রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। সোমবার তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল কৃষ্ণসাগরে সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি। বড় ধরনের যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আগে আংশিক যুদ্ধবিরতির বিষয় নিয়ে এগোনোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তাঁরা।

রোববার সৌদি আরবে ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একে ‘শাটল কূটনীতি’ বলে মন্তব্য করা হয়। দুটি বিবদমান পক্ষের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ যখন স্বেচ্ছায় দুই পক্ষেরই প্রতিনিধি হিসেবে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা চালায়, তখন সেটাকে ‘শাটল কূটনীতি’ বলে।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইল ওলাৎজ রোববার সিবিএস নিউজের ফেস দ্য নেশন অনুষ্ঠানে বলেন, রিয়াদে একই হোটেলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে। কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কর্মকর্তারা দুই দেশের নিয়ন্ত্রণরেখা ঠিক করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। এ আলোচনার মধ্যেই স্থান পাবে যাচাই উদ্যোগ, শান্তি রক্ষা ও যে স্থানে আছে, সেখানে স্থিতিশীল করে রাখার বিষয়টি।

ওলাৎজ আরও বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন থেকে তুলে নেওয়া শিশুদের ফেরত দেওয়ার বিষয়টিও।

রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা জোরদার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপ করেন। ওই ফোনালাপের ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবে উভয় পক্ষের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়গুলো ঠিক করতে বৈঠক হচ্ছে।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অংশ নিচ্ছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালক অ্যান্ড্রু পিক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাইকেল অ্যান্টন। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের আলোচনার উদ্দেশ্য কৃষ্ণসাগরে সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো। এতে ওই নৌপথে নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচল করতে পারবে। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে নৌপথে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বড় ধরনের কোনো সংঘাত ঘটেনি।

আলোচনায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে অংশ নিয়েছেন সাবেক কূটনীতিক গ্রেগরি কারাসিন ও ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের পরিচালকের উপদেষ্টা সের্গেই বেসেডা।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যে আলোচনা চলছে, তাতে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতিতে পুতিনের যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে তিনি সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করেছেন। শনিবার ট্রাম্প বলেন, সংঘাত ও উত্তেজনা আরও ছড়ানোর বিষয়টি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

অবশ্য ইউক্রেনের মিত্র ও ইউরোপীয় অধিকাংশ দেশ যুদ্ধবিরতিতে পুতিনের ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সন্দিহান। তাদের মতে, ২০২২ সালে ইউক্রেনের হামলার সময় থেকে পুতিন যেসব দাবি করেছেন, তা থেকে তিনি বিন্দুমাত্র সরে আসেননি।

পুতিনের দাবি, তিনি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবেন, তবে এর জন্য ইউক্রেনকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা ছাড়তে হবে। এ ছাড়া যেসব এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখান থেকে ইউক্রেনের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। উল্লেখ্য, গত তিন বছরে ইউক্রেনের এক–পঞ্চমাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, আলোচনার মূল লক্ষ্য হবে কৃষ্ণসাগরে নৌযানের নিরাপত্তা–সম্পর্কিত উদ্যোগের সম্ভাব্য বাস্তবায়নের সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখা।

এর আগে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি নিয়ে চুক্তি হয়। ২০২৩ সালে রাশিয়া ওই চুক্তি থেকে বের হয়ে যায়।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ সৌদি আরবে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচনায় জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এ মাসের শুরুতে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি পশ্চিমা মিত্রদের পুতিনকে নিয়ে উদ্বেগে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, প্রতিবেশী কোনো দেশে পুতিন হামলা করবেন না। উইটকফ বলেন, ‘পুরো ইউরোপ পুতিন নিতে চান, এমন কিছু আমি দেখি না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে পরিস্থিতি ছিল, এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও ইউক র ন র র কর মকর ত র ব ষয়ট কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আমদানি বৃদ্ধি ইতিবাচক, ধারাবাহিকতা থাকতে হবে

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার হারে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটিকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তবে তিন মাসের চিত্র দিয়ে সামগ্রিক অবস্থা এখনো মূল্যায়ন করার সময় হয়নি।

মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে হঠাৎ প্রায় ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এটা সুখবর হলেও কোনো বড় প্রকল্পের মালামাল আমদানিতে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি সত্যিকারের নতুন নতুন কারখানার যন্ত্রপাতি আমদানির মাধ্যমে এ প্রবৃদ্ধি ঘটে, তাহলে তা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ধারাবাহিকতা থাকলেই বলা যাবে, দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। বিনিয়োগ হলে সামনে কর্মসংস্থানও বাড়বে। আর তাতে অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার হবে।

মূলধনি যন্ত্রপাতির মতো ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার হারও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাসের যে তুলনা করে দেখিয়েছে, তাতে ঋণপত্র খোলার হার ২০ শতাংশ বেড়েছে।

সব মিলিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা আগামী কয়েক মাস অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।

মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার, পরিচালক, টি কে গ্রুপ

সম্পর্কিত নিবন্ধ