দ্বৈত উদ্যোগে ‘পে লেটার’ পরিষেবার কারণে বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে তাৎক্ষণিকভাবে কাগজের ব্যবহার ছাড়াই ক্ষুদ্রঋণ ও ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়
ডিজিটাল ঋণ পরিষেবা উদ্ভাবনের স্বীকৃতি হিসেবে জিএসএমএ গ্লোমো সেরা ‘ফিনটেক ইনোভেশন’ পুরস্কার পেয়েছে হুয়াওয়ে ও বিকাশ। বার্সেলোনায় আয়োজিত চলতি বছরের মোবাইল কংগ্রেস (এমডব্লিউসি) আসরে প্রতিষ্ঠান দুটিকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
গ্লোমো বেস্ট ফিনটেক ইনোভেশন পুরস্কারের মাধ্যমে আর্থিক পরিষেবা খাতের সেসব যুগান্তকারী উদ্যোক্তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যারা জনসাধারণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সেবার পরিচালনা ও ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে রূপান্তরিত করে। বিকাশ ও হুয়াওয়ে বাংলাদেশে ‘পে লেটার’ পরিষেবায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। এমন উদ্যোগ ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে স্বল্পমেয়াদি ক্ষুদ্রঋণের সুবিধা দিয়ে তাদের প্রতিদিনের খরচের ঘাটতি পূরণে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
২০১৮ সালে যাত্রা শুরুর পর বিকাশ বাংলাদেশের ৬১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির কাছে আর্থিক পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছে। তবে এখনও ৩৭ শতাংশ নাগরিক জরুরি প্রয়োজনে উচ্চসুদে ঋণদাতার ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, মাত্র ৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিকাশ ও হুয়াওয়ে নিজস্ব উদ্যোগে ‘পে লেটার’ পরিষেবা চালু করে। ফলে বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে তাৎক্ষণিকভাবে কাগজের ব্যবহার ছাড়াই ক্ষুদ্রঋণ
ও ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী উদ্যোক্তার জন্য উদ্যোগটি বেশ সহায়ক। মূলধন সংগ্রহ ও দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখার সঙ্গে স্থানীয়
ই-কমার্সকে প্রসারিত করছে বলে জানানো হয়।
বিকাশের চিফ প্রোডাক্ট অ্যান্ড টেকনোলজি অফিসার (সিপিটিও) মোহাম্মাদ আজমল হুদা বলেন, হুয়াওয়ের মোবাইল মানি প্ল্যাটফর্মের সুবিধা কাজে লাগিয়ে আমরা ২০টির বেশি জরুরি পেমেন্ট পরিষেবা দ্রুত প্রসারিত করার সঙ্গে ‘পে লেটার’ মাইক্রো ফিন্যান্সিয়াল সেবার উদ্যোগ নিয়েছি, যা লাখ লাখ মানুষের আর্থিক স্বাবলম্বী অর্জনে ভূমিকা রেখেছে এবং বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে ত্বরান্বিত করেছে। হুয়াওয়ে সফটওয়্যার বিজনেস ইউনিটের প্রেসিডেন্ট মরিস মা বলেন, বিকাশের সঙ্গে গ্লোমো
‘বেস্ট ফিনটেক ইনোভেশন’ পুরস্কার অর্জন সত্যিই সম্মানের। পণ্য ও সেবা উদ্ভাবনে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার মাধ্যমে গ্রাহকের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। গ্রাহক যেন ব্যবসায়িক সাফল্য খুঁজে পান এবং সামাজিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন, সে উদ্দেশ্যেই কাজ করছি।
গত এক দশকে হুয়াওয়ে মোবাইল মানি সল্যুশন
৪০টি দেশে ৪৮ কোটির বেশি গ্রাহককে আর্থিক সুবিধা দিয়েছে। বিশেষ করে ক্লাউড-নেটিভ ডিস্ট্রিবিউটেড আর্কিটেকচার, যা প্ল্যাটফর্মের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ নির্ভরযোগ্যতা ও অন্তহীন সম্প্রসারণ সক্ষমতা নিশ্চিত করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখতে কাজ করে।
উদ্ভাবনী ডেটা ও এআই ইঞ্জিনের সহায়তায় হুয়াওয়ে মোবাইল মানি দ্রুত ও কার্যকরভাবে আর্থিক ঝুঁকি বিশ্লেষণের সঙ্গে আয়ের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। প্ল্যাটফর্মের উন্মুক্ত অবকাঠামো যেমন নতুন ব্যবসায়িক উদ্ভাবনকে বিকশিত করে, তেমনি ডিজিটাল লাইফস্টাইলকে উৎসাহিত করার সঙ্গে সারাবিশ্বে গ্রাহকের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও মানোন্নত আর্থিক পরিষেবা নিশ্চিত করে।
চলতি বছর স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস (এমডব্লিউসি) আয়োজনে হুয়াওয়ে ইভেন্টে ফিরা গ্রান ভিয়া হল ওয়ানে স্ট্যান্ড ওয়ান এইচ ফিফটিতে সর্বাধুনিক পণ্য ও পরিষেবা প্রদর্শন করেছে।
জানা গেছে, ২০২৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে ফাইভজি অ্যাডভান্সড প্রযুক্তির সব ধরনের ব্যবহার বাড়বে। এআই টেলিকম অপারেটরের ব্যবসা, অবকাঠামো, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি নতুনভাবে গড়ে উঠবে। বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য ব্র্যান্ডটি কয়েকটি টেলিকম অপারেটর ও সহযোগীর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র ব যবস য় আর থ ক ক জ কর পর ষ ব
এছাড়াও পড়ুন:
জীবন বাঁচাতে রক্ত দিন
বাংলাদেশ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন ২০০২ অনুসারে রক্তদাতার বয়সের সীমারেখা হচ্ছে ১৮ থেকে ৬০ বছর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠী প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাস্থ্যবান; ১৮ থেকে ৬৬ বছর বয়সের সীমারেখার মধ্যে সে দেশের মানুষকে রক্তদাতা হিসেবে গণ্য করা হয় বং তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ লোক রক্তদানে অভ্যস্ত। সুইজারল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের আরও অন্যান্য দেশেও বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়।
অনুন্নত বিশ্বে এ রক্তদাতার হার ১ ভাগের কম। বাংলাদেশে এ রক্তদানের সংক্ষেপ চিত্র হচ্ছে, প্রতিবছর বিভিন্ন হাসপাতালের প্রয়োজন ১০ লাখ ইউনিট এবং স্বাস্থ্যবান সক্ষম নিরাপদ রক্তদাতাদের থেকে সংগৃহীত হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট।
সাধারণত অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছর, যাঁরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, যাঁদের কোনো কঠিন রোগ নেই এবং যাঁরা কোনো মারাত্মক ব্যাধি অন্যের দেহে সঞ্চালনের আশঙ্কা বহন করেন না, বিশেষ করে এইচআইভি ভাইরাস; তাঁদের রক্তদাতা হিসেবে উপযোগী বলে গণ্য করা হয়।
রক্তদাতা হওয়া উচিত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও বিনা মূল্যে জীবন রক্ষাকারী মহাকল্যাণকামী দানের প্রতি আস্থাশীল। বিনা মূল্যে দানের রক্ত, অর্থের মাধ্যমে কেনা রক্তের চেয়ে অনেক নিরাপদ। বিভিন্ন দেশে রক্ত পরিসঞ্চালন সেবায় রক্তদাতা নির্বাচনে রক্তদাতা ও গ্রহীতার নিরাপত্তা বিধানে আইন প্রণীত হয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ বছর বয়সী মানুষকে রক্তদাতা হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ডেনমার্কসহ কিছু দেশে ৭০ বছর বয়সেও রক্তদাতা নির্বাচিত হন, কিছু দেশ মা–বাবার সম্মতি ব্যতিরেকে ১৬ বছর বয়সী মানুষকেও রক্তদাতা হিসেবে নির্বাচিত করে।
রক্তের শিরা ছিদ্রকরণ (ভেনিসেকশন) পদ্ধতির একটি চিকিৎসা আইনসম্মত বিধান থাকা উচিত। একজন রক্তদাতা রক্তদানের পর অসুস্থ হলে রক্তদাতা নিজে বা তার নিকটাত্মীয়রা রক্তদানের কারণে অসুস্থ হয়েছেন বলে একটি বিরূপ ধারণার জন্ম নিতে পারে বলেই একজন সক্ষম রক্তদাতা অবশ্যই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে এবং তাদের এমন কোনো অসুস্থতা থাকবে না যাতে সে সাধারণ রক্তদাতা হিসেবে নিগৃহীত হতে পারে। যেমন রক্তশূন্যতা, যক্ষ্মা, ক্যানসার, স্ট্রোক, এপিলেপসি, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস, কার্ডিয়াক, রেসপিরেটরি অথবা রেনাল ডিজিজ। উচ্চ রক্তচাপের ব্যক্তিদের রক্তদাতা ও রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ উভয়েই নির্দ্বিধায় বলতে পারে যে রক্তদানের মাধ্যমে উভয় পক্ষই একটি বিপদমুক্ত মহৎ কাজ করছে।
রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ রক্তদানে ইচ্ছুক লোকজনের মাঝে রক্তদানের তথ্যবহুল কাগজপত্র সরবরাহ করলে এ রকম একটি কঠিন কাজ অনেক সহজ হতে পারে। স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা বোনম্যারো দানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, সে জন্য অনেক রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অনেক রেকর্ড সংরক্ষণ করে ম্যারোদাতা নিযুক্ত করতে সহায়তা করে। বিশ্ব মেরুডোনারস অ্যাসোসিয়েশনের (Buskard,1991) বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায় যে প্রায় চার লাখ বোনম্যারো ডোনার তাঁদের কাছে মজুত আছে, যাঁদের এইচএলএ প্রকারভেদও সম্পন্ন করা আছে।
প্রতিটি রক্তদান ও সংগ্রহের সামগ্রিক তথ্য রেকর্ড করা এবং বছরের পর বছর সংরক্ষণ করা উচিত। পূর্ববর্তী রক্তদানের বিভিন্ন তথ্য যেমন রক্তের গ্রুপ রক্তদানে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার তথ্য, অণুজীব অ্যান্টিবডি উপস্থিতি, হঠাৎ বেহুঁশ বা পড়ে যাওয়ার ইতিহাস পরবর্তী সেশনের রক্তদানে অনেক সহায়তা করে। চলতি ও পূর্ববর্তী রক্তদানের বিভিন্ন তথ্য–সংবলিত বিশালসংখ্যক রক্তদাতার প্যানেল কম্পিউটারে সংগ্রহ করা বর্তমানকালের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সমাজের সব স্তরের, সব ধর্মের, সব পেশার লোকজনকে আহ্বান জানাচ্ছি—
১. ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক সব সুস্থ নারী-পুরুষ, যাঁদের ওজন ১০০ পাউন্ড বা তার বেশি, তাঁরা প্রতি চার মাস অন্তর নিয়মিত রক্তদান করুন।
২. পরিচিতজনদের রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করুন।
৩. স্বেচ্ছা রক্তদাতা তৈরির আয়োজনে সক্রিয় সহযোগিতা করুন।
৪. স্ক্রিনিং ছাড়া রক্ত নেবেন না, এমনকি আপনজনের হলেও নয়; কারণ তার রক্তেও সুপ্ত থাকতে পারে সংক্রামক ঘাতক ব্যাধির জীবাণু।
৫. কখনো পেশাদার রক্তদাতার রক্ত কিনবেন না।
৬. রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না এবং বোনম্যারো নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়।
৭. রক্তদান জীবনদান, তাই নিয়মিত রক্তদানের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
পরিবেশ বাঁচাতে বনায়ন যেমন পূর্বশর্ত। জীবন বাঁচাতে তেমনি দরকার নিরাপদ রক্ত।
ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ। উপদেষ্টা, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সোসাইটি অব বাংলাদেশ।