স্মার্টফোন শতভাগ চার্জ করা ভালো না খারাপ
Published: 14th, March 2025 GMT
দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য অনেকেই শক্তিশালী ব্যাটারিযুক্ত স্মার্টফোন কেনেন। ব্যবহারকারীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের তৈরি স্মার্টফোনে ব্যাটারির ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। কিন্তু ভুল পদ্ধতিতে চার্জ দেওয়ার কারণে নামীদামি ব্র্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটারির স্মার্টফোনগুলোর ব্যাটারিও দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, নিয়মিত ১০০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ করলে ব্যাটারির আয়ু কমতে পারে।
স্মার্টফোনের ব্যাটারির আয়ু কমে যাওয়ার অন্যতম দুটি কারণ হলো উচ্চ তাপমাত্রা ও অতিরিক্ত ভোল্টেজ চাপ। ফোনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক সহজ। চার্জ দেওয়ার সময় ফোনের কভার খুলে রাখা, অতিরিক্ত দ্রুত চার্জিং পদ্ধতি ব্যবহার না করাসহ গরম অবস্থায় ফোন ব্যবহার না করে সহজেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে চার্জিংয়ের সময় ব্যাটারির ওপর যে ভোল্টেজ চাপ পড়ে, সেটি পুরোপুরি এড়ানো কঠিন। স্মার্টফোনের ব্যাটারি প্রথম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত দ্রুত চার্জ হয়, তখন ভোল্টেজও বেশি থাকে। এরপর চার্জের গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং ব্যাটারির ওপর চাপ কিছুটা কমে যায়। মাঝেমধ্যে ফোন ১০০ শতাংশ চার্জ করলেও কোনো সমস্যা হয় না। তবে নিয়মিত করলে ব্যাটারির রাসায়নিক গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাটারির স্থায়িত্ব কমে যেতে পারে। ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ সীমিত রাখলে ব্যাটারির ওপর ভোল্টেজের চাপ কম পড়ায় দীর্ঘদিন ব্যাটারি ভালো থাকে।
আরও পড়ুনস্মার্টফোনের পর্দা পরিষ্কার করবেন যেভাবে২৫ ডিসেম্বর ২০২৩চার্জিং সীমা নির্ধারণ করা নির্ভর করে ফোন ব্যবহারের ধরন ও প্রয়োজনের ওপর। যদি ব্যবহারকারী নিয়মিত ডেস্কে বসে কাজ করেন এবং চার্জ দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ সীমিত রাখাই ভালো। এতে ব্যাটারির ওপর চাপ কমবে এবং দীর্ঘদিন ব্যাটারি ভালো থাকবে।
আরও পড়ুনস্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা ভালো রাখার ৭ উপায়২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বর্তমানে বেশির ভাগ স্মার্টফোনে চার্জ সীমিত রাখার বিল্ট-ইন সুবিধা রয়েছে। স্যামসাং ফোনে ‘ব্যাটারি প্রোটেকশন’ অপশনে গিয়ে এটি চালু করা যায়। ওয়ানপ্লাস ফোনে এই সুবিধা ‘ব্যাটারি হেলথ’ নামে পাওয়া যায়। আইফোনে ‘অপটিমাইজড ব্যাটারি চার্জিং’ সুবিধাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু থাকে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরও পড়ুনস্মার্টফোনের মাইক্রোফোন কি গোপনে আপনার কথা শুনছে? পরীক্ষা করবেন যেভাবে২২ নভেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য ট র র ওপর ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা
চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।
কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদবেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।
মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।