শহীদ মিনারে সন্জীদা খাতুনকে শেষ শ্রদ্ধা
Published: 26th, March 2025 GMT
সন্জীদা খাতুনকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে সমবেত হয়েছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ।
আজ বেলা আড়াইটায় সন্জীদা খাতুনের কফিন শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। অশ্রু, গান, কবিতা ও ফুলে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এ সময় ‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’সহ বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করেছেন শিল্পীরা। তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে হাজির হয়েছিলেন অনেকে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সন্জীদা খাতুন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ ছুঁই ছুঁই।
শহীদ মিনারে সন্জীদা খাতুনের পুত্রবধূ ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ‘তিনি আজকে বিদায় নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর দেখানো পথ ও তাঁর শক্তি যেন ধারণ করতে পারি। এগিয়ে যেতে পারি। যাঁরা সমবেত হয়েছেন এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
বক্তব্য শেষে ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’ গেয়ে শোনান লিসা। গানটি গাইতে গিয়ে গলা ধরে আসে তাঁর।
আরও পড়ুনশেষবারের মতো ছায়ানটে সন্জীদা খাতুন, ফুলেল শ্রদ্ধা৩ ঘণ্টা আগেসন্জীদা খাতুনকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘তথ্য আপাদের’ দাবি নিয়ে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান
চাকরি স্থায়ীকরণে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের নারীদের দাবির বিষয়ে সরকারের কর্ণপাত না করার তীব্র সমালোচনা করলেন রাজনৈতিক নেতারা। আজ সোমবার তাঁদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বিভিন্ন দলের নেতারা বলেছেন, চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও পাওনা টাকার দাবিতে ২০ দিন ধরে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের নারীরা রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের বাইরে অবস্থান করলেও সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। সরকারের এই আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁরা আগামী দুই দিনের মধ্যে ‘তথ্য আপাদের’ সঙ্গে আলোচনায় বসে সরকারকে যৌক্তিক সমাধানে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় মহিলা সংস্থা’র বাস্তবায়ন করা এ প্রকল্পের পুরো নাম ছিল ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন’। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘তথ্য আপা: তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত)’।
আজ দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে তথ্য আপাদের দাবির প্রতি সংহতি জানাতে আসেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান মঞ্জু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা দিদারুল ভূঁইয়া, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।
২০ দিন ধরে ‘তথ্য আপারা’ অবস্থান করছেন, অথচ সরকারের মধ্যে কোনো রেখাপাত হচ্ছে না উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলেও দেখেছি দিনের পর দিন দাবি নিয়ে লোক বসে থাকত, আর সরকার কর্ণপাত করত না। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আসা সরকারের কাজ হচ্ছে মানুষের কথা শোনা, সব সমস্যার সমাধান দাবি অনুযায়ী হবে তা নয়। তবে মানুষের কথা তো শুনবেন আপনারা (সরকার)! মানুষ দিনের পর দিন বসে থাকবে, আর আপনারা কর্ণপাত করবেন না, পাত্তা দেবেন না, এটা হতে পারে না।’
আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা বের হয় উল্লেখ করে গণ সংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, এই প্রকল্পের কর্মীরা আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বলে ‘আওয়ামী ট্যাগ’ লাগিয়ে সরকার একদল মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। দুই দিনের মধ্যে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান তিনি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান (মঞ্জু) আগামী দুই দিনের মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে ‘তথ্য আপাদের’ যৌক্তিক দাবিগুলোর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তথ্য আপারা দিনের পর দিন বসে আছেন। অথচ অবাক হচ্ছি, তাঁদের কথাগুলো কেউ আমলে নিচ্ছেন না। ১০-২০ হাজার নারী গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করলে তখন আমরা দেখব দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া আসবে। কেউ বোতল ছুড়ে মারলে দাবি আদায় হবে। এই সংস্কৃতি কেন?’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তথ্য আপা প্রকল্প নিয়ে বড় কোনো দুর্নীতির খবর পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্য আপারা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাতেন। প্রকল্প সফল হয়েছে বলেই তা তৃতীয় মেয়াদে নেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় মেয়াদে তথ্য আপাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এই সরকার একটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে এমন তথ্য নেই, বরং বেকারত্ব বাড়ছে, সামাজিক সুযোগ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
অন্যায়ভাবে প্রকল্পের ১ হাজার ৯৬৮ জন নারীকে চাকরিচ্যুত না করার আহ্বান জানান ঝালকাঠি তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও আন্দোলন পরিচালনা কমিটির সভাপতি সঙ্গীতা সরকার। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কারও সুপারিশে নয়। প্রকল্পে নিয়োগের সময় প্রকল্প শেষে নতুন পদ সৃষ্টি করে জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে এমন কথা বলা হয়েছিল। উচ্চশিক্ষিত নারীরা সেসব দেখেই প্রকল্পের চাকরিতে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে রাজস্ব খাতে নিতে সুবিধা হবে জানিয়ে তাঁদের যা বেতন ধরা হয়েছিল, তা থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। সেই পাওনাও তাঁরা পাচ্ছেন না।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে পাইলট আকারে ১৩টি উপজেলায় তথ্য আপা প্রকল্প শুরু হয়। পরে ২০১৮ সালের শেষ দিকে ৪৯২টি উপজেলায় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরে তা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন করা হয়। গত বছর আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন করা হয়। সে হিসাবে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে আর ১৪ দিন বাকি।