বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। প্রেমিকের মৃত্যুর শোক পালনেরও সুযোগ পাননি অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী। বরং তাকে ২৭ দিন কারাভোগ করতে হয়। মূলত, ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) অভিযোগের কারণে দুর্বিষহ সময় কাটান এই অভিনেত্রী ও তার পরিবার।

দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর সেই সিবিআই এই মামলার ক্লোজার রিপোর্ট দাখিল করেছে। তাতে রিয়া চক্রবর্তীকে ক্লিন চিট (নির্দোষ) দিয়েছে সিবিআই।

রিয়া চক্রবর্তীর আইনজীবী সতীশ মনোশিন্ডে বলেন, “প্রায় সাড়ে চার বছর পর সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনায় ক্লোজার রিপোর্ট দাখিল করেছে সিবিআই। প্রতিটি দিক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে মামলাটি বন্ধ করে দিয়েছে, এজন্য সিবিআইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যে পরিমাণ মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক ছিল। নির্দোষ মানুষদের ক্রমাগত তাড়া তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের সামনে নিয়ে যায় মিডিয়া। আশা করব, এর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”

আরো পড়ুন:

‘ডিভোর্সের পর বাচ্চাদের সঙ্গে ওদের বাবার সম্পর্ক নষ্ট করিনি’

রাকেশ পান্ডে মারা গেছেন

ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে দুটি মামলার ক্লোজার রিপোর্ট দাখিল করেছে সিবিআই। মুম্বাইয়ের একটি আদালতে এসব প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে— সুশান্তর মৃত্যুর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুশান্তের মৃত্যুর পর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনে প্রয়াত অভিনেতার পরিবার। পাটনায় প্রথমে এই অভিযোগ করেন সুশান্তের বাবা কে.

কে. সিং। পরে বিহার পুলিশের কাছ থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয়।

সিবিআইয়ের ক্লোজার রিপোর্টের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তথ্য হলো— এক. সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যা করেছেন। দুই. রিয়া চক্রবর্তী ও তার পরিবার নির্দোষ। তিন. এই মামলায় কোনো ক্রিমিনাল অ্যাঙ্গেল বা ষড়যন্ত্র পায়নি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। চার. এআইআইএমএম ফরেনসিক দলও খুনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। পাঁচ. সোশ্যাল মিডিয়ার চ্যাটগুলো তদন্তের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু টেম্পারিংয়ের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

২০২০ সালের ১৪ জুন বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় সুশান্তের মৃতদেহ। এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর হতবাক হয়ে যায় তার ভক্ত-অনুরাগীরা। প্রথমেই আঙুল ওঠে রিয়ার বিরুদ্ধে। কারণ বান্দ্রার সেই ফ্ল্যাটে একসঙ্গে থাকতেন সুশান্ত ও রিয়া। কিন্তু সুশান্তর মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাদের বিচ্ছেদ হয়। ক্লোজার প্রতিবেদনও জানানো হয়েছে, ঘটনার দিন ফ্ল্যাটে ছিলেন না রিয়া।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া

ঢাকা/শান্ত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র র পর ব স ব আই তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ