ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন,পবিত্র হজ ও ওমরাহ পালনকে কেন্দ্র করে বিমানের টিকিটে সিন্ডিকেট করে বা গ্রুপ ভিত্তিক বুকিং দিয়ে আর দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।

শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বিমানের টিকিট নিয়ে অব্যবস্থাপনা, সিন্ডিকেটের খবর পত্র-পত্রিকায় এসেছে। ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় একটা নীতিমালা করা হয়েছে। এখন টিকিট করতে গেলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে করতে হবে এবং ৩ দিনের মধ্যে যদি তিনি টিকিট না কেনেন তা বাতিল হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, কোনো বৈদেশিক অনুদান ছাড়াই সরকার সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে ৩৫০টি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আরও ২১৪টি নির্মাণ করা হবে। অতীতে মসজিদের সাইট সিলেকশনে কিছু অনিয়ম ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যে মসজিদগুলো নির্মাণ করা হবে তা যথাযথভাবে সাইট সিলেকশন, ফিজিবিলিটি স্টাডি, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিজিটাল সার্ভেসহ যেখানে মসজিদের প্রয়োজন সেখানে করা হবে।

এর আগে দুপুর ১২ টায় কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নাম ফলক উন্মোচন করে ধর্ম উপদেষ্টা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হজ উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ