গত দুই দিনে (বুধ ও বৃহস্পতিবার) দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ২টি দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ১৪টি ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। তারা বলেছে, এই দুই দিনে চারটি ধর্ষণচেষ্টার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় ধর্ষণের পর একজন গৃহবধূকে হত্যার খবর পাওয়া গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়ে মহিলা পরিষদ বলেছে, সম্প্রতি নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। স্কুলের ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরাও দৈনন্দিন জীবনে নৃশংস সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। চলমান এসব সহিংসতার ঘটনায় নারী ও কন্যাশিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুনপল্লবীতে রাতে আটকে এক নারীকে ‘দলবদ্ধ ধর্ষণ’, দুজন গ্রেপ্তার১৮ মার্চ ২০২৫

মহিলা পরিষদ এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির মাধ্যমে নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে শূন্যসহিষ্ণুতার (জিরো টলারেন্স) নীতি গ্রহণ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, একই সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আশু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে মহিলা পরিষদ।

বিবৃতিতে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা ও অপতৎপরতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে মহিলা পরিষদ।

আরও পড়ুন‘ধর্ষণের’ শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে ৩ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেলে ৪ শিশু-কিশোরীসহ পাঁচজন ভর্তি৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী

গত মার্চে ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছে ১২৫ কন্যাসহ ১৬৩ জনকে। ১৮ কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দুই কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দুই কন্যা ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ৫৫ কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাম্প্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মোট ১৮৯ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩০ কন্যাসহ ৪৮ জন। তার মধ্যে তিন কন্যাসহ ১১ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। 
জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ২০৫ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৩ কন্যাসহ ৪৯ জন। তার মধ্যে ১৪ কন্যাসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাসহ দুইজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর ধারা জেন্ডার সমতা। এটি উপেক্ষা করা কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।

সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন ও সরাসরি নির্বাচন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।

পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৪টি। এর আগে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯৯ কন্যাশিশু।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনায় মহিলা পরিষদের উদ্বেগ-ক্ষোভ
  • মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী