লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তি কারাগারে
Published: 11th, March 2025 GMT
রাজধানীর লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে দুই তরুণীকে হেনস্তা ও মব উসকে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার গোলাম মোস্তাকিম ওরফে রিংকুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে শুনানি শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আজ রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে গোলাম মোস্তাকিমকে (৬২) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একজন পাথর ব্যবসায়ী।
মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, মোস্তাকিমকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে তাঁকে আদালত কারাগারে পাঠান। নারী হেনস্তার ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা রুজু হওয়ার পর মোস্তাকিমকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। পাশাপাশি সেদিনের ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ।
১ মার্চ লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি ঘটে। এক ব্যক্তি ধূমপান নিয়ে আপত্তি তোলেন, যা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে রিংকু নামের ব্যক্তি তরুণীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন।
শ্যামলীতে নারী সহিংসতায় গ্রেপ্তারএদিকে রাজধানীর শ্যামলী স্কয়ার এলাকায় এক নারীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো.
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার বলেন, নারীদের হেনস্তার ঘটনায় রাসেলকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা রুজু হলে সেই মামলায় রাসেলকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
উপকমিশনার তালেবুর রহমান আরও বলেন, গত ২৯ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক শ্যামলীর রাস্তায় কিছু নারীর সঙ্গে বাজে আচরণ করছিলেন। তিনি লাঠি দিয়ে তাঁদের শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি ডিএমপির দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর রাসেল নামের ওই যুবককে শনাক্ত করে।
আরও পড়ুনলালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে রিংকুকে হেফাজতে নিল পুলিশ১০ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।