রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি তার সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রে দাম কমিয়েছে ১০ শতাংশ। তারা বলছে, এতে দেশে ইন্টারনেট–সেবার দাম কমে আসবে। টেলিকম খাতের বিভিন্ন অপারেটর বলছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের দাম কমে আসতে পারে। তবে সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি থেকে ব্যান্ডউইডথ নেওয়া অপারেটররা বলছে, গ্রাহক পর্যায়ে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম।

গত শনিবার কোম্পানির বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইআইজি) পর্যায়ে সব ব্যান্ডউইডথের জন্য দাম ১০ শতাংশ কমে আসবে। এই সিদ্ধান্ত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

গ্রাহক যে পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ পেয়ে থাকেন, সেখানে ভলিউম হয়তো কিছু বাড়তে পারে। আর দামের প্রভাব মূলত বড় প্যাকেজের ওপর পড়তে পারে। ইমদাদুল হক, সভাপতি, আইএসপিএবি

সরকারি প্রতিষ্ঠান তো দাম কমাল, কিন্তু গ্রাহক এর সুবিধা কতটা পাবেন, ইন্টারেনেটের দাম আসলেই কমে আসবে কি না—এসব নিয়ে আইআইজি, আইএসপি ও মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে কথা হয়।

বাংলাদেশে ব্যান্ডউইডথ আসে দুইভাবে। সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি সমুদ্রপথে ব্যান্ডউইডথ আমদানি করে। আর ইন্টারন্যাশনাল টেলিস্ট্রেরিয়াল কেব্‌ল (আইটিসি) ভারত থেকে আমদানি হয়। দেশে মাসে ব্যান্ডউইডথ চাহিদা ৬ হাজার জিবিপিএস। যার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ব্যান্ডউইডথ আসে আইটিসির মাধ্যমে। বাকিটা সাবমেরিন হয়ে। তবে সরকার মার্চ থেকে ব্যান্ডউইডথ আমদানি আইটিসির জন্য ৫০ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে।

সাবমেরিন বা আইটিসি থেকে ব্যান্ডউইডথ নিয়ে থাকে আইআইজি অপারেটররা। যাদের কাছ থেকে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও মোবাইল অপারেটররা ব্যান্ডউইডথ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা দেয়; অর্থাৎ সাবমেরিন কেব্‌লের ১০ শতাংশ দাম কমার প্রভাব সরাসরি আইআইজির কাছে যাবে। বিষয়টি নিয়ে আইআইজিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, লাস্ট মাইল গ্রাহক এ সুবিধা পাবেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাবমেরিন কেব্‌লের ব্যান্ডউইডথ ভলিউমের ভেদে প্রতি এমবিপিএস ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করে, যা আইটিসি নেয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। আবার সরকারের নতুন নীতি অনুযায়ী সাবমেরিনের ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার বাড়বে; অর্থাৎ বেশি দামে এখন তাদের ব্যান্ডউইডথ কিনতে হবে সাবমেরিন থেকে।

আইআইজিরা বলছেন, তাঁদের সব খরচের মাত্র ১০ শতাংশ যায় ব্যান্ডউইডথের পেছনে। ফলে সার্বিক দিক থেকে দাম না কমালে এবং সরকারের ভ্যাট–ট্যাক্স নীতির পরিবর্তন না হলে গ্রাহক পর্যায়ে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।

সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভলিউমের ওপর তাঁদের দাম কমবেশি হয়ে থাকে এবং ব্যান্ডউইডথের মান ভালো। এ ছাড়া ব্যান্ডউইডথের পাশাপাশি সব ধরনের সেবার দামও কমানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে গ্রাহক এর সুফল পাবেন বলে তিনি জানান।

দেশের ইন্টারনেট গ্রাহক সবচেয়ে বেশি মুঠোফোন অপারেটরে। সাবমেরিনের দাম কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহক এর সুফল পাবেন। যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দাম কমার বিষয়টি আইআইজি পর্যায় থেকে হলে তা গ্রাহকের ওপর প্রভাব পড়বে বলে জানান আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহক যে পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ পেয়ে থাকেন, সেখানে ভলিউম হয়তো কিছু বাড়তে পারে। আর দামের প্রভাব মূলত বড় প্যাকেজের ওপর পড়তে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র দ ম কম গ র হক এ ইন ট র সরক র র ওপর আইট স

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারের প্রস্তাবিত নীতিতে ইন্টারনেটের দাম ২০% বাড়বে: আইএসপিএবি

সরকারের প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিভিন্ন ফি ও চার্জ আরোপের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার খরচ আরও অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলছেন দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতারা।

ইন্টারনেটের দাম বাড়ার বিষয়টি দায়িত্বশীল নেতৃত্বের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সেবাদাতারা।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের (এফটিএসপি) জন্য একটি গাইড লাইনের খসড়া করেছে। এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে আইএসপিএবি।

নতুন গাইডলাইনে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের জন্য ১ শতাংশ দিতে হবে। এ ছাড়া এফটিএসপি অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বাড়বে।

আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে সরকার তার উদ্দেশ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং জনগণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। সরকার ভুল পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

আমিনুল হাকিম বিদ্যমান নীতির সঙ্গে প্রস্তাবিত নীতির তুলনামূলক উপস্থাপনা তুলে ধরে বলেন, বিদ্যমান নীতিতে সরকার এই খাত রেভিনিউ শেয়ারিং, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল এবং ভ্যাটসহ ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ পায় কিন্তু নতুন নীততে তা ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে। সরকারি নীতিতে শহর ও গ্রামে বৈষম্য বাড়বে।

আমিনুল হাকিম বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসা সরকার বৈষম্য উপহার দিচ্ছে। সরকার একদিকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলছে, অন্যদিকে নিজেরা দাম বাড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্টারলিংকের জন্য সরকার লাইসেন্স ফি ধরেছে ১০ হাজার ডলার অর্থাৎ ১২ লাখ টাকা। কিন্তু দেশের আইএসপিদের জন্য তা ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, স্টারলিংককে এত সুবিধা দেওয়ার কারণ কি?

সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি বলেছে, প্রস্তাবিত খসড়া গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস এবং লাস্ট মাইল ফাইবার সংযোগের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেওয়ার স্পষ্ট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা দেশীয় এবং নিজস্ব বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আইএসপিগুলোর জন্য চরম অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া বড় প্রভাব পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারের প্রস্তাবিত নীতিতে ইন্টারনেটের দাম ২০% বাড়বে: আইএসপিএবি