রূপায়ণ টাউন মসজিদে সংঘর্ষ ও হাতুড়িপেটা, আহত ৬
Published: 21st, March 2025 GMT
ফতুল্লায় একটি মসজিদের খতিবকে অপসারণ করাকে কেন্দ্র করে মসজিদের ভেতরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় দু'পক্ষের লোকজন চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি সহ একে অপরকে হাতুড়িপেটা করেন।
এতে খতিব সহ ছয়জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে ফতুল্লার ভুঁইগড় রূপায়ন টাউন জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যে মসজিদের ভেতরে সংঘর্ষ ও হাতুড়িপেটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রূপায়ন টাউনের বাসিন্দারা জানান, মসজিদের খতিব মাওলানা জামাল উদ্দিন বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তৎকালিন পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর থেকে তিনি খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
স¤প্রতি স্থানীয় বিএনপির দলীয় লোকজন নতুন করে মসজিদ পরিচালনা কমিটি গঠন করেন এবং জামাল উদ্দিনকে অপসারণ করে নতুন খতিব নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন।
তারা আরও জানান, বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাত দশটায় তারাবির নামাজ শেষে নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ খতিব জামাল উদ্দিনকে অপসারণের চিঠি দিলে পুরাতন কমিটির লোকজন এর প্রতিবাদ করেন। এসময় নতুন কমিটির লোকজন উত্তেজিত হয়ে তাদের উপর হামলা করলে দু'পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন মসজিদের ভেতরে চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি সহ একে অপরকে হাতুড়িপেটা করেন। মসজিদের দরজা জানালা ভাংচুরও করা হয়। এসময় নারী সহ বেশ কয়েকজন মুসুল্লি মিলে সংঘর্ষ থামানো চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এ ঘটনায় মসজিদের খতিব জামাল উদ্দিন সহ ছয়জন আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শহরের ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুরে জুম্মার নামাজের পরে আহতরা এ ঘটনার বিচার দাবি করলে মসজিদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ গিয়ে দু'পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরীফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমি থানা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। পরে উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করি।
এ ঘটনায় দু'পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে বিষয়টি সমাধানের পর্যায়ে আছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে মুসুল্লিদের একটি অংশ জানান, বিগত ১২ বছর যাবত রূপায়ণ টাউন মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন মাওলানা জামাল উদ্দিন। খতিব জামাল উদ্দিন রুপায়ণের উপদেষ্টা সাবেক কৃষকলীগ নেতা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নাজিম উদ্দীন চেয়ারম্যানের সাথে আতাত করে দীর্ঘদিন খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য ও ভুমিকা থাকার পরেও নাজিম চেয়ারম্যান এর সাথে সখ্যতা থাকার সুবাদে অনায়াসে খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সাধারণ মুসল্লিদের অভিযোগ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর নাজিম উদ্দীন চেয়ারম্যান পালিয়ে গেলে খতিবও লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। ৫ মাস পর হঠাৎ গত ১৪ মার্চ শুক্রবার কাউকে মুসল্লীদের না জানিয়ে আবার নামাজ পড়াতে আসেন। মুসল্লীরা তার এমন আচরণ মেনে নিতে পারেনি। তার বিতর্কিত ভুমিকার জন্য তার অপসারণ দাবী করে সাধারণ মুসল্লিরা। তারই ধারাবাহিকতায় মসজিদ কমিটি তাকে সন্মানের সহিত অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটির এই সিদ্ধান্ত খতিব আঁচ করতে পেরে গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতেই রুপায়ণ টাউনে চলে আসে দাওয়াতের নাম করে। সাধারণ মুসল্লি ও কমিটির পক্ষে অপসারণের বিষয়টি অবহিত করতে গেলে খতিব নিজেই উস্কানীমূলক কথা বলে এবং সাথে থাকা স্বৈরাচারের দোসর নাজিম চেয়ারম্যান এর অনুগত লোকজন এবং আজমেরী ওসমানের ক্যাডার রাজ কামরুজ্জামান সহ অন্যন্য কিছু লোক মিলে উপদেষ্টা জহিরুল ইসলামের উপর চড়াও হয় এবং তাকে লাঞ্চিত করে। একপর্যায়ে বেধড়ক মারধর করে। জহিরুল ইসলামের চিৎকারে প্রথমে এগিয়ে আসেন রুপায়ণের বাসিন্দা আবু সাইদ পাটোয়ারী রাসেল। তাকেও মারধর করে হামলাকারীরা। পরে শত শত মুসল্লিরা এগিয়ে আসলে খতিব জামাল উদ্দিন তার পালিত লোকজন নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে আজমেরীর ক্যাডার রাজ, কামরুজ্জামান, সাইফুল ইসলাম মামুনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০ জনকে আসামি করে করে ফতুল্লা থানায় হত্যা চেস্টার অভিযোগ দেয়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ স ঘর ষ মসজ দ ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক।
এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”
বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।”
চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”
ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।”
হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে।
গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।
কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”
ঢাকা/রাঙামাটি/এস