রাশিয়ার বুধবারের কিছু গণমাধ্যমের খবরের শিরোনাম বিবেচনা করে মস্কো ধারণা করতে পারে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে সর্বশেষ টেলিফোন কথোপকথন ভালোভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। অবশ্যই তা ক্রেমলিনের জন্য ভালো হয়েছে।

ইজভেস্তিয়ার খবরে বলা হয়েছে, পুতিন ও ট্রাম্প ইউক্রেন সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

কমসোমলস্কায়া প্রাভদা লিখেছে, পুতিন-ট্রাম্প দীর্ঘ ফোনালাপের রেকর্ড। পত্রিকাটির ওয়েবসাইট আরও বলা হয়েছে, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হয়, রাশিয়া এখানে একটি কূটনৈতিক বিজয় অর্জন করেছে।

দুই ঘণ্টার এই ফোনালাপের পর কেন রাশিয়ার কেউ কেউ ‘বিজয়’ দাবি করছেন? সম্ভবত এর কারণ শেষ পর্যন্ত, পুতিনকে ইউক্রেন বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কোনো বড় ছাড় দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়নি। বিপরীতে, তিনি কার্যত ট্রাম্পের তাৎক্ষণিক নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির ধারণা প্রত্যাখ্যান করতে সক্ষম হয়েছেন।

রাশিয়াকে তার পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করার জন্য আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার হুমকি দিয়ে মস্কোর ওপর চাপ দেওয়ার পরিবর্তে, মার্কিন প্রশাসন ক্রেমলিন নেতার প্রশংসা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেছেন, আমাদের দারুণ একটি ফোনালাপ হয়েছে।

ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন তার দেশকে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার আহ্বানে যা করেছেন তার জন্য আমি তার প্রশংসা করব।’

পুতিন নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের সময় শান্তি নিয়ে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে কিয়েভকে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করা। একই সঙ্গে ইউক্রেনে কোনো ধরনের সেনা সমাবেশের বিরোধিতার কথা বলেছেন তিনি। এ ধরনের পরিস্থিতিকে ব্যাপকভাবে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করার একটি উপায় হিসেবে দেখা হয়।

এসব শর্তে কিয়েভ রাজি হচ্ছে-এমটা ধারণা করা কঠিন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—কিন্তু মস্কো কি ট্রাম্প প্রশাসনকে শেষ পর্যন্ত এই শর্তগুলো গ্রহণযোগ্য বলে রাজি করাতে পারবে? আর যদি তাই হয়, তাহলে কি ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে সেগুলো মেনে নিতে বাধ্য করবে?

ইউক্রেনকে কোণঠাসা অবস্থায় রক্ষা করার চেয়ে মস্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে ট্রাম্পের অনেক কিছু লাভ করার আছে, ক্রেমলিন যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এ কথা বোঝাতে পারে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ