিংগুইশার ব্যবহার উপযোগী হবে। এক্সটিংগুইশারের নল আগুনের দিকে তাক করে হাতলে চাপ দিলে কেমিক্যাল বের হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আগুন নিভে যায়। এ ছাড়া ভেজা পাটের বস্তা, কাঁথার মতো বস্তু আগুন ফেলেও আগুন নেভানো যায়।

শাহবাগের বারডেম হাসপাতালের মঞ্জিলা বেগমও আগুন নেভানো শেখেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাসায় সিলিন্ডার আছে। নিজের সুরক্ষার জন্য তিনি আগুন নেভানো শিখলেন। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের কারও বাড়িতে আগুন লাগলে তাতেও সহযোগিতা করতে পারবেন।

পথচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাঝেমধ্যে হাতমাইকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সচেতনতামূলক কথাও বলেন। তাঁরা বলেন, আগুন লাগলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। মাথা ঠান্ডা রেখে এবং সাহস নিয়ে এভাবে কাজ করলে আগুন নেভানো সম্ভব।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (ঢাকা) মো.

ছালেহ উদ্দিন বলেন, ঢাকা মহানগরীর ‘স্থির সমাবেশ’ কর্মসূচির এখানেই শেষ। তবে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের মাধ্যমে এ ধরনের কর্মসূচি সারা বছরই চলে। এর ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাচ্ছে। আগে পোশাক কারখানায় প্রতিনিয়ত আগুন লাগত এবং অনেক মানুষ মারা যেত। এখন আগুন লাগলেও তা এতটা বড় হয় না। কারণ, তাঁরা অনেকেই সচেতন এবং অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা রেখেছে। ফায়ার সার্ভিস পৌঁছানোর আগেই অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা আগুন নেভাতে পারেন। যদি নাও পারে, তাঁরা আগুনটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে নির্বাপণ করে। আসলে সচেতনতার বিকল্প নেই। সে কারণেই এ ধরনের কর্মসূচির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর ম পথচ র

এছাড়াও পড়ুন:

সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা

দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।

দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক 

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন  কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন। 

কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।” 

গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।” 

একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”

সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।” 

সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”

পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ