৪০ টাকায় ভারতীয় থ্রি-পিস, ৬৫ টাকায় পাকিস্তানি পাঞ্জাবি আসে দেশে
Published: 25th, March 2025 GMT
উন্নত মানের ভারতীয় থ্রি-পিসের দাম মাত্র ৪৮ টাকা। সাধারণ মানের থ্রি-পিসের দাম আরও কম। মাত্র ৪০ টাকা। শুধু সালোয়ার-কামিজ হলে আরও কমে যায় দাম। মাত্র ১৮ টাকা। মেয়েদের ‘টপস’ মাত্র ১১ টাকা। শাড়ির দামও বেশি নয়। উন্নত মানের ভারতীয় শাড়ির দাম প্রতি পিস মাত্র ৬০ টাকা। মেয়েদের সবচেয়ে দামি পোশাক হলো লেহেঙ্গা। কত দাম জানেন? মাত্র ১০৫ টাকা। ‘গর্জিয়াস’ লেহেঙ্গার দাম একটু বেশি, সেটাও মাত্র ১২০ টাকা।
এ তো গেল মেয়েদের পোশাকের দাম। ছেলেদের পোশাকের দামও এমনই। যেমন পাকিস্তানের পাঞ্জাবির দাম মাত্র ৬৫ টাকা। শিশুদের পাঞ্জাবির দর বড়দের অর্ধেক, প্রতি পিস ২৯ টাকা, অবশ্য তা ভারতীয় পাঞ্জাবি।
এতক্ষণ যা পড়েছেন, ঠিকই পড়েছেন। তবে ক্রেতা হিসেবে আপনার উচ্ছ্বসিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, এই দর আছে শুধু কাগজে-কলমে। ভারত-পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই দরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পোশাক আমদানি করেছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যভান্ডারে আমদানির এমন চিত্র মিলেছে। কম মূল্য পোশাক আমদানি নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনের পর এই বিষয় আলোচনায় এসেছে। এসব পোশাক আনা হয়েছে ঈদের বাজারে বেচাকেনার জন্য।
তবে বাজারে এসব পোশাক কিনতে হলে অন্তত ৫০ থেকে ১০০ গুণের বেশি দাম গুণতে হবে ক্রেতাদের। যেমন চট্টগ্রামের আফমি প্লাজায় দেখা যায়, পাকিস্তানের সাধারণ থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। উন্নত মানের থ্রি-পিসের দাম ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। এর মানে হলো, বাজারে বিদেশি পোশাকের যে চড়া দাম, তার সঙ্গে আমদানি মূল্যের হিসাব মিলছে না।
এত কম দরে পোশাক আমদানির নজির তৈরি করেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মেয়েদের পোশাক এনেছে ঢাকার ভাটারার ভিক্টোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল, এলিফ্যান্ট রোডের এ আর ইন্টারন্যাশনাল ও পান্থপথের প্রতিষ্ঠান এভার গ্লোবাল। ছেলেদের পাকিস্তানের পাঞ্জাবির রেকর্ডটা নিজেদের করে রেখেছে ঢাকার খিলক্ষেতের অনয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। বাচ্চাদের পাঞ্জাবির রেকর্ডটা ঢাকার নিউমার্কেটের সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের। এ রকম বহু আমদানিকারকের নাম আছে তালিকায়।
পাকিস্তান থেকে অনয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ১৬ মার্চ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ৬৫ টাকায় প্রতি পিস পাঞ্জাবি আমদানি করেছে। অবশ্য এই দর অবিশ্বাস্য কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছেই। এ জন্য ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৬১০ টাকা মূল্য ধরে শুল্কায়ন করেছে। তাতে প্রতি পিসে ৬২২ টাকা শুল্ক–কর আদায় করেছে কাস্টমস। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি এক থেকে দুই ডলারে মেয়েদের থ্রি-পিস আমদানি করেছে প্রায় ৭০ হাজার পিস।
এ বিষয়ে অনয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ফোন না ধরায় প্রতিষ্ঠানের কারও মতামত জানা যায়নি। পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া পণ্য খালাসকারী এজেন্টদের একজন মনোয়ারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার গাজী জহিরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত কম দরে কীভাবে পোশাক আমদানি হয়, তা আমারও মাথায় ঢোকে না। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ঠিকই নির্ধারিত মূল্যে শুল্কায়ন করে। মূলত ভারত ও পাকিস্তান—এই দুই দেশ থেকে পোশাক আমদানিতে মূল্য কম দেখানো হয় বলে তিনি জানান।
একই অবস্থা ভারত থেকে পোশাক আমদানিতেও। যেমন এলিফ্যান্ট রোডের এ আর ইন্টারন্যাশনাল গত ১৬ জানুয়ারি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ৪০ টাকা দরে থ্রি-পিস আমদানি করেছে। পান্থপথের গ্রিনরোডের এভার গ্লোবাল প্রতিষ্ঠান অবশ্য ৪৮ টাকায় ৩৩ পিস উন্নত মানের থ্রি-পিস আমদানি করেছে। কাস্টমস ৪৮ টাকার থ্রি-পিসের মূল্য ১ হাজার ৪৬৪ টাকা ধরে শুল্কায়ন করেছে।
একই প্রতিষ্ঠান ১০৫ টাকা দরে সাধারণ লেহেঙ্গা আমদানি করেছে ভারত থেকে। গর্জিয়াস লেহেঙ্গা আমদানি করেছে ১২০ টাকায়। অবশ্য ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই দুই ধরনের পোশাকের শুল্কায়ন করেছে যথাক্রমে ৩ হাজার ৫০ টাকা ও ৫ হাজার ৪০০ টাকা দরে।
শুধু থ্রি-পিসই নয়, এভার গ্লোবাল ৬০ টাকায় উন্নত ও মধ্যম মানের শাড়ি আমদানির রেকর্ড গড়েছে। গত জানুয়ারিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে তারা এই দরে শাড়ি এনেছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই শাড়ি ১ হাজার ৮০০ টাকা দাম ধরে শুল্কায়ন করেছে। আবার বেনাপোল বাজারের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রহমান অ্যান্ড ব্রাদার্স বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১ হাজার ৩০০ পিস টপস আমদানি করেছে। প্রতিটি টপসের দাম পড়েছে ১১ টাকার কম।
ক্রেতাদের শাড়ি দেখাচ্ছেন দুজন বিক্রেতা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প শ ক আমদ ন স আমদ ন দর দ য় ন কর ছ অবশ য
এছাড়াও পড়ুন:
সুমামগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবক নিহত
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় জমি নিয়ে পুরানো বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নজরুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন জালাল হোসেন নামে একজন। তাকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন চিকিৎসক।
রবিবার (১৫ জুন) সকালে উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের জামলাবাজ গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। শান্তিগঞ্জ থানার ওসি আকরাম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত নজরুল ইসলাম জামলাবাজ গ্রামের কান্দারহাটি গ্রামের হাশিম উল্লাহর ছেলে।
আরো পড়ুন:
দৃষ্টিহীন বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
মুক্তিপণ না পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিকে হত্যা
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নজরুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেশী মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে তাজ উদ্দিনের বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধী চলছিল। ১০ দিন আগে নজরুল ইসলামের ঘরের পাশে তাজ উদ্দিন গর্ত খুঁড়ে বালু ভর্তি বস্তা ফেলেন।
নজরুল ইসলামের মা আফতাজা বিবি বাধা দিয়ে জানান, এখানে বালুর বস্তা দিলে তাদের ঘরে পানি ঢুকবে। এ কথার জেরে আফতাজা বিবিকে মারধর করেন তাজ উদ্দিন।
এ ঘটনার পর আফতাজা বিবি গ্রামবাসীর কাছে বিচার দাবি করেন। এরপর থেকে তাজ উদ্দিন একাধিকবার বাড়িতে এসে মারধরের জন্য নজরুল ইসলামকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু আফতাজা বিবি ছেলেকে ঘর থেকে বের হতে দেননি।
আজ রবিবার সকাল ফের তাজ উদ্দিন নজরুল ইসলামের বাড়িতে যান এবং ডাকাডাকি শুরু করেন। ঘর থেকে বের হলেই নজরুল ইসলাম ও জালাল হোসেনের ওপর হামলা করেন তিনি। এতে নজরুল ইসলাম ও জালাল হোসেন গুরুত্বর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক নজরুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। জালাল হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসক।
শান্তিগঞ্জ থানার ওসি আকরাম হোসেন জানান, নিহত নজরুল ইসলামের সঙ্গে অভিযুক্ত তাজ উদ্দিনের পূর্ব বিরোধ ছিল। আজ সকালে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়। এসময় দুইজন আহত হন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন।
ঢাকা/মনোয়ার/মাসুদ