বাহ্যিক ইবাদত তিনভাবে হয়ে থাকে—মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক। জাকাত একটি নির্ধারিত আর্থিক ফরজ ইবাদত। জাকাত করুণার দান নয়, জাকাত গরিবের প্রাপ্য অধিকার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুত্তাকিগণ জান্নাতে ফোয়ারার নিকটে থাকবে। তারা গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন। নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ, তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রা যেত, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করত এবং তাদের ধনসম্পদে ছিল প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক বা ন্যায্য অধিকার।’ (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ১৫-১৯)
সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করলেই সমাজ, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র এবং বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত হবে। জাকাত সম্পদের প্রবাহ তৈরি করে ও দারিদ্র্য বিমোচন করে। আল্লাহ বলেন, ‘যাতে তোমাদের বিত্তবানদের মাঝেই শুধু সম্পদ আবর্তন না করে।’ (সুরা হাশর, আয়াত: ৭)
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘দাতা আল্লাহর কাছে প্রিয়, মানুষের কাছে প্রিয়, জান্নাতের নিকটতম; জাহান্নাম থেকে দূরে। সাধারণ দাতা অধিক ইবাদতকারী কৃপণ অপেক্ষা আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়।’ (তিরমিজি)
জাকাত, উশর, সদকাতুল ফিতর, ওয়াজিব সদাকাত, ফিদিয়া, কাফফারা ও মানত ব্যয়ের খাতও এগুলোই। আল্লাহ বলেন, ‘মূলত সদকাত হলো ফকির, মিসকিন, জাকাতকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে (ইসলামের সুরক্ষার জন্য) ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির ও পথশিশুদের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও পরম কৌশলী।’ (সুরা তাওবাহ, আয়াত: ৬০)
সময়ের প্রয়োজন ও ফলাফল বিবেচনা করে নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী ও অন্যদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিধান পালনের পাশাপাশি নিয়ত অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষ সওয়াবের পরিমাণও বাড়বে। উপকার যত ব্যাপক হবে, সওয়াবও তত বেশি হবে। যেমন দরিদ্র তালেবে এলেম বা অভাবী আলেমকে প্রদান করলে একদিকে যেমন তার দারিদ্র্য মোচন হবে, অন্যদিকে তার দ্বীনি ইলম অর্জনেও সহায়ক হবে।
যাঁদের জাকাত, সদকাতুল ফিতর, ওয়াজিব সদাকাত, ফিদিয়া, কাফফারা ও মানত প্রদান করা যায় না, তাঁরা হলেন পিতা-মাতা ও ঊর্ধ্বতন পুরুষ, যেমন দাদা-দাদি ও নানা-নানি। ছেলে-মেয়ে ও অধস্তন পুরুষ, যেমন নাতি-নাতনি। স্ত্রীকেও জাকাত–সদকা প্রদান করা যায় না; কারণ তাঁর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান স্বামীর দায়িত্বে। যাঁরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এবং অমুসলিম ব্যক্তি।
আপন ভাই–বোন, ভাগনে–ভাগনি, ভাতিজা–ভাতিজি, চাচা–জ্যাঠা–ফুফু, মামা–খালা; চাচাতো জ্যাঠাতো ভাই–বোন, ফুফাতো ভাই–বোন, মামাতো খালাতো ভাই–বোন এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হন, তাহলে তাদেরও জাকাত, উশর, সদকাতুল ফিতর, ওয়াজিব সদাকাত, ফিদিয়া, কাফফারা ও মানত দেওয়া যাবে; বরং এদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
হাদিস শরিফে রয়েছে নিকটাত্মীয়দের দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব হয়—প্রথমত দানের সওয়াব, দ্বিতীয়ত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার সওয়াব। জাকাত, ফিতরাসহ সব ধরনের দান নগদ টাকায় বা খাদ্যদ্রব্য এবং অন্য কোনো বস্তু, যেমন পোশাক-আশাক, ঈদের বাজার ইত্যাদি কিনেও দেওয়া যায়। জাকাত এমনভাবে প্রদান করা উচিত, যাতে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য বিমোচন হয়। আত্মপ্রচার ও প্রদর্শনী কাম্য নয়।
জাকাত ও সদকায় অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এমন অভাবী লোক যারা আল্লাহর পথে নিজেদের নিয়োজিত রাখার কারণে (উপার্জনের জন্য) দুনিয়া চষে বেড়াতে পারে না। সম্ভ্রান্ততা ও আত্মমর্যাদার কারণে অনভিজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবহীন মনে করে। আপনি তাদের চিহ্ন দেখে চিনতে পারবেন। তারা মানুষের কাছে নির্লজ্জভাবে ভিক্ষা করে না। আর তোমরা যেকোনো উত্তম জিনিস ব্যয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সে বিষয়ে অবগত আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭৩)
জাকাত গ্রহীতা যদি আত্মীয়স্বজন, আপনজন বা পরিচিত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হন, তাহলে জাকাত, ফিতরা উল্লেখ করাটা মোটেই সমীচীন নয়। কারণ, এতে গ্রহীতা অপমানিত, অসম্মানিত ও বিব্রত বোধ করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সম্মান আল্লাহর জন্য, সম্মান রাসুল (সা.
নারীরা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিজেদের সোনাদানা, গয়না ও টাকাপয়সা অর্থসম্পদের জাকাত প্রদান করবেন এবং সদকাতুল ফিতরও আদায় করবেন। নারীর পক্ষে পিতা, ভ্রাতা, স্বামী, সন্তান বা অন্য কেউ আদায় করে দিলেও হবে। যেহেতু আর্থিক ইবাদতগুলো একজন অন্যজনের পক্ষ থেকে আদায় করতে পারেন। (দুররুল মুখতার)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল র জন য সওয় ব
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি