‘বাঘের থাবার দাগ’ সময়ের স্মারক হয়ে আছে যে মসজিদের দেয়ালে
Published: 29th, March 2025 GMT
জায়গাটিতে তখন এত মানুষের বসতি ছিল না। ঝোপ-জঙ্গলে স্থানটি দুর্গম ছিল, অন্য রকম ছিল। বাঘসহ অন্য সব বন্য প্রাণীর বিচরণ ছিল এই স্থানটিতে। এটা অনুমান করা যায় পাঁচ শতাধিক বছর আগের তৈরি মসজিদের দেয়ালের একটি চিহ্ন থেকে। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, ওই চিহ্নটি ‘বাঘের পায়ের থাবার’। সেই দাগ এখনো দেয়ালটিতে সময়ের স্মারক হয়ে আছে। মসজিদটিতে সময়ে সময়ে নানা রকম সংস্কার ও উন্নয়নকাজ হয়েছে। তবে পুরোনো আদল, ‘বাঘের থাবার চিহ্ন’, ফুলের নকশা এখনো বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।
মসজিদটির নাম ‘গয়ঘর ঐতিহাসিক খোজার মসজিদ’। অবস্থান মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নে। প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন হয়ে এখনো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় টিকে আছে। শুধু স্থানীয় মানুষই নয়, আশপাশের এলাকাসহ দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন মসজিদটি দেখতে, নামাজ পড়তে। মসজিদকে কেন্দ্র করে নানা কাহিনিরও কমতি নেই।
গত বুধবার (২৬ মার্চ) বিকেলে মসজিদটিতে গিয়ে দেখা গেছে, তখন সূর্য অনেকটাই হেলে পড়েছে পশ্চিমের দিকে। আসরের নামাজের সময় হয়ে গেছে। আজান পড়তেই চারদিক থেকে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে ছুটে এসেছেন। স্থানীয় লোকজন জানালেন, পাঁচ ওয়াক্তের নামাজের সময় এ রকমই হয়ে থাকে। তবে শুক্রবারে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। ঐতিহাসিক মসজিদে নামাজে শামিল হতে অনেক দূরের মানুষ এখানে ছুটে আসেন। তখন অনেক সময় মুসল্লিদের স্থান সংকুলান কঠিন হয়ে পড়ে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের পুরোনো ভবন অক্ষুণ্ন রেখে মসজিদের পূর্ব ও উত্তর দিকে জায়গা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। দক্ষিণ পাশেও অস্থায়ীভাবে শামিয়ানা টাঙিয়ে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মসজিদের ভেতরের পূর্ব দিকের দেয়ালের থামে এই দাগটি বাঘের থাবার বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত বুধবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গয়ঘরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মসজ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল