বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে। উদ্যোক্তারা নতুন প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান নিয়ে আসছেন, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা রাখে। তবে এই প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করতে এবং একটি টেকসই ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

আজ শনিবার ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ‘বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম শক্তিশালীকরণে মিডিয়া পার্টনারশিপের ভূমিকা’ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) আয়োজিত এই সেমিনারে স্টার্টআপ ও মিডিয়ার পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম আমিরুল ইসলাম সেমিনারের চেয়ার হিসেবে বলেন, সরকার ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের জন্য নীতি সহায়তা প্রদান করছে এবং মিডিয়া এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বিএইচটিপিএ-এর ডিজিটাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন ইকোসিস্টেম ডেভেলপমেন্ট (ডিইআইইডি) প্রকল্প দেশের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, বিনিয়োগ সহায়তা এবং নেটওয়ার্কিং সুবিধা প্রদান করছে। এই প্রকল্পের অধীনে সারা দেশের ১ হাজার ৫০ জন উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ও মেন্টরিং প্রদান করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সেন্টার ফর টেকনোলজি জার্নালিজমের (সিটিজে) সভাপতি হাসান জাকির বলেন, বাংলাদেশের স্টার্টআপ কার্যক্রম ১২ বছরের বেশি সময় ধরে চললেও এখনো যথাযথ ইকোসিস্টেম তৈরি হয়নি। বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে আমাদের অবস্থান উন্নত করতে স্টার্টআপ এবং মিডিয়াকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য মিডিয়া তিনটি মূল ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। এ তিনটি বিষয় হলো সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প তুলে ধরা। উদ্যোক্তাদের সাফল্যগাথা যেমন প্রচারিত হওয়া উচিত, তেমনি ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের জন্য শিক্ষামূলক কনটেন্ট তৈরি করা যেতে পারে। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা—দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা মূলত মিডিয়ার মাধ্যমেই নতুন স্টার্টআপ সম্পর্কে জানতে পারেন। সচেতনতা ও নীতিনির্ধারণে সহায়তা—গণমাধ্যম স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে নীতিগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট হোসনে ফেরদৌস সুমী বলেন, বাংলাদেশি স্টার্টআপ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশীয় স্টার্টআপদের বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে মিডিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন।

ফিউচার স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা রুহুল কাদের ও ওয়াই ওয়াই ভেঞ্চারসের প্রোগ্রাম সমন্বয়ক ফারিহা তাবাসসুম হকসহ দেশের খ্যাতনামা স্টার্টআপ প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। তাঁরা বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন হলে নতুন উদ্যোক্তারা অনুপ্রাণিত হবেন এবং দেশীয় স্টার্টআপগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের তুলে ধরার সুযোগ পাবে। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

সেমিনারের শেষ পর্বে স্টার্টআপ অ্যান্ড স্কেলআপ প্রোগ্রামের প্রথম ধাপে নির্বাচিত ৫০টি স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের উপস্থিতিতে একটি ইফতার ও নেটওয়ার্কিং অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ঢোকার আগে সতর্ক করবে গুগল ক্রোম

ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে গুগল। ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে প্রকাশিতব্য ক্রোম ব্রাউজারের ১৫৪তম সংস্করণে ডিফল্টভাবে সব ওয়েবসাইট নিরাপদ এইচটিটিপিএস (হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল সিকিউর) সংযোগে লোড হবে। কোনো ওয়েবসাইট যদি এখনো অনিরাপদ এইচটিটিপি (হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল) প্রোটোকলে চলে, তবে সেই সাইটে প্রবেশের আগে ব্যবহারকারীর অনুমতি চাইবে ক্রোম।

গুগল ২০২১ সালে ‘এইচটিটিপিএস ফার্স্ট মোড’ চালু করে। ওই সুবিধা চালু থাকলে ব্যবহারকারীরা চাইলে ব্রাউজারে ‘অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস’ অপশনটি সক্রিয় করতে পারতেন। এতে ক্রোম প্রথমে নিরাপদ সংযোগে সাইটে প্রবেশের চেষ্টা করে। সংযোগ না পাওয়া গেলে সতর্কবার্তা দেখায়। এবার গুগল ফিচারটি ডিফল্টভাবে সক্রিয় করতে যাচ্ছে, যাতে ব্যবহারকারীরা অনিরাপদ সংযোগে কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ না করেন এবং মাঝপথে কেউ ডেটা চুরি বা বিকৃত করতে না পারে।

গুগলের ক্রোম নিরাপত্তা দল এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০২৬ সালের অক্টোবর মাসে ক্রোম ১৫৪ সংস্করণ প্রকাশের সময় থেকে ডিফল্টভাবে অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস চালু করা হবে। এর ফলে কোনো ওয়েবসাইটে নিরাপদ সংযোগ না থাকলে প্রথমবার প্রবেশের আগে ক্রোম ব্যবহারকারীর অনুমতি চাইবে। গুগল আরও জানিয়েছে, অনিরাপদ সংযোগের সুযোগ নিয়ে আক্রমণকারীরা ব্রাউজারের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ব্যবহারকারীর অজান্তে ক্ষতিকর কনটেন্ট, ম্যালওয়্যার বা বিভ্রান্তিকর তথ্য পাঠাতে পারে। এতে তথ্য চুরি বা সামাজিক প্রকৌশলভিত্তিক আক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

তবে ক্রোম একই ওয়েবসাইটে বারবার সতর্কবার্তা দেখাবে না। কোনো অনিরাপদ সাইট নিয়মিত ব্যবহার করলে সেই সাইটে আর সতর্কতা দেখানো হবে না। নতুন বা খুব কম দেখা ওয়েবসাইটে ঢোকার সময়ই কেবল সতর্কবার্তা দেখানো হবে। ব্যবহারকারীরা চাইলে শুধু পাবলিক ওয়েবসাইটের জন্য এই সতর্কতা চালু রাখতে পারবেন অথবা পাবলিক ও ব্যক্তিগত দুই ধরনের সাইটের জন্যই সেটিংটি সক্রিয় করতে পারবেন। যদিও ব্যক্তিগত বা অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যেও কিছু ঝুঁকি থাকে, তবু সেগুলো সাধারণত পাবলিক সাইটের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এসব সাইট সাধারণত গৃহস্থালি ওয়াই–ফাই বা কোনো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কে সীমাবদ্ধ থাকে, যেখানে বাইরের আক্রমণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম।

গুগল জানিয়েছে, এই পরিবর্তনে ব্যবহারকারীদের ঘন ঘন সতর্কবার্তা দেখার আশঙ্কা নেই। বর্তমানে ইন্টারনেটে ৯৫ থেকে ৯৯ শতাংশ ওয়েবসাইট ইতিমধ্যে নিরাপদ এইচটিটিপিএস প্রোটোকল ব্যবহার করছে, যেখানে ২০১৫ সালে এই হার ছিল মাত্র ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ।

সব ব্যবহারকারীর জন্য সুবিধাটি চালুর আগে, ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিতব্য ক্রোমের ১৪৭তম সংস্করণে ‘এনহান্সড সেফ ব্রাউজিং’ সুবিধা ব্যবহারকারী এক শ কোটি মানুষের জন্য প্রকাশ্য ওয়েবসাইটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস’ চালু করা হবে। গুগল বলেছে, ‘আমরা আশা করছি, এই পরিবর্তন অধিকাংশ ব্যবহারকারীর জন্য নির্বিঘ্ন হবে। তবে কেউ চাইলে ব্রাউজারের সেটিং থেকে “অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস” বন্ধ করতে পারবেন। ওয়েব ডেভেলপার বা তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের এখনই এই ফিচারটি সক্রিয় করে রাখা উচিত, যাতে আগেভাগেই অনিরাপদ ওয়েবসাইট শনাক্ত করা যায়।’

ইন্টারনেট নিরাপত্তা বাড়াতে গুগল আগেও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ক্রোমে ‘এইচটিটিপিএস আপগ্রেড’ নামের ফিচার যোগ করা হয়, যা ওয়েবপেজের অভ্যন্তরীণ এইচটিটিপি লিংক স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপদ সংযোগে রূপান্তর করে।

সূত্র: ব্লিপিংকম্পিউটার ডটকম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ঢোকার আগে সতর্ক করবে গুগল ক্রোম