দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য অনেকেই শক্তিশালী ব্যাটারিযুক্ত স্মার্টফোন কেনেন। ব্যবহারকারীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের তৈরি স্মার্টফোনে ব্যাটারির ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। কিন্তু ভুল পদ্ধতিতে চার্জ দেওয়ার কারণে নামীদামি ব্র্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটারির স্মার্টফোনগুলোর ব্যাটারিও দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, নিয়মিত ১০০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ করলে ব্যাটারির আয়ু কমতে পারে।

স্মার্টফোনের ব্যাটারির আয়ু কমে যাওয়ার অন্যতম দুটি কারণ হলো উচ্চ তাপমাত্রা ও অতিরিক্ত ভোল্টেজ চাপ। ফোনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক সহজ। চার্জ দেওয়ার সময় ফোনের কভার খুলে রাখা, অতিরিক্ত দ্রুত চার্জিং পদ্ধতি ব্যবহার না করাসহ গরম অবস্থায় ফোন ব্যবহার না করে সহজেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে চার্জিংয়ের সময় ব্যাটারির ওপর যে ভোল্টেজ চাপ পড়ে, সেটি পুরোপুরি এড়ানো কঠিন। স্মার্টফোনের ব্যাটারি প্রথম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত দ্রুত চার্জ হয়, তখন ভোল্টেজও বেশি থাকে। এরপর চার্জের গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং ব্যাটারির ওপর চাপ কিছুটা কমে যায়। মাঝেমধ্যে ফোন ১০০ শতাংশ চার্জ করলেও কোনো সমস্যা হয় না। তবে নিয়মিত করলে ব্যাটারির রাসায়নিক গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাটারির স্থায়িত্ব কমে যেতে পারে। ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ সীমিত রাখলে ব্যাটারির ওপর ভোল্টেজের চাপ কম পড়ায় দীর্ঘদিন ব্যাটারি ভালো থাকে।

আরও পড়ুনস্মার্টফোনের পর্দা পরিষ্কার করবেন যেভাবে২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

চার্জিং সীমা নির্ধারণ করা নির্ভর করে ফোন ব্যবহারের ধরন ও প্রয়োজনের ওপর। যদি ব্যবহারকারী নিয়মিত ডেস্কে বসে কাজ করেন এবং চার্জ দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ সীমিত রাখাই ভালো। এতে ব্যাটারির ওপর চাপ কমবে এবং দীর্ঘদিন ব্যাটারি ভালো থাকবে।

আরও পড়ুনস্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা ভালো রাখার ৭ উপায়২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বর্তমানে বেশির ভাগ স্মার্টফোনে চার্জ সীমিত রাখার বিল্ট-ইন সুবিধা রয়েছে। স্যামসাং ফোনে ‘ব্যাটারি প্রোটেকশন’ অপশনে গিয়ে এটি চালু করা যায়। ওয়ানপ্লাস ফোনে এই সুবিধা ‘ব্যাটারি হেলথ’ নামে পাওয়া যায়। আইফোনে ‘অপটিমাইজড ব্যাটারি চার্জিং’ সুবিধাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু থাকে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও পড়ুনস্মার্টফোনের মাইক্রোফোন কি গোপনে আপনার কথা শুনছে? পরীক্ষা করবেন যেভাবে২২ নভেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য ট র র ওপর ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ