আমলা পুরাতন জামে মসজিদ। মসজিদটি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা বাজারের অদুরেই এ পুরাতন জামে মসজিদটির অবস্থান। প্রাকৃতিক শান্ত পরিবেশে দ্বিতল ভবন নিয়ে মসজিদটি স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।

রমজান মাস এলেই এ মসজিদ পরিচালনাকারীরা কিছু ব্যতিক্রমী উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে  এলাকার হাজী, উমরাহ পালনকারী, এহতেকাফ পালনকারি, ইফতারি প্রস্তুতকারী ক্ষুদে স্বেচ্ছাসেবী, প্রধান আলোচক ও শ্রেষ্ঠ ইমামদের সম্মাননা স্বারক প্রদান করা হয়।

এতে আমলা পুরাতন জামে মসজিদের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো.

রুহুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. আরিফ বিল্লাহ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, হাজী রাকিবুল ইসলাম, হাজী আব্দুর রশিদ, হাজী আব্দুল করিম, হাজী রাহাতুল শাহ, হাজী সাদেক আলী, হাজী আশাদুল হক মিল্টন, হাজী আমিরুল ইসলাম, খলিশাকুন্ডি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম খান, নওদা আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান মালিথা, মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মো. আজগর আলী, আমলা জাহানারা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুস সালাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সাজ্জাদ খান, মো. রফিকুল ইসলাম, তৌমুরুল ইসলাম প্রমুখ।

এ ব্যাপারে হাজী আব্দুর রশিদ বলেন, “এ মসজিদ পরিচালনা কমিটি ২০০৯ সাল থেকে অদ্যবধি হাজীসহ নামাজিদের সন্মাননা দিয়ে সন্মানীত করেন। এটি একটি মহতী উদ্দ্যোগ। এ বছর মসজিদ কমিটি আমাকে সন্মাননা দিয়েছে। আমি  অভিভূত হয়েছি। এ ধারা অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা করি।”

আরেক হাজী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “মিরপুর উপজেলার মধ্যে এটাই প্রথম কোন মসজিদ যা হাজীসহ অন্যান্যদের প্রতি রমজান মাসে সন্মানিত করেন। আসলে এটা মূলত ভাল লাগা ও আন্তরিকতার বিষয়। আন্তরিক হলে প্রতিটি মানুষকে সন্মানীত করা যায়।”

আমলা পুরাতন জামে মসজিদের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. রুহুল ইসলাম খান বলেন, “আমাদের ভাললাগা থেকেই এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। প্রতি বছর আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মুসল্লীদের আমরা সন্মানীত করে থাকি। ভবিষ্যতে এর পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। মানুষকে ভালবাসলে সৃষ্টিকর্তার অনুকূল্য পাওয়া যায়। তাই আমরা সন্মানীত ব্যক্তিদের সন্মান দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছি।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ