প্রায় ১৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে অ্যামাজন, লক্ষ্য ব্যয় কমানো
Published: 19th, March 2025 GMT
আবারও বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করবে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। প্রায় ১৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে কোম্পানিটি। তবে সাধারণ কর্মী নয়, এবার ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে এই কর্মী ছাঁটাই হবে।
চলতি বছরের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে এই ১৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এর জেরে সারা বিশ্বে অ্যামাজনের কর্মীর সংখ্যা কমবে প্রায় ১৩ শতাংশ। ছাঁটাইয়ের জেরে অ্যামাজনের বৈশ্বিক পর্যায়ে কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৭০০ থেকে নেমে আসবে ৯১ হাজার ৯৩৬ জনে। মূলত ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে এই কর্মী ছাঁটাই করা হবে বলে জানা গেছে। খবর মিন্ট
কয়েক মাস ধরেই কর্মী সংকোচনের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে অ্যামাজনের কার্যালয়ে। প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন দলে একাধিক বদল করা হচ্ছে। খরচ কমানোর উদ্দেশ্যেই এই ছাঁটাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অ্যামাজনের সিইও বা প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জেসি সম্প্রতি কোম্পানির কৌশল প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় দক্ষতা বাড়ানোর কথা বলেছেন। তাঁর মত, ব্যবস্থাপক ও প্রদায়কদের অনুপাত অন্তত ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যে সেই লক্ষ্য পূরণের সময়সীমা দিয়েছিলেন অ্যাজামনের প্রধান নির্বাহী সিইও। সে লক্ষ্যেই এবার ব্যবস্থাপক পদে ছাঁটাই করা হচ্ছে।
কোম্পানির পুনর্গঠন ও ব্যয় হ্রাসে প্রায় ১৩ হাজার ৮৩৪টি ব্যবস্থাপনা পদ বাতিল করা হতে পারে বলে মর্গ্যান স্ট্যানলির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। বেছে বেছে অযোগ্য কর্মীদের ছাঁটাই করা হবে বলেও কোম্পানিটির দাবি। দক্ষতার ঘাটতি আছে—এমন কর্মী বাছাই করতে নাকি বিভিন্ন পন্থাও অবলম্বন করেছে তারা।
করোনা মহামারি চলাকালে অন্যান্য প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানির মতো অ্যামাজনের কর্মীও অনেকটা বেড়েছিল। বাড়তি চাহিদা সামলাতেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। ২০১৯ সালে ৭ লাখ ৯৮ হাজার কর্মী থেকে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৬ লাখে। তবে তারপর একাধিকবার কর্মী ছাঁটাই করেছে তারা। ২০২২ ও ২০২৩ সালে কোম্পানির মোট ২৭ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছিল।
করোনা মহামারির পর চাহিদা কমে গেলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাই শুরু করে। ২০২২ সালের শেষ দিকে গুগল, মেটা, টুইটারসহ বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাইয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বে প্রথম একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের ঢল শুরু হয়। সেই ঢল এখনো অব্যাহত। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও অর্থ, গণমাধ্যম, অটোমোটিভসহ আরও নানা সেক্টর থেকে কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। এরপর শুরু হয় এআই খাতে বিনিয়োগের প্রতিযোগিতা। সেই ধাক্কায় নতুন করে শুরু হয় ছাঁটাইপ্রক্রিয়া। সব কোম্পানিকেই এআই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হচ্ছে। ফলে ব্যয় সংকোচনের কথা বলে অ্যামাজনও ছাঁটাই করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য ম জন র হ জ র কর ম ব যবস থ ট ই কর
এছাড়াও পড়ুন:
ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে
দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।
এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
ঢাকা/হাসান/সাইফ