সিলেটের বর্ষসেরা ভলান্টিয়ার হলেন ইবি শিক্ষার্থী সজিব
Published: 26th, March 2025 GMT
২০২৪ সালের সিলেট বিভাগের বর্ষসেরা ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদ আহমেদ সজীব।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, যুব ক্ষমতায়ন, নাগরিক শিক্ষা প্রসার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকার জন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক ও দাতব্য সংস্থা ভলান্টিয়ারি সার্ভিস ওভারসিজ (ভিএসও বাংলাদেশ) তাকে এ সম্মাননা প্রদান করে।
বর্তমানে তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা অধিকার নিশ্চিতে ‘সিটিজেন ফাউন্ডেশন’ এর ঝিনাইদহের স্কুল পরিচালক এবং জাগো ফাউন্ডেশনের ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের (ভিবিডি) খুলনা বিভাগের সভাপতি হিসেবে এসডিজি বাস্তবায়ন ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
সজীবের শৈশব কেটেছে সুনামগঞ্জের শর্মপাশা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশির সঙ্গে। ফলে খুব কাছ থেকে দেখেছেন হাওরের মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রতিটি মুহূর্ত তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। হাওরের সেসব মানুষদের একটি সুন্দর জীবন দেওয়ার প্রয়াস থেকেই শুরু হয় তার স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার গল্প।
২০১৪ সালে সজীবের স্বেচ্ছাসেবী যাত্রা শুরু। প্রথমদিকে তিনি তার বাবার সঙ্গেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। নিজ এলাকায় কিছুদিন কাজ করার পর পড়াশোনা জন্য নেত্রকোনায় চলে আসেন। নেত্রকোনায় তার বন্ধুদের সঙ্গে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘শিশু ছায়া’ নামক সংগঠন। সেই সঙ্গে বিডি ক্লিনের সঙ্গেও তিনি কাজ শুরু করেন।
পরে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় সজীব। সেখানে ‘বাঁধনে’ কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ চালিয়ে যান। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ভর্তির সুযোগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই তিনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হন।
প্রথমদিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হলেও প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা থেকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত হন। অক্লান্তভাবে ছুটে চলেন শহর থেকে গ্রাম-গ্রামান্তরে। যেখানেই দুস্থ অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু-বৃদ্ধদের খোঁজ পান, সেখানেই তিনি তার যথাসাধ্য ছুটে যান। এসব কাজের ফলে তিনি বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে ‘মানবসেবী সজীব’ নামে পরিচিত।
২০২৪ সালের ফেনী-লক্ষ্মীপুরের বন্যায় নিপীড়িত মানুষের সহযোগিতায় সজীব ছিলেন অগ্রসৈনিক। তিনি ও তার বন্ধুরা মিলে বন্যার্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনে অর্ধকোটি টাকা সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়াও ২০২২ সালে বন্যায় ও করোনা মহামারিতেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। অসহায়, পথশিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সজীব।
এ বিষয়ে সজিব বলেন, “সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে বর্ষসেরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নির্বাচিত হওয়া আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং সম্মানের। এ অর্জনের জন্য সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ স্বীকৃতি শুধু আমার একার নয়। এটি আমার পরিবার, সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সব স্বেচ্ছাসেবকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। এ স্বীকৃতি আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে আরো নিষ্ঠার সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই শিখেছি, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। এ শিক্ষা আমি প্রথম পেয়েছি আমার পরিবার থেকে। বিশেষ করে আমার শ্রদ্ধেয় আব্বার কাছ থেকে। তিনি কখনো স্বার্থের কথা চিন্তা না করে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন, আমাদেরও সেই পথেই চালিত করেছেন। আমাদের উপদেশ দেওয়ার আগে তিনি নিজেই তা বাস্তবে অনুসরণ করতেন।”
তিনি আরো বলেন, “অন্যের প্রতি সদয় আচরণ, সৎ পথে থাকার দৃঢ় সংকল্প এবং বিনয়ী থাকার শিক্ষা আমি বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি। আমার এই পথচলায় পরিবার, বন্ধুবান্ধব, এবং সহকর্মীদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের সহযোগিতা ও ভালোবাসা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে এবং সামনে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ক জ কর স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
রাবিপ্রবির ১০ শিক্ষার্থীর সনদ-ছাত্রত্ব বাতিল
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলনকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, র্যাগিংসহ নানা অভিযোগ এনে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এমন ১০ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ছাত্রত্ব ও সনদপত্র বাতিল করেছে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বহিষ্কৃতরা হলেন, বিশ্বজিৎ শীল, সাইদুজ্জামান পাপ্পু, জাহাঙ্গীর আলম অপু, মহিউদ্দিন মুন্না, হাসু দেওয়ান, আকিব মাহমুদ, আবির, অন্তু কান্তি দে, জাকির হোসেন ও রিয়াদ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ড. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে, তাদের সনদপত্র বাতিল করা হয়েছে। যারা এখনো অধ্যয়নরত তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ছাত্রলীগের বিচারসহ ৯ দাবি জবি ছাত্রদলের
রাবিতে প্রভাষক হলেন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা, ক্ষোভ
ভিসি আরো জানান, ২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানান অভিযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়, যা সর্বশেষ রিজেন্ট বোর্ডের সভায় অনুমোদিত হয়েছে। গত পরশু তাদের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
বহিষ্কৃত ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আকিব মাহমুদ বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্ট মাসে এমন কোনো ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটেনি, যে কারণে আমাদের বহিষ্কার করা হতে পারে। ক্যাম্পাসে কোটা প্রত্যাহার দাবিতে একদিন বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে প্রোগ্রাম হয়েছে, সেদিনও কিছু হয়নি। আমরা সম্পূর্ণভাবে ভিসি ও ছাত্রদল-শিবিরের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। একদিন নিশ্চয়ই এই অবিচারের বিচারও হবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে রিজেন্ট বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের কিছু বলার নেই। শুধু জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনাই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক ঘটনাও আছে অভিযোগে। তারই প্রেক্ষিতে তদন্ত শেষে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’’
২০১৫ সালে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত কমিটি দেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের ব্যানারে নানান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যেত। বহিষ্কৃত ও সনদ বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন ৫ আগস্টের আগে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কিছু দিন কারাবরণ শেষে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দেশ ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা বহিষ্কৃত ১০ জনের একজন বিশ্বজিৎ শীল।
ঢাকা/শংকর/বকুল