ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রমজান মাস। গোটা মাস জুড়েই সুবহে সাদিকের আগে সেহরি এবং সূর্যাস্তের পর ইফতার করে থাকেন মুসলিমরা। আর গ্রামের মুসলমানরা সেহরির জন্য যাতে সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে চেষ্টার কোনো কমতি নেই স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারের।  

গোটা গ্রামের হিন্দুরা যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকে, তখন ওই রমজান মাসে ঘুমকে বিলাসিতা হিসাবেই মনে করে উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলার ছোট গ্রাম ‘কৌরিয়া’র হিন্দু ধর্মাবলম্বী গুলাব যাদবের পরিবার।  

৪৫ বছর বয়সী গুলাব যাদব এবং তার ১২ বছর বয়সী ছেলে অভিষেক। রমজান মাসে ঘুম পরিত্যাগ করে 
প্রতিদিন রাত ১টায় হাতে টর্চ এবং লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাবা ও ছেলে। পায়ে হেঁটে গ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে যেতেই প্রতিটি মুসলিম বাড়িতে থামেন এবং হাঁক দেন। ওই পরিবারগুলো সেহরির জন্য জেগে আছে এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই বাপ-বেটা পরের দরজায় গিয়ে হাঁক দেয়। 

আর এভাবেই গত ৫০ বছর ধরে এই গুরু দায়িত্ব পালন করে আসছে যাদবের পরিবার। ১৯৭৫ সালে গুলাবের বাবা চিরকিত যাদবের শুরু করা একটি ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন পরবর্তী প্রজন্ম। 

অতীতে রমজানের সময় বেশিরভাগ মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার করে রোজাদারদের জাগিয়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়ে আসছিল, কিন্তু শব্দদূষণ নিয়ে শীর্ষ আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশের ফলে ধর্মীয় স্থানগুলোতে শব্দদূষণের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। 

সেক্ষেত্রে, যাদবের এই নিবেদিত প্রচেষ্টা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিজের শৈশবের কথা স্মরণ করে গুলাব যাদব বলেন, ছোটবেলায় তিনি কখনই পুরোপুরি বুঝতে পারেননি কেন তার বাবা রাতে বাইরে যেতেন, সেহরির জন্য লোকদের জাগিয়ে তুলতেন। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে এই ঐতিহ্যের পিছনের গভীর অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন গুলাব। তিনি বলেন, “এখন আমি এটা করে অনেক শান্তি পাই।” 

পেশায় একজন দিনমজুর গুলাব যাদব বছরের বেশিরভাগ সময় দিল্লিতে কাজ করে কাটান। কিন্তু রমজান এলে তিনি তার পরিবারের পাঁচ দশকের পুরোনো রীতিনীতি বজায় রাখার জন্য তার গ্রামে ফিরে আসেন। এমনকি গুলাবের বাবা যেমন তার জন্য করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই তিনিও তার সন্তান অভিষেকের মধ্যেও সেই দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলার প্রত্যাশা নিয়ে চলেছেন। প্রতি রাতে, তিনি অভিষেককে সাথে নিয়ে বের হন এবং তাকে মুসলিমদের পরিবারের পবিত্র বিভিন্ন রীতিনীতির ঐতিহ্যের গুরুত্ব শেখান। গুলাবের অভিমত, “বাবার পর আমি যেমন এই দায়িত্বটা পালন করে আসছি, তেমনি আমি চাই আমার পরে আমার ছেলেও এই কাজটি চালিয়ে যাক।” 

গুলাব যাদব জানান, “বাবা মারা যাওয়ার পর, আমার বড় ভাই কয়েক বছরের জন্য এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে সেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর থেকে আমি সেই দায়িত্ব গ্রহণ করে চলেছি এবং প্রতি রমজান মাসে আমি এই কাজটি করার জন্যই গ্রামে ফিরে আসব।” 

স্বাভাবিকভাবেই একদিকে গুলাব যাদবের এই কর্মকাণ্ড বা প্রচেষ্টা যেমন গ্রামের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে তেমনি তার মুসলিম প্রতিবেশীরাও তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে দেখে আসছে। যাদবের প্রতিবেশী শফিক জানান, “সেহরির জন্য মানুষকে জাগিয়ে তোলা একটি মহৎ কাজ। গুলাব ভাই নিশ্চিত করেন যে সেহরিতে অংশ নিতে কেউ যেন বাদ না পড়েন। গোটা গ্রামে প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুরে দেখার পর ফের আরেক রাউন্ড ঘুরে দেখে নিশ্চিত করেন যে তারা সবাই সেহরি খেয়েছে কিনা। এর চেয়ে পবিত্র আর কী হতে পারে?” 

যাদবের কাজকে প্রশংসা করে শফিকের প্রশ্ন,  যখন গীতা এবং কোরআন- উভয়ই প্রেমের বার্তা দেয়, তখন হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে কেন বিভেদ থাকবে? তার অভিমত, যেহেতু রমজান ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ, তাই পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখতে সাহায্য করে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের একটি অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গুলাব যাদব।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রমজ ন ম স র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের যুদ্ধক্ষমতা সীমিত করতে চান মার্কিন সিনেটর

এক মার্কিন ডেমোক্র্যাট সিনেটর আজ সোমবার একটি আইন প্রস্তাব করেছেন, যাতে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে না পারেন। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইন দীর্ঘদিন ধরেই হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা আবার কংগ্রেসের হাতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে আসছেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, ২০২০ সালে, সিনেটর কেইন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনায় ট্রাম্পের ক্ষমতা সীমিত করার জন্য একই ধরনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সেই প্রস্তাব সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ—উভয় কক্ষেই পাস হয় এবং কিছু রিপাবলিকান সদস্যের সমর্থনও পেয়েছিল।

তবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভেটো ঠেকানোর মতো প্রয়োজনীয় ভোট পাওয়া যায়নি বলে সেটি কার্যকর হয়নি।

আরও পড়ুনআরও ৩৬টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন১৯ ঘণ্টা আগে

কেইন বলেছেন, তাঁর সর্বশেষ যুদ্ধক্ষমতাসম্পর্কিত প্রস্তাবটি এ বিষয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণা করার একমাত্র ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে, প্রেসিডেন্টের হাতে নয়। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো ধরনের শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অবশ্যই যুদ্ধ ঘোষণা বা সামরিক শক্তি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট অনুমোদন থাকতে হবে।

এক বিবৃতিতে সিনেটর কেইন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করা উপযুক্ত নয়, যদি না সেই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য একেবারেই অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি অনন্তকাল চলা সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে।’

মার্কিন আইনে যুদ্ধক্ষমতাসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো ‘প্রিভিলেজড’ হিসেবে বিবেচিত হয়, অর্থাৎ সিনেট বাধ্য থাকবে বিষয়টি দ্রুত আলোচনায় আনতে এবং ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে।

গত শুক্রবার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ইরানে হামলা চালায়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করে দেওয়া। অপর দিকে, ইরান, যাদের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে, তারা ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে এর জবাব দেয়।

উভয় দেশই তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে। ফলে বেসামরিক নাগরিকেরা নিহত ও আহত হচ্ছেন। এতে কানাডায় চলমান বিশ্বনেতাদের বৈঠকে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে যে এই দুই পুরোনো শত্রুর মধ্যে চলমান সবচেয়ে বড় লড়াই বিস্তৃত আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

ট্রাম্প একদিকে ইসরায়েলের হামলাকে প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে ইরানের সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র এ হামলায় অংশ নিয়েছে। তবে তিনি তেহরানকে সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে প্রতিশোধের পরিধি বাড়ানো উচিত হবে না।

গতকাল রোববার কানাডায় সম্মেলনের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি পরিস্থিতি শান্ত করতে কী করছেন? তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আশা করি একটা সমঝোতা হবে। আমার মনে হয় এখন সমঝোতার সময় এসেছে। তবে কখনো কখনো ওদের নিজের মধ্যে লড়ে নিতে হয়।’

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে ‘নো কিংস’ ব্যানারে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ