রূপায়ণ টাউন মসজিদে সংঘর্ষ আহত ৬
Published: 22nd, March 2025 GMT
ফতুল্লায় একটি মসজিদের খতিবকে অপসারণ করাকে কেন্দ্র করে মসজিদের ভেতরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় দু'পক্ষের লোকজন চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি সহ একে অপরকে কাঠের ডাসা দিয়ে আঘাত করেন।
এতে খতিব সহ ছয়জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে ফতুল্লার ভুঁইগড় রূপায়ন টাউন জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যে মসজিদের ভেতরে সংঘর্ষ এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রূপায়ন টাউনের বাসিন্দারা জানান, মসজিদের খতিব মাওলানা জামাল উদ্দিন বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তৎকালিন পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর থেকে তিনি খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
স¤প্রতি স্থানীয় বিএনপির দলীয় লোকজন নতুন করে মসজিদ পরিচালনা কমিটি গঠন করেন এবং জামাল উদ্দিনকে অপসারণ করে নতুন খতিব নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন।
তারা আরও জানান, বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাত দশটায় তারাবির নামাজ শেষে নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ খতিব জামাল উদ্দিনকে অপসারণের চিঠি দিলে পুরাতন কমিটির লোকজন এর প্রতিবাদ করেন। এসময় নতুন কমিটির লোকজন উত্তেজিত হয়ে তাদের উপর হামলা করলে দু'পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন মসজিদের ভেতরে চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি সহ একে অপরকে হাতুড়িপেটা করেন। মসজিদের দরজা জানালা ভাংচুরও করা হয়। এসময় নারী সহ বেশ কয়েকজন মুসুল্লি মিলে সংঘর্ষ থামানো চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এ ঘটনায় মসজিদের খতিব জামাল উদ্দিন সহ ছয়জন আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শহরের ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুরে জুম্মার নামাজের পরে আহতরা এ ঘটনার বিচার দাবি করলে মসজিদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ গিয়ে দু'পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরীফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমি থানা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। পরে উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করি।
এ ঘটনায় দু'পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে বিষয়টি সমাধানের পর্যায়ে আছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে মুসুল্লিদের একটি অংশ জানান, বিগত ১২ বছর যাবত রূপায়ণ টাউন মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন মাওলানা জামাল উদ্দিন। খতিব জামাল উদ্দিন রুপায়ণের উপদেষ্টা সাবেক কৃষকলীগ নেতা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নাজিম উদ্দীন চেয়ারম্যানের সাথে আতাত করে দীর্ঘদিন খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য ও ভুমিকা থাকার পরেও নাজিম চেয়ারম্যান এর সাথে সখ্যতা থাকার সুবাদে অনায়াসে খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সাধারণ মুসল্লিদের অভিযোগ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর নাজিম উদ্দীন চেয়ারম্যান পালিয়ে গেলে খতিবও লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। ৫ মাস পর হঠাৎ গত ১৪ মার্চ শুক্রবার কাউকে মুসল্লীদের না জানিয়ে আবার নামাজ পড়াতে আসেন। মুসল্লীরা তার এমন আচরণ মেনে নিতে পারেনি। তার বিতর্কিত ভুমিকার জন্য তার অপসারণ দাবী করে সাধারণ মুসল্লিরা। তারই ধারাবাহিকতায় মসজিদ কমিটি তাকে সন্মানের সহিত অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটির এই সিদ্ধান্ত খতিব আঁচ করতে পেরে গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতেই রুপায়ণ টাউনে চলে আসে দাওয়াতের নাম করে। সাধারণ মুসল্লি ও কমিটির পক্ষে অপসারণের বিষয়টি অবহিত করতে গেলে খতিব নিজেই উস্কানীমূলক কথা বলে এবং সাথে থাকা স্বৈরাচারের দোসর নাজিম চেয়ারম্যান এর অনুগত লোকজন এবং আজমেরী ওসমানের ক্যাডার রাজ কামরুজ্জামান সহ অন্যন্য কিছু লোক মিলে উপদেষ্টা জহিরুল ইসলামের উপর চড়াও হয় এবং তাকে লাঞ্চিত করে। একপর্যায়ে বেধড়ক মারধর করে। জহিরুল ইসলামের চিৎকারে প্রথমে এগিয়ে আসেন রুপায়ণের বাসিন্দা আবু সাইদ পাটোয়ারী রাসেল। তাকেও মারধর করে হামলাকারীরা। পরে শত শত মুসল্লিরা এগিয়ে আসলে খতিব জামাল উদ্দিন তার পালিত লোকজন নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে আজমেরীর ক্যাডার রাজ, কামরুজ্জামান, সাইফুল ইসলাম মামুনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০ জনকে আসামি করে করে ফতুল্লা থানায় হত্যা চেস্টার অভিযোগ দেয়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ স ঘর ষ মসজ দ ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
জেলা কৃষকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ডা. শাহীন মিয়া।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ডা. শাহীন মিয়া আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
এসময়ে উপস্থিত ছিলেন, জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব আলম মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল আরমান, ফজলু মেম্বার, মনির মল্লিক, শাহাদাত হোসেন, ওবায়দুর রহমান, শাহ আল বেপারী, সেলিম হোসেন দিপু।
সংবাদ সম্মেলনে শাহীন মিয়া বলেন, কোন চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও স্বৈরাচারের দোসর এদের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র যেকোনো অঙ্গ সংগঠনের পদে থাকতে পারে না। নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি হিসেবে আমার সংগঠনে যারা চাঁদাবাজ, দখলবাজ স্বৈরাচারের দোসর আমি তাদেরকে বহিষ্কার করেছি।
আওয়ামীলীগের সাথে শাহীনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনাদের ব্যাপারে পাল্টা তিনি বলেন, রূপগঞ্জ থানার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর, দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণে তাকে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ সালে সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এছাড়াও বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনে নজরুলের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা ছিল না। সে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম হত্যা মামলার আসামি রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিনের যোগসাজসে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের একাধিক মৌজার আবাদী জমিতে বালি ভরাট করে সাধারণ কৃষকের দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছিল।
এছাড়াও অসহায় ও সাধারন মানুষের বসতবাড়ি সহ জবরদখল করে নেয় তারা। নজরুল দোসরদের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নির্যাতন করেছিল। এভাবে বিগত ১৭ বছরে স্বৈরাচার সরকারের আস্থাভাজন হয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন এই নজরুল। সে হলো মৌসুমী পাখি।
তিনি বলেন, ১৭ টি বছর জুলুম নির্যাতন সহ্য করে এই নারায়ণগঞ্জে কৃষক দলকে হাতের মুঠোয় রেখেছি আজ সেই কৃষক দলের ভাবমূতি ক্ষুন্ন করতে এই নজরুল স্বৈরাচারের সাথে হাত মিলিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের মানহানি করেছে।
আমি এরই মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার বিরুদ্ধে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। বিষয়টি আমি আমার হাইকমান্ডকে অবগত করেছি।
তিনি আরও বলেন, রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সার্জন মোমেনকে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দলীয় শৃংখল বঙ্গের দায়ে ১০ই এপ্রিল সভাপতি পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। সে বিগত সতেরো বছর নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে। ৫ ই আগস্টের পর ৪০ বিঘা জমির উপর মাছের প্রজেক্ট দখল করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মোমেন।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময় সে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তার নিজের জন্য। এখনো সে এলাকায় সাধারণ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে এর যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে এসেছে এবং অনেক সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। যে সমস্ত মানুষ কোন দল করে না দল বুঝেনা। এ সমস্ত অভিযোগের কারণে তাকে তার পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে নজরুলসহ কৃষকদলের বেশ কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় শাহীনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনকে টাকার বিনিময়ে পুনর্বাসনসহ বেশ কিছু অভিযোগ আনেন তারা।