শ্রীমঙ্গলে আগাম লেবু বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে
Published: 13th, March 2025 GMT
চায়ের জেলা হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের সুনাম রয়েছে লেবু উৎপাদনেও। বিশেষ করে, শ্রীমঙ্গলের লেবু জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় দেশের অন্যান্য এলাকায়। চলতি রমজানে এই উপজেলায় লেবুর দাম চড়া। কৃষকরা কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, এখন উৎপাদনের মৌসুম নয়, বৃষ্টিপাতও হয়েছে কম। যে কারণে বছরের এই সময়ে যে পরিমাণ লেবু হওয়ার কথা, তেমন উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে বাজারে আগাম লেবু উঠলেও, পরিমাণে খুবই কম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লেবুর মৌসুমে প্রতিদিন উন্নত মানের কাগজি, চায়না, জারা, আদা, পাতি ও সিডলেস লেবু বিক্রি হয় শ্রীমঙ্গলে। সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ পাইকারি লেবুর বাজার হিসেবে শ্রীমঙ্গলের পরিচিতি রয়েছে। যে কারণে উৎপাদন মৌসুমে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই বাজারটি লেবু চাষি, পাইকার, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকে। সেখানে যেন এখন লেবুর আকাল।
মৌসুমে এ উপজেলায় লেবুর বেচাকেনা প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এখন মৌসুম না হলেও রমজানের কারণে চাহিদা বেড়েছে লেবুর। ফলে বিপাকে পড়েছেন ঢাকা, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা। তাদের অভিযোগ, ছোট-বড় লেবু একই দামে তারা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারছেন না। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
মহাজেরাবাদের লেবু চাষি মো.
জলিল খানের ভাষ্য, মৌসুমে যে পরিপক্ব লেবু পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে ২ থেকে ৪ টাকায়, সেই লেবু এখন বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকা। কোনোটার দাম আবার ২০-২৫ টাকা। সেই লেবু হাত ঘুরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর রাজধানীসহ বড় বড় শহরে দাম মিলছে ৪০-৪৫ টাকা।
মৌসুমের আগে লেবুর উৎপাদন বাড়াতে চাষিরা সেচের জন্য ডিপ টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। কৃষকরা বলেন, মৌলভীবাজারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাহলেই প্রান্তিক লেবু চাষি থেকে শুরু করে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা লোকশানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
লেবু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের ভাষ্য, রমজান মাসে লেবুর চাহিদা বেশি। তাই কিছু বাগানি অতিরিক্ত পরিশ্রম করে আগাম লেবু উৎপাদন করেছেন। বছরের অন্যান্য সময়
তারা যথাযথ দাম না পেলেও এই সময়ে বেশ ভালোই পাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক নিলুফার ইয়াছমিন মুনালিসা সুইটি জানান, এখন প্রজননের সময় নয়, লেবু গাছ পরিচর্যার সময়। দাম বেশি, তারপরও কিছু লেবু পাওয়া যাচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় দুই হাজার ৬৯ হেক্টর জমিতে সিডলেস, কলম্ব, জারা, এলাচি ও আদা লেবুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিই শ্রীমঙ্গল উপজেলায়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন এসব বিষয়ে বলেন, চাষিদের সমস্যার বিষয়টি জেনেছেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।