পাকিস্তানি থ্রি-পিসের আদলে পোশাক, চাহিদায় আছে ‘কর্ড ড্রেস’
Published: 27th, March 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা করতে সবাই এখন রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতানমুখী। পিছিয়ে নেই পাড়া–মহল্লার দোকানগুলোও। এসব দোকানে সাধারণত তৈরি পোশাকই বেশি বিক্রি হয়। তবে নারীদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের পছন্দের নকশা ও গড়নে পোশাক বানাতে পছন্দ করেন। তাই দরজিবাড়ির ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণ।
ঈদে নতুন পোশাকের ফরমাশ নেওয়া শেষ হয়েছে অনেক আগেই। দরজিরা এখন সেসব পোশাক সরবরাহ করছেন। ইন্টারনেটে দেশি-বিদেশি নকশা অনুকরণ করে দরজিদের কাছ থেকে পছন্দের পোশাক বানাতে দেন নারীরা। পাকিস্তানি থ্রি–পিস ও পাকিস্তানি পোশাকে ব্যবহৃত নকশার চাহিদা বেশি।
রাজধানীর নিউমার্কেটের রিয়েলি ফ্যাশন লেডিস টেইলার্সের মাস্টার শেখ শফিকুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হালের পাকিস্তানি থ্রি–পিসের আদলেই নিজের পোশাক বানিয়ে নিচ্ছেন তরুণীরা। তারা মুঠোফোন দেখিয়ে আমাদের নকশা বুঝিয়ে দেন। আমরা সেভাবেই সেলাই করি। জর্জেটের সালোয়ার–কামিজ, সুতি কাপড়ের ফ্রক ও প্যান্ট কাটের সালোয়ারের ফরমাশ বেশি পেয়েছি। প্যান্টে পকেট ও চেইনের চল বেড়েছে।’
শবে বরাতের পর থেকেই ঈদের জামার ফরমাশ নেওয়া শুরু হয়। ২০ রমজানের পর আর নতুন ফরমাশ নেওয়া হয় না। তবু সকাল ১০টা থেকে সাহ্রি পর্যন্ত চলে সেলাইকাজ।
নকশায় বৈচিত্র্য
দরজিরা জানালেন, এবার গলা ও হাতার নকশাতেও আছে বৈচিত্র্য। কামিজে শার্ট কলার, কাফতান, ভি-কাট গলা ছাড়াও চলছে বোট–গলার নকশা। থ্রি-কোয়ার্টারের হাতার চাহিদা কিছুটা কমেছে। ফোর-কোয়ার্টার ও ফুলহাতার জামার দিকেই ঝোঁক বেশি। কামিজের সঙ্গে মিল রেখে বাহারি লেইসও প্যান্টের নিচে লাগানো হচ্ছে। ফরমাশ রয়েছে প্যান্টে বোতাম ও চেইন লাগানোরও।
নিউমার্কেটের ইসমাইল টেইলার্স অ্যান্ড এমব্রয়ডারির স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এমব্রয়ডারির নকশার কাজ এবার বেশি পেয়েছি। শর্ট কামিজের সঙ্গে ঢিলেঢালা পালাজ্জো ধরনের সালোয়ারও বেশ চলছে।’
তরুণীদের আগ্রহে যা আছে
কম বয়সী তরুণীদের চাহিদা আছে কর্ড ড্রেস বা টু পিস কামিজ-সালোয়ারের। এ ছাড়া টার্সসেল ও পাথরের কাজের প্রাধান্য পেয়েছে জানিয়ে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের দরজিবাড়ি তন্ময়া বুটিক্স অ্যান্ড লেডিসের স্বত্বাধিকারী নীরব হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন রকম নকশায় পাথরের কাজ করা পোশাকের প্রতি তরুণীদের আগ্রহ আছে। সঙ্গে বেল বোটম হাতায় টার্সেল করা জামার চাহিদাও ভালো আছে। প্যান্টের ক্ষেত্রে ঘের বেশিওয়ালা স্কার্ট পালাজ্জো চলছে। অনেকে প্যান্টের নিচে মুক্তা লাগিয়ে নিয়েছেন।’
নিউমার্কেট এলাকায় সালোয়ার–কামিজ তৈরিতে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরি নিচ্ছেন দরজিরা। তবে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলসহ নামকরা দরজিবাড়িতে পোশাক বানাতে খরচ পড়েছে ৭০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা। ভারী কাজের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উপাদানসহ মজুরি পৌঁছাতে পারে চার–পাঁচ হাজারেও।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।