বন্দরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতাদের উপর হামলা, ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
Published: 11th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলায় এক যুবককে বলাৎকার এর ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫/৬ জন নেতাকে বেদম পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
সোমবার (১০ মার্চ) রাতে বন্দর উপজেলার শাহি মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা জুবায়ের সহ ৫/৬ জন গুরুতর আহত করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন জুবায়ের, শিথিল ভূইয়া, মাহমুদুল হাসান, সিয়াম মাহমুদ, মৃদুল, ইসরাফিলকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত হোসেন অন্তু বাদী হয়ে বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে আসামী করা হয়েছে বন্দর সালেনগর এলাকার বাবু শিকদার, কালা পারভেজ, রাব্বি, আল আমিন, জুয়ারী বাবু, ফরহাদ, আরিফ, মশিউর রহমান মশু, নাঈম সহ ৭/৮ জন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বন্দর শাহি মসজিদ এলাকার মঞ্জু মিয়ার ছেলে সাঈদ তার রুমে নিয়ে বলাৎকার করে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। পরে ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা শালিসের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করে। এই নিয়ে সোমবার রাতে বিএনপি নেতা সাহেব আলীর অফিসে বৈঠক বসে। এমন খবর পেয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে লোকজন গিয়ে তার প্রতিবাদ করায় বাবু শিকদার সহ আরো লোকজন তাদের উপর হামলা চালায় এবং বেদম মারধর করে।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, বলাৎকারের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোকজনদের মারধর করার ঘটনায় একটা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সেটারও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল