আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১০ মাস ধরে আটকে রয়েছেন মার্কিন নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস। দ্রুত একটি মিশন শেষ করে পৃথিবীতে ফেরার কথা থাকলেও মহাকাশযানের ত্রুটির কারণে আটকে যান তাঁরা। পৃথিবীতে তাঁদের ফেরানো নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়। তবে সব শঙ্কা কেটেছে। বুচ ও সুনিতা অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন। বুধবার ফিরতে পারেন তাঁরা। গতকাল সোমবার মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার পক্ষ থেকে তাঁদের ফেরার দিনক্ষণ জানানো হয়। এ ছাড়া তাঁদের ফেরার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

নভোচারীদের ফেরাতে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ও স্পেসএক্স একটি মিশন পরিচালনা করেছে। গত রোববার মহাকাশকেন্দ্রে পৌঁছানো স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে করে তাঁরা পৃথিবীর পথে রওনা দেবেন।

সুনিতা ও বুচ দুজনই মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নভোচারী। তাঁরা গত বছরের জুন থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে আছেন। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে ত্রুটির কারণে তাঁরা মহাকাশকেন্দ্রে আটকা পড়েন। মহাকাশযানটিকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় নাসা।

এমন অবস্থায় আটকে পড়া দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনতে গত বছর থেকেই নানা পরিকল্পনা করতে শুরু করে নাসা। গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে নাসার তৎপরতার অংশ হিসেবে ক্রু-১০ মিশনের ফ্লাইটে তাঁদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গত শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টা ৩ মিনিটে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানটি ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি মহাকাশকেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করে। এর ২৯ ঘণ্টা পর গত রোববার ভোর ৪টা ৪ মিনিটের দিকে এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে পৌঁছায়। এ মিশনে রয়েছেন চার নভোচারী। তাঁরা হলেন অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়ার্স, জাপানের মহাকাশ সংস্থার নভোচারী তাকুয়া অনিশি ও রুশ নভোচারী কিরিল পেসকভ। এই চার নভোচারী প্রায় ছয় মাস মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। সুনিতা, বুচসহ আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে থাকা সাত নভোচারী তাঁদের স্বাগত জানান।

এখন নভোচারী অদলবদলের অংশ হিসেবে ক্রু-১০–এর ওই ফ্লাইটে করে সুনিতা ও বুচ ফিরবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং রাশিয়ার নভোচারী আলেকসান্দর গরবুনোভ। নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং নভোচারী আলেকসান্দর গরবুনোভ গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে সুনিতা ও বুচের জন্য দুটি ফাঁকা সিট নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকে যানটি মহাকাশকেন্দ্রের সঙ্গেই ছিল।

ট্রাম্প এবং তাঁর উপদেষ্টা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক দ্রুত ক্রু-১০ উৎক্ষেপণের আহ্বান জানালে এ অভিযানের সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে। ট্রাম্প ও মাস্ক কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন রাজনৈতিক কারণে সুনিতা ও বুচকে আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে ফেলে রেখেছেন।

সুনিতাদের ফেরার সময় নির্ধারিত থাকলেও কিছুটা আশঙ্কা থেকে গেছে। নাসা বলছে, পরিস্থিতি বাদ সাধলে আবার বদলে যেতে পারে সুনিতাদের ফেরার দিনক্ষণ। মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার জটিল এই প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হলে মহাকাশচারীদের নিয়ে পৃথিবীতে ফিরতে দেরি হতে পারে ড্রাগনের। তা ছাড়া বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশযানের অবস্থা, পুনরুদ্ধার দলের প্রস্তুতি, আবহাওয়া, সমুদ্রের পরিস্থিতি—নভোচারীদের ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই সবকিছুই।

পৃথিবীতে ফেরার পর সুনিতাদের বেশ কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এত দিন মহাকাশে থাকার পর পৃথিবীতে ফিরলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তাঁদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে নানা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় হেরফের ঘটে।

গতকাল সুনিতাদের ফেরার প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছে। সে সময়ে তাঁদের মহাকাশযানটির দরজা বন্ধ হয়। এরপর শুরু হয়েছে মহাকাশ স্টেশন থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া। তাতে এখনো বেশ খানিকটা সময় লাগবে। ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শুরু হবে ফেরার প্রক্রিয়া।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প সএক স অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ