কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রদলের স্থানীয় এক নেতা নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের চাতল বাগহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আশিক খান (২২) মুমুরদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মালদ্বীপপ্রবাসী। তাঁর বাড়ি ইউনিয়নের চাতল গ্রামে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আলী হায়দার ও আবদুল হান্নান সরকার নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাতল বাগহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে দেড় যুগ ধরে একাধিক পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নুরুজ্জামান চন্দন এবং উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আশিকুজ্জামান নজরুল পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হেমায়েত হোসেন অ্যাডহক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে স্থানীয় তিনজনের প্রস্তাব করে বোর্ডে পাঠান। নামের সিরিয়াল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় দুই ব্যক্তি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বেলা দুইটার দিকে ঢাকা বোর্ডের একটি দল তদন্ত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে আসে। এই তথ্য উভয় পক্ষ আগ থেকে জানত। এ নিয়ে উভয় পক্ষের কয়েক শ লোক সকাল থেকে কলেজের আশপাশে অবস্থান নেন। তদন্ত চলার একপর্যায়ে নুরুজ্জামান চন্দন ও আশিকুজ্জামান নজরুল পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় দায়ের কোপে ছাত্রদল নেতা আশিক খান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হেমায়েত হোসেন গুরুতর আহত হন। দুজনকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে আশিক মারা যান। গুরুতর আহত হেমায়েত হোসেনকে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা আশিকের লাশ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ করেন এবং থানায় গিয়ে বিচার দাবি করেন। নিহত আশিক হলেন নুরুজ্জামান চন্দন পক্ষের।

হোসেনপুর-কটিয়াদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.

তোফাজ্জল হোসেন বলেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আশিক নামের একজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল স ঘর ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ