পবিত্র ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা করতে সবাই এখন রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতানমুখী। পিছিয়ে নেই পাড়া–মহল্লার দোকানগুলোও। এসব দোকানে সাধারণত তৈরি পোশাকই বেশি বিক্রি হয়। তবে নারীদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের পছন্দের নকশা ও গড়নে পোশাক বানাতে পছন্দ করেন। তাই দরজিবাড়ির ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণ।

ঈদে নতুন পোশাকের ফরমাশ নেওয়া শেষ হয়েছে অনেক আগেই। দরজিরা এখন সেসব পোশাক সরবরাহ করছেন। ইন্টারনেটে দেশি-বিদেশি নকশা অনুকরণ করে দরজিদের কাছ থেকে পছন্দের পোশাক বানাতে দেন নারীরা। পাকিস্তানি থ্রি–পিস ও পাকিস্তানি পোশাকে ব্যবহৃত নকশার চাহিদা বেশি।

রাজধানীর নিউমার্কেটের রিয়েলি ফ্যাশন লেডিস টেইলার্সের মাস্টার শেখ শফিকুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হালের পাকিস্তানি থ্রি–পিসের আদলেই নিজের পোশাক বানিয়ে নিচ্ছেন তরুণীরা। তারা মুঠোফোন দেখিয়ে আমাদের নকশা বুঝিয়ে দেন। আমরা সেভাবেই সেলাই করি। জর্জেটের সালোয়ার–কামিজ, সুতি কাপড়ের ফ্রক ও প্যান্ট কাটের সালোয়ারের ফরমাশ বেশি পেয়েছি। প্যান্টে পকেট ও চেইনের চল বেড়েছে।’

শবে বরাতের পর থেকেই ঈদের জামার ফরমাশ নেওয়া শুরু হয়। ২০ রমজানের পর আর নতুন ফরমাশ নেওয়া হয় না। তবু সকাল ১০টা থেকে সাহ্‌রি পর্যন্ত চলে সেলাইকাজ।

নকশায় বৈচিত্র্য

দরজিরা জানালেন, এবার গলা ও হাতার নকশাতেও আছে বৈচিত্র্য। কামিজে শার্ট কলার, কাফতান, ভি-কাট গলা ছাড়াও চলছে বোট–গলার নকশা। থ্রি-কোয়ার্টারের হাতার চাহিদা কিছুটা কমেছে। ফোর-কোয়ার্টার ও ফুলহাতার জামার দিকেই ঝোঁক বেশি। কামিজের সঙ্গে মিল রেখে বাহারি লেইসও প্যান্টের নিচে লাগানো হচ্ছে। ফরমাশ রয়েছে প্যান্টে বোতাম ও চেইন লাগানোরও।

নিউমার্কেটের ইসমাইল টেইলার্স অ্যান্ড এমব্রয়ডারির স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এমব্রয়ডারির নকশার কাজ এবার বেশি পেয়েছি। শর্ট কামিজের সঙ্গে ঢিলেঢালা পালাজ্জো ধরনের সালোয়ারও বেশ চলছে।’

তরুণীদের আগ্রহে যা আছে

কম বয়সী তরুণীদের চাহিদা আছে কর্ড ড্রেস বা টু পিস কামিজ-সালোয়ারের। এ ছাড়া টার্সসেল ও পাথরের কাজের প্রাধান্য পেয়েছে জানিয়ে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের দরজিবাড়ি তন্ময়া বুটিক্স অ্যান্ড লেডিসের স্বত্বাধিকারী নীরব হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন রকম নকশায় পাথরের কাজ করা পোশাকের প্রতি তরুণীদের আগ্রহ আছে। সঙ্গে বেল বোটম হাতায় টার্সেল করা জামার চাহিদাও ভালো আছে। প্যান্টের ক্ষেত্রে ঘের বেশিওয়ালা স্কার্ট পালাজ্জো চলছে। অনেকে প্যান্টের নিচে মুক্তা লাগিয়ে নিয়েছেন।’

নিউমার্কেট এলাকায় সালোয়ার–কামিজ তৈরিতে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরি নিচ্ছেন দরজিরা। তবে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলসহ নামকরা দরজিবাড়িতে পোশাক বানাতে খরচ পড়েছে ৭০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা। ভারী কাজের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উপাদানসহ মজুরি পৌঁছাতে পারে চার–পাঁচ হাজারেও।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র নকশ ফরম শ

এছাড়াও পড়ুন:

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।

এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।

আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।

সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ