খুলনায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত সার্কিট হাউজ মাঠে সকাল আটটায় অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে আটটায় খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মডেল মসজিদে এবং সকাল নয়টা ও দশটায় খুলনা টাউন জামে মসজিদে ঈদের তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার রোববার সকালে সার্কিট হাউজ মাঠে ঈদের প্রধান জামাত আয়োজনের প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘‘নগরবাসী যাতে সুষ্ঠুভাবে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতে নামাজ আদায় করতে পারে সে জন্য সার্কিট হাউজ মাঠ প্রস্তুতের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১২টি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। নগরবাসী যাতে নিরাপত্তার সঙ্গে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পারে সে লক্ষ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও কেএমপি’র পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে কেসিসি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহায়তায় পৃথকভাবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।’’
পরে সার্কিট হাউজ মাঠে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সার্বিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়াবলী নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করেন কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ।
এ সময় খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মন্ডল, কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মশিউজ্জামান খান, সিনিয়র সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলম, জেলা প্রশাসন, কেএমপি, কেসিসি’র কর্মকর্তাসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নুরুজ্জামান
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।