আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা ইসরা ও সুরা কাহাফের ১ থেকে ৭৪ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করা হবে; ১৫তম পারা পড়া হবে। এখানে নবী (সা.)-এর মিরাজ, ফিতনা-বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে শাস্তি, সামাজিক জীবনে শিষ্টাচার, মানুষের তাড়াহুড়া, নবীজির প্রতি তাহাজ্জুদের নির্দেশ, আল্লাহ ও বান্দার হক, মা-বাবার প্রতি সদাচার, আসহাবে কাহাফের ঘটনা, কোরআনের বৈশিষ্ট্য, আল্লাহর সুন্দর নাম, বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া, আল্লাহর সামনে যুক্তিতর্ক নিষেধ, প্রাণ হত্যা, সততার সঙ্গে ব্যবসা, মিতব্যয়িতা, ব্যভিচারের শাস্তি ও নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়সহ অনেক বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে।
সুরা ইসরায় মিরাজের কাহিনি
১১১ আয়াতবিশিষ্ট সুরা ইসরা মক্কায় অবতীর্ণ। পবিত্র কোরআনের ১৭তম সুরা এটি। ইসরা অর্থ রাতের সফর। বিশেষত বায়তুল্লাহ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়। এ সুরার শুরুতে নবীজি (সা.
ঊর্ধ্বজগতে মহানবী (সা.)–এর ভ্রমণ
আজকের তারাবিহ শুরু হবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিরাজ তথা ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণের আয়াত তিলাওয়াতের মাধ্যমে। নবুয়াতের ১১তম বছরের ২৭ রজব।
বিশ্বনবি (সা.) এর তখন ৫১ বছর বয়স। তিনি মক্কার হাতিমে কাবায়। রাতের বেলা আধো ঘুম আধো জাগরণে শুয়ে আছেন। জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) তাঁর কাছে এলেন। জমজমের পানি দিয়ে তাঁর বুক চিরে পবিত্র করা হলো। তিনি মিরাজের পথে চললেন।
আরও পড়ুনতারাবির নামাজে কোন দিন কোন সুরা পড়া হবে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪মহানবী (সা.) সশরীর সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় বোরাকে করে রাতে ভ্রমণ করেন। প্রথমে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় যান। পরে প্রথম আসমান হয়ে ধারাবাহিকভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন।
সিদরাতুল মুনতাহা থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ করে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। জান্নাত-জাহান্নামও দেখেন। উম্মতের জন্য নিয়ে আসেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।
১৪ শিষ্টাচারমানুষের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ ১৪টি বিষয়ের আদেশ করেছেন এ সুরার ২৩ থেকে ৩৯ নম্বর আয়াতে। ১. আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত না করা। ২. মা–বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার। ৩. আত্মীয়স্বজনের অধিকার আদায় করা। ৪. মিসকিন ও মুসাফিরদের অধিকার আদায় করা। ৫. অপচয় না করা। ৬. কৃপণতা না করা। ৭. সন্তানদের হত্যা না করা। ৮. ব্যভিচারের পরিহার। ৯. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা। ১০. এতিমের সম্পদের অপব্যবহার না করা। ১১. প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। ১২. পুরোপুরি ওজন দেওয়া। ১৩. জ্ঞান নেই, এমন বিষয়ের পেছনে না পড়া। ১৪. পৃথিবীতে দম্ভভরে না চলা।
কোরআন আত্মিক রোগের ওষুধ
সুরা ইসরার ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘কোরআনে নাজিলকৃত আয়াতের মধ্যে আমি মুমিনদের জন্য রহমত ও শিফা অবতীর্ণ করেছি।’ কোরআন আত্মিক রোগের মহৌষধ। এ মহাগ্রন্থ সব ধরনের আত্মিক রোগ থেকে মানুষকে পরিত্রাণ দেয়। বাহ্যিক রোগ নিরাময়েরও অমোঘ ব্যবস্থাপত্রও এটি।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ এ আয়াতে কোরআনের একটি মৌলিক গুণ তুলে ধরেছেন। এটি মানুষের জন্য রহমত ও পথ্য হিসেবে কাজ করে। আত্মিক ও শারীরিক ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার শক্তিশালী ও কার্যকর মাধ্যম হলো কোরআন।’ (রুহের খোরাক, পৃষ্ঠা: ২২)
আরও পড়ুনধ্বংস থেকে এক জাতির মুক্তির কাহিনি১৮ মার্চ ২০২৪গুহাবাসী সাত তরুণের কাহিনি সুরা কাহাফে
কোরআনের ১৮তম সুরা কাহাফ মক্কায় অবতীর্ণ। ১১০টি আয়াত রয়েছে এ সুরার। কাহাফ অর্থ গুহা। সুরায় গুহাবাসীর গল্প থাকায় নাম রাখা হয়েছে সুরা কাহাফ। এ সুরায় ৪ ঘটনার বিবরণ রয়েছে। ১. গুহাবাসী ৭ তরুণের ঘটনা। ২. বাগানের মালিকের বিশ্বাসের গল্প। ৩. মুসা ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা। এবং ৪. বাদশাহ জুলকারনাইনের কাহিনি।
সুরা কাহাফের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮০৯)
আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়টুকু আলো হবে।’ (বাইহাকি, হাদিস: ৬২০৯)
গুহার মধ্যে তিন শতাব্দী ঘুমে
তখনকার বাদশাহর নাম ছিল দিকইয়ানুস। সে ছিল অবিশ্বাসী। সে সময়ের কারও মধ্যে একত্ববাদে বিশ্বাস ছিল না। সাতজন যুবক ইমান এনে এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেছিলেন। তাঁরা নিজেদের মতো করে ইবাদত করতেন। লোকেরা একবার জেনে গেল। বাদশাহর কানে গেল ব্যাপারটি। বাদশাহ হত্যার হুমকি দেন। তাঁরা ইমান বাঁচাতে দেশ ছাড়েন। আশ্রয় নেন একটি পাহাড়ের গুহায়। একটি কুকুরও ছিল তাঁদের সঙ্গে। কুকুরের নাম ছিল কিতমির। বাদশাহর বাহিনী তাঁদের হন্য হয়ে খুঁজল, কিন্তু পেল না। গুহায় আল্লাহ তাঁদের ঘুম পাড়িয়ে দেন। সেই ঘুম ৩০৯ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।
আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪ঘুম ভাঙার পর তাঁদের একজন খাদ্য সংগ্রহের জন্য শহরে এলেন। দেখলেন, সব পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাঁর মুদ্রাও চলল না। তিনি বেশ আশ্চর্য হলেন। জানলেন, বর্তমান বাদশাহ বিশ্বাসী মানুষ। জালেম বাদশাহ মারা গেছেন সেই কবে। তাঁদের ওপর দিয়ে গেছে তিনটি শতক।
লোকেরা হাঁ করে তাঁকে দেখছিলেন তখন। বিস্মিত হয়ে নানা কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। তিনি গুহায় সঙ্গীদের কথা বলে দ্রুত কেটে পড়েন। গুহায় ফিরে বিস্তারিত কাহিনি শোনান সাথিদের। বর্তমান বাদশাহ ছুটে এলেন গুহায়। দেখেন, গুহার ভেতর সবাই মারা গেছেন। আসহাবে কাহাফের এ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সুরা কাহাফের ৯ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে।
আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার পরিণাম
সুরা কাহাফের ৩২ থেকে ৪২ নম্বর আয়াতে দুই বন্ধুর কাহিনি রয়েছে। একজনের ছিল অত্যন্ত মূল্যবান ফলফলাদির বাগান। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন সম্পদ ছিল। একসময় তাকে অহংকার পেয়ে বসে। আল্লাহকে ভুলে গেল। এমনকি কিয়ামতের ব্যাপারেও সন্দিহান হয়ে পড়ল। তার ঈমানদার বন্ধু তাকে সতর্ক করল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও কুদরতের কথা বোঝাল। কিন্তু সে পড়ে থাকল তার সম্পদ নিয়ে। বন্ধুর কথায় সাড়া দিল না। একদিন আল্লাহর আজাব তার সমস্ত বাগান জ্বালিয়ে কয়লা বানিয়ে দেয়।
রায়হান রাশেদ: আলেম ও লেখক
আরও পড়ুনহালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব১৫ মার্চ ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রআন র র আয় ত র জন য আল ল হ ব দশ হ মসজ দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ