ডলারের দাম না বাড়লেও যেভাবে বাড়ছে প্রবাসী আয়
Published: 19th, March 2025 GMT
একসময় বাংলাদেশে প্রবাসী আয় আসত সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে। পাশাপাশি গ্রাহকেরা একবার ব্যবহারযোগ্য পাসওয়ার্ড দিয়ে ব্যাংকের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রবাসী আয় উত্তোলন করতেন (এখনো করা যায়)। তখন ডলারের দাম বাজারের ওপর নির্ভর করত, খুব বেশি পরিবর্তন হতো না।
২০২২ সালে ডলারের সংকট শুরু হলে বিদেশে অর্থ স্থানান্তরকারী (মানি ট্রান্সফার) কিছু প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের পাশাপাশি একই জাতীয় ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনতে শুরু করে। এরপর সেই ডলার একসঙ্গে করে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দরদাম শুরু করে। যেই ব্যাংক বেশি দাম দেয়, সেই ব্যাংক পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত ডলার। এভাবে ডলারের দাম হু হু করে বেড়েছে।
গত আগস্টে নতুন সরকার গঠনের পর ডলারের দাম ১২২ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, ব্যাংকগুলো এক টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে ডলার কেনাবেচা করতে পারবে। এরপর ব্যাংকগুলো কী দামে ডলার কেনাবেচা করছে, তার তদারকি জোরদার করে। ফলে ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা চলছিল, তা অনেকটা কেটে যায়। ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলো বিদেশি বকেয়া আমদানি দায়ের বড় অংশ পরিশোধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক লেনদেনে চাপ কিছুটা কমেছে।
সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, সৌদি আরবের পুরো প্রবাসী আয় এখন সরাসরি বাংলাদেশে আসছে না, আসছে দুবাই হয়ে। একটি অসাধু চক্র সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় কিনে মজুত করছে এবং বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে। ফলে সেখানে বসেই চক্রটি বাংলাদেশের ডলার বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছে। ব্যাংকগুলোকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি দামে ডলার কিনতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি জানান।
এর মধ্যে চলে আসে পবিত্র রমজান মাস। সাধারণত এ মাসে রমজান ও ঈদ পালনের জন্য নিকটাত্মীয়দের কাছে প্রবাসীরা বেশি অর্থ পাঠান। ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনে থাকে। ফলে প্রবাসী আয় আগের তুলনায় বেড়ে যায়। এবারও রমজান মাস শুরুর পর প্রবাসী আয় বেড়েছে, তবে সে জন্য ডলারের দাম বাড়াতে হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে ডলারের যতটা সংকট ছিল, এখন ততটা নেই। ফলে দাম না বাড়িয়েও প্রবাসী আয় বাড়ছে। এখন যে আয় আসছে, তা আরও অনেক বেশি বাড়ানো সম্ভব। প্রবাসী আয়বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করে আয় নিয়ে আসা আরও সহজ করতে হবে। প্রবাসী আয়ের অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে তাৎক্ষণিকভাবে এলে অবৈধ পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তাঁদের আরও কিছুটা দক্ষ করে পাঠাতে হবে। এতে প্রবাহ বাড়বে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিনে ব্যাংক মাধ্যমে ১৬৬ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে ছয় কোটি ডলারের প্রবাসী আয় বেশি এসেছে। ব্যাংক মাধ্যমে প্রথম সপ্তাহে ৮১ কোটি ও দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।
সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি আসে। গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ৫ দিনে ৪৫ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার আসে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি ও দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ইসলামী ব্যাংকে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার। এরপর জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ১৪ কোটি ডলার, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ কোটি ডলার। এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংক ৮ কোটি ৯৭ লাখ ও সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
ব্যাংকগুলো সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ব্যাংক আগের চেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আনছে। এ সময় প্রতি ডলার কেনায় দাম ছিল ১২৩ টাকার মধ্যে। বেশির ভাগ ব্যাংক ১২২ টাকা ৮০ পয়সার চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনেছে। তবে কেউ ১২৩ টাকা অতিক্রম করেনি। ফলে প্রবাসী আয়ের বেশির ভাগ ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসছে।
ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থ পাচার কমে আসায় বৈধ পথে আয় বেড়েছে। এ ছাড়া ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতা না থাকার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ডলারের সংকট কেটে যাবে।
বেসরকারি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলার বেশি আসছে ঈদের কারণে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বেশি। ঈদের মাসে সংসারের অন্য খরচের জন্য বেশি ডলার পাঠান প্রবাসীরা। আমরা ডলার কিনছি ১২২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে। এটা ভালো দাম। তাই ডলার সরবরাহ বাড়ছে। বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে এই ১ টাকার কাছাকাছি বা ১ টাকার পার্থক্য থাকাটা উত্তম। চাহিদা-জোগান ভিত্তিতে তৈরি হওয়া বাজারমূল্যের এ হিসাবে স্বচ্ছতা আছে।’
গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে টানা ৭ মাসে গড়ে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় পাঠিয়েছেন। চলতি মাসে যে ধারায় প্রবাসী আয় আসছে, তাতে আয় ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রবাসী আয় হলো দেশে ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। এ আয়ের বিপরীতে বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না অথবা দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে ডলারের মজুত দ্রুত বাড়ে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স র প রথম প রব স র র প রব স আয় ব ড় রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার
ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।
বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।
অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।
আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।