এভাবে অতর্কিতে আক্রান্ত হতে হবে, বেইজ্জত হতে হবে, সত্য উদ্‌ঘাটিত হয়ে তাঁদের বে–নকাব হতে হবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি কিংবা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) সম্ভবত তা কল্পনাও করতে পারেননি। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায়ইবা কী, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাও নেই। তাঁদের কাছে এ যেন ছায়ার সঙ্গে কুস্তি।

ভারতের শাসককুলকে অপ্রত্যাশিত এই লড়াইয়ের মুখোমুখি করিয়েছে উন্নতমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর চ্যাটবট ‘গ্রোক ৩’। ইলন মাস্কের সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’ ব্যবহারকারীরা যার মাধ্যমে নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে পারছেন। যেকোনো বিষয়ের সত্যতা যাচাই করতে পারছেন। সেই উত্তর, ‘গ্রোক ৩’–এর দাবি অনুযায়ী, পুরোপুরি তথ্যনির্ভর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর ভারতের রাজনীতি আচমকাই চনমনে হয়ে উঠেছে এই ‘গ্রোক ৩’–এর রকমারি উদ্‌ঘাটনে। বিরোধীরা হাতে পেয়েছেন নতুন অস্ত্র। এত দিন ধরে যে দাবি তাঁরা জানিয়ে আসছিলেন, যে অভিযোগ করে আসছিলেন, অথচ সরকার ও দলের প্রচারে যা অসাড় প্রতিপন্নের চেষ্টা করা হয়েছে, ‘গ্রোক ৩’ আজ সে সবই সত্য বলে প্রকাশ করছে। আচম্বিত এই আঘাতে সরকার ও তার নিয়ন্ত্রকেরা বিব্রত ও ব্যতিব্যস্ত। কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

প্রশ্ন করা হয়েছিল-২০২৪ সালে নির্বাচনের আগে ‘অনুপ্রবেশকারী’ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে। জবাবে গত ১৬ মার্চ ‘গ্রোক ৩’ সেই কথাই জানায়, যা বিরোধীরা বলে আসছেন। গ্রোক ৩-এর উত্তর, ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ জাগাতে।

বিজেপির অন্দর মহলে দাবি উঠেছে, অবিলম্বে ‘গ্রোক ৩’ নিয়ন্ত্রণ করা হোক। কিন্তু, সেই দাবি মেনে সরকারের সক্রিয় হওয়াও সহজ নয়, যেহেতু সংস্থাটি মার্কিন ধনকুবের এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্কের।

‘এক্স’ ব্যবহারকারীরা কী ধরনের প্রশ্ন করছেন এবং ‘গ্রোক ৩’ তার উত্তরে কী জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে সেই আলোচনা। যেমন প্রশ্ন করা হয়েছিল—২০২৪ সালে নির্বাচনের আগে ‘অনুপ্রবেশকারী’ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে। জবাবে ১৬ মার্চ ‘গ্রোক ৩’ সেই কথাই জানায়, যা বিরোধীরা বলে আসছেন। গ্রোক ৩–এর উত্তর, ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ জাগাতে।

এই ধরনের প্রশ্ন ও জবাব আসতে থাকায় বিজেপির ‘ভক্ত কুল’ রে রে করে উঠেছে। এআইয়ের কট্টর সমালোচনা করে সমস্বরে দাবি তোলা হয়েছে, এই ধরনের ভুয়া প্রচার বা ‘ফেক নিউজ’ নিষিদ্ধ করা হোক। ‘গ্রোক ৩’ যদিও জানায়, তারা যা কিছু জানাচ্ছে, তা পুরোপুরি তথ্যের ওপর নির্ভরশীল।

সাভারকরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, ব্রিটিশদের কাছে সবচেয়ে বেশিবার কে ক্ষমা চেয়েছেন এবং কে তাদের কাছ থেকে মাসে ৬০ টাকা পেনশন নিতেন। জবাবে ‘গ্রোক ৩’ জানায়, ‘বিনায়ক দামোদর সাভারকর বন্দী থাকাকালে কারাগার থেকে মুক্তি পেতে ক্ষমা চেয়ে একাধিক চিঠি লিখেছিলেন। তিনিই ব্রিটিশদের কাছ থেকে মাসে ৬০ টাকা পেনশন পেতেন।

এত দিন ধরে যেসব বিষয় ভারতে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যে সব প্রশ্নের পুঙ্খানুপুঙ্খ জবাব কেউ পায়নি, বরং জানার আগ্রহ প্রকাশের জন্য আদালত শাস্তির বিধান দিয়েছেন, ‘গ্রোক ৩’ নির্দ্বিধায় সেসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।

যেমন একজন জানতে চান, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএসের ভূমিকা কী ছিল। উত্তরে বলা হয়, ‘গবেষণালব্ধ তথ্য অনুসারে আরএসএসের ভূমিকা ন্যূনতম অথবা শূন্য ছিল। কারও কারও দাবি ভূমিকা ছিল। কিন্তু প্রমাণ দেখাচ্ছে তা অতি নগণ্য। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়ে থাকতে পারেন। তবে সংগঠন হিসেবে নয়। ইতিহাস দেখাচ্ছে, আরএসএস ‘ভারত ছোড়ো’–এর মতো আন্দোলনে যোগ দেয়নি। আরএসএসের গতিবিধি ছিল সাংস্কৃতিক দিকে।’

হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের প্রবক্তা আরএসএসের বিনায়ক দামোদর সাভারকরের স্বাধীনতা সংগ্রামী চরিত্র নিয়ে বিতর্ক অন্তহীন। বিজেপি তাঁকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে জাহির করে, কংগ্রেসসহ অন্য অনেক দল তা অসত্য দাবি করে আসছে। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক ব্রিটিশদের কাছে তাঁর ‘ক্ষমা’ প্রার্থনা নিয়ে।

সাভারকরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, ব্রিটিশদের কাছে সবচেয়ে বেশিবার কে ক্ষমা চেয়েছেন এবং কে তাদের কাছ থেকে মাসে ৬০ টাকা পেনশন নিতেন। জবাবে ‘গ্রোক ৩’ জানায়, ‘বিনায়ক দামোদর সাভারকর বন্দী থাকাকালে কারাগার থেকে মুক্তি পেতে ক্ষমা চেয়ে একাধিক চিঠি লিখেছিলেন। তিনিই ব্রিটিশদের কাছ থেকে মাসে ৬০ টাকা পেনশন পেতেন। কারণ, তিনি তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে এই সত্যই সামনে আসে।’

একজন জানতে চান, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএসের ভূমিকা কী ছিল। উত্তরে বলা হয়, ‘গবেষণালব্ধ তথ্য অনুসারে আরএসএসের ভূমিকা ন্যূনতম অথবা শূন্য ছিল। কারও কারও দাবি ভূমিকা ছিল। কিন্তু প্রমাণ দেখাচ্ছে, তা অতি নগণ্য।

এই প্রশ্নের পিঠেই অন্য একজনের প্রশ্ন, মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরু কি কখনো ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন? তাঁরাও কি পেনশন নিতেন? ‘গ্রোক ৩’ জানায়, তাঁরা কখনো ক্ষমা চাননি। ক্ষমা চেয়ে চিঠি লেখেননি। গান্ধীজিকে কারাগারে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার টাকা দিত। নেহরু ও অন্য কংগ্রেস নেতাদেরও। কিন্তু তা পেনশন ছিল না। এটাই ইতিহাস।

বিজেপির আইটি সেল বহুদিন প্রচার করেছে, সোনিয়া গান্ধী নাকি ‘বার ড্যান্সার’ ছিলেন। ‘গ্রোক ৩’ সেই প্রচারে কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি। যেমন পায়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতারও। মোদি ও রাহুল গান্ধীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ‘গ্রোক ৩’ জানিয়েছে, ‘মোদির ডিগ্রি নিয়ে অনেক বছর ধরে বিতর্ক

চলছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালে জানিয়েছিল, উনি বিএ পাস। ডিগ্রি আসল। কিন্তু রেকর্ডে গরমিল দেখা যায়।’

প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য ডিগ্রি থাকা আবশ্যিক নয়। কিন্তু শপথ নিয়ে মিথ্যা বলা যায় না। অন্য এক ‘এক্স’ ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, ‘তথ্য ও গবেষণা দেখাচ্ছে, উনি ডিগ্রি দেখাতে ভয় পান। বিশ্ববিদ্যালয় রেকর্ড দেখায় না। বিচার চলছে। বিজেপি ওই দাবি সত্য বলে জাহির করে অথচ অন্যরা সন্দেহ করে। ২০২৫ সালেও বিষয়টি চর্চায় রয়েছে।

দিল্লি হাইকোর্টে গত ফেব্রুয়ারিতে মোদির ডিগ্রি সংক্রান্ত মামলায় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার যুক্তি, ১৯৭৮ সালে বিএ পাস ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর জনসাধারণকে দেখালে তা অন্যের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গের কারণ হবে। তাই, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই তথ্য তৃতীয় কাউকে জানাতে অপারগ!

মোদি, বিজেপি ও আরএসএসের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কারণও আছে। ‘গ্রোক ৩’–এর বক্তব্য অনুযায়ী, মোদি ভারতের সবচেয়ে বড় ‘সাম্প্রদায়িক’ নেতা। মোদি ও রাহুল গান্ধীর মধ্যে তুলনায় মোদি ‘সাম্প্রদায়িক’, রাহুল ‘সৎ’। কেন মোদি ‘সাম্প্রদায়িক’, তার ব্যাখ্যায় তারা গুজরাট দাঙ্গায় তাঁর ভূমিকা, মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলা, নানা হিন্দুত্ববাদী মন্তব্য ও রাজনীতির বিষয় টেনে এনেছে।

কেন মোদি সৎ নন, তা বলতে গিয়ে ‘গ্রোক ৩’ জনসাধারণের ধারণা, ঘটনাপ্রবাহ ও স্বচ্ছতার প্রসঙ্গ টেনে ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিলের কথা উত্থাপন করেছে। মোদির সামাজিকমাধ্যমের অনুসারী প্রসঙ্গে করা প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছে, ‘এক্স’–এ মোদির অনুসারীর সংখ্যা ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি। সেই দাবির ৬০ শতাংশ ভুয়া।

‘গ্রোক ৩’ অনুযায়ী, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর হাভার্ডের ডিগ্রি আছে। ক্যামব্রিজ থেকে ‘এম ফিল’ করেছেন। মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘অস্পষ্ট’। তাঁর দাবি, তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেছেন। কিন্তু সেই দাবি ঘিরে অনেক সন্দেহ। অনেক প্রশ্ন। অনেক বিবাদ।

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে ‘গ্রোক ৩’ এ কথাও জানিয়েছে, জওহরলাল নেহরু ১৯৪৬ সালে দেশকে ১৯৬ কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পত্তি দান করেছিলেন। সেটা ছিল তাঁর মোট সম্পত্তির ৯৮ শতাংশ। আজকের হিসেবে তার পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা!

সামাজিক মাধ্যমে ‘গ্রোক ৩’ নিয়ে চর্চার বহর দিন দিন বাড়লেও ভারতের বড় বড় দৈনিক তুলনায় নির্বিকার। কারণটি সহজবোধ্য। তবে রাজনীতিকেরা তাঁদের মতো করে বিষয়টি তুলে ধরছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য সাগরিকা ঘোষ গত রোববার ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘আমাকে তিষ্টোতে দিচ্ছে না। এত দিন ধরে ভক্ত কুল যা উগড়ে এসেছেন, ‘গ্রোক ৩’ তা দিনভর রাতভর সাবার করে চলেছে।’

ভারতের জনপ্রিয় ইউটিউবার ধ্রুব রাঠি ‘গ্রোক ৩’–এর এক মন্তব্য প্রসঙ্গে ‘এক্স’ এ লিখেছেন, ‘এত সত্যি বলতে নেই।’

মোদি ও রাহুল গান্ধীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ‘গ্রোক ৩’ জানিয়েছে, ‘মোদির ডিগ্রি নিয়ে অনেক বছর ধরে বিতর্ক চলছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালে জানিয়েছিল, উনি বিএ পাস। ডিগ্রি আসল। কিন্তু রেকর্ডে গরমিল দেখা যায়।

তবে সম্ভবত সবচেয়ে চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসের আইটি সেলের নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রিনাতে। ‘এক্স’–এ সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘পিএমওতে জরুরি মিটিং তলব করা হয়েছে। তাতে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। চর্চার বিষয় ‘গ্রোক ৩’। তথ্যমন্ত্রী গ্রোক নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা খাড়া করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব, ইলন মাস্কের বাচ্চাদের ন্যানির সঙ্গে আলোচনা শুরু হোক। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কটাক্ষ, এটা স্টারলিংকে ভারতে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার প্রতিদান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রোনোলজি বোঝান। বলেন, প্রথমে ট্রাম্প বেইজ্জত করলেন, এখন মাস্কের গ্রোক খেল দেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ তো আমার ডিগ্রি, জুমলা, ইংরেজদের সঙ্গে আরএসএসের গাঁটছড়া বাঁধা—সব কিছু ফাঁস করে দিচ্ছে! একটা সময় বৈঠক শেষ হয়।’

সুপ্রিয়া আরও লিখেছেন, ‘বাইরে থাকা ভক্তরা বললেন, মোদিজি, আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি মিথ্যে বলেছি, কিন্তু বুঝতে পারছি না কোথা থেকে এসে গ্রোক আমাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার কাছে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ পৌঁছে গেছে। তাতে লেখা, এটা ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত।’

সুপ্রিয়ার টুইটের শেষে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের ঢংয়ে ব্র্যাকেটে লিখেছেন, ‘এটা লেখকের কল্পনা।’

লড়াইটা বকলমে ইলন মাস্ক বনাম ভারত সরকার। কোথাকার জল কোথায় দাঁড়ায় সেটাই দেখার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ষ ট রমন ত র ইলন ম স ক স ব ধ নত স ভ রকর অন স র কর ছ ন র জন ত ৬০ ট ক সরক র প নশন সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে আরএসএস নিষিদ্ধের দাবি জানালেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে

ভারতের কংগ্রেস দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আবারও দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (আরএসএস) দেশে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, স্বয়ং সরদার বল্লভভাই প্যাটেল সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।

খাড়গে বলেছেন, বিজেপি সরকার ২০২৪ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তাই ওই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করতে হবে।

আজ শুক্রবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে খাড়গে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি আরএসএসের আদর্শকে ‘বিষের’ সঙ্গে তুলনা করেন।

খাড়গে বলেন, সরদার প্যাটেল বলেছিলেন, ‘সরকারি চাকরিতে থাকাকালে আরএসএসের জন্য কাজ করা উচিত নয়।’ কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘তিনি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএস এবং জামাত-ই-ইসলামীর কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। মোদি সরকার গত বছরের ৯ জুলাই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আমরা দাবি করছি, এই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করা হোক।’

বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। আজ তাঁর জন্মবার্ষিকী। ভারতে এবার বিজেপি সরকার দিনটিকে ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসেবে পালন করছে।

খাড়গে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আরএসএস মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু উদ্‌যাপন করেছিল, এমন কথা সরদার প্যাটেল একটি চিঠিতে লিখেছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে এই কট্টর হিন্দুবাদী গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যুক্তি দেন।

মল্লিকার্জুন খাড়গে জোর দিয়ে বলেন, সরদার প্যাটেল দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্বাস করতেন, সরদার প্যাটেলের অবদান ছিল অপরিমেয়। ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি আরএসএস সম্পর্কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আরএসএস গান্ধীজির মৃত্যু উদ্‌যাপন করেছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেছিল। এরপর সরকারের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’

খাড়গে বলেন, প্যাটেলের কাছে পৌঁছানো প্রতিবেদনে দেখা যায়, আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার মতাদর্শের কারণে দেশে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেটাই গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল।

বিজেপি অবশ্য কংগ্রেসের এই দাবির সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, কংগ্রেস এত দিন ধরে প্যাটেলের অবদানকে ‘উপেক্ষা’ করে এখন আরএসএসকে আক্রমণ করার জন্য তাঁর নাম ব্যবহার করছে।

খাড়গের নিজ রাজ্য কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে রাজ্য সরকার বিবাদে জড়িয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে আরএসএস নিষিদ্ধের দাবি জানালেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে