দেশের মানচিত্রের শুরুর জেলা পঞ্চগড়। হিমালয় পর্বতমালার কাছাকাছি এই জেলাকে হিমালয়ের কন্যাও বলে হয়। শীতকালে আকাশ মেঘমুক্ত হলে এখান থেকে দেখা যায় পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। তিনদিকে ভারতীয় সীমানাবেষ্টিত জেলাটি স্বাভাবিকভাবেই ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। শীতকালে প্রতিবছর পর্যটক সমাগম বাড়ে এখানে। এখানকার মূল আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা হলেও পুরো জেলা অপরুপ সৌন্দর্যমন্ডিত। কাঞ্চনজঙ্ঘার বাইরেও পর্যটকদের তৃষ্ণা মেটাতে রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থান। ঈদের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুরা চাইলে ঘুরতে যাওয়ার তালিকায় রাখতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পঞ্চগড়কে।

এ জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, সমতলের চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, মহারাজার দিঘী, পঞ্চগড় ইকো পার্ক, রকস মিউজিয়াম, তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো, আনন্দধারা রিসোর্ট, বোদেশ্বরী মন্দির।

মির্জাপুর শাহী মসজিদ
মির্জাপুর শাহী মসজিদ পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। জেলাশহর থেকে এর দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। মসজিদের শিলালিপি ঘেঁটে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ধারণা করেন, মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কে নির্মাণ করেছেন, এটি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, মালিক উদ্দিন নামে মির্জাপুর গ্রামের এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামও প্রতিষ্ঠা করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, দোস্ত মোহাম্মদ নামে জনৈক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ধারণা করেন, মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটি ১৬৫৬ সালে। 

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। মসজিদটির সামনের দেওয়ালে চিত্রাঙ্কন ও বিভিন্ন কারুকার্য রয়েছে, যেগুলো একটি অপরটি থেকে আলাদা। মসজিদে একই সারিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। প্রতিটি গম্বুজের কোণায় একটি করে মিনার রয়েছে। মসজিদটিতে ফারসি ভাষার একটি শিলালিপি রয়েছে, যেটা থেকে ধারণা করা হয় এটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছিল। 

সমতলের চা বাগান
পঞ্চগড় জেলায় সমতলে অসংখ্য ছোট-বড় চা বাগান সৌন্দর্য বর্ধন করেছে। সারি সারি চা গাছ ভ্রমণপিপাসুদের নজর কাড়ে। চা বোর্ডের তথ্যমতে, পঞ্চগড়ে চায়ের আবাদ রয়েছে ১০ হাজার ২৬৭ একর জমিতে। ২০০০ সালে এ জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। কাজী এন্ড কাজী, এমএমটি, স্যালিলনসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির টি স্টেট দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করবে। 

বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট। বাংলাদেশ মানচিত্রের শুরু এখান থেকে। ভারত-বাংলাদেশ শূ্ণ্যরেখার পাশে এটির অবস্থান। তথ্যমতে, এখান থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, ভুটান মাত্র ৬৮ কিলোমিটার এবং চীন সীমান্ত মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরত্বে। ভারতের অন্যতম বড় শহর শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার এবং শৈত্যশহর দার্জিলিং এই জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দর্শনার্থীদের আগ্রহের অন্যতম জায়গা এটি। প্রতিনিয়তই এখানে পর্যটক সমাগম থাকে। 

বিজিবি-বিএসএফ যৌথ প্যারেড
জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ভারত-বাংলাদেশ শূণ্যরেখা। এদিকে বাংলাবান্ধা সীমান্ত, ওদিকে ভারতের ফুলবাড়ী। এই শূণ্যরেখায় সপ্তাহের দুইদিন যৌথ প্যারেড করে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ। সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার বিকেলে এই প্যারেড দেখতে ভিড় করে দুই দেশের সব বয়সীরা। 

মহারাজার দিঘী
স্বচ্ছ জলরশির বিশালাকার পুকুরটির নাম মহারাজার দিঘী। পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নে ভারত সীমান্তঘেঁষা ভিতরগড় এলাকায় মহারাজার দিঘীর অবস্থান। মহারাজার দিঘী পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। এটি প্রায় ৫৪ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। দিঘির পাড়সহ আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৮০০ গজ ও পূর্ব-পশ্চিমে ৪০০ গজ। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। এও দিঘীর ইটবাঁধানো ১০টি ঘাট ও ঘাটের উভয় পাশে ইট ও মাটি দিয়ে নির্মিত সুউচ্চ পাড়ে সবুজ গাছগাছালি। কোলাহলমুক্ত, গাছগাছালির নিবিড় ছায়ায়ঘেরা দিঘীর পাড়ে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিস্তীর্ণ জলরাশির ঢেউ আর নানান পাখির কূজনে মোহিত হতে ভ্রমণপিপাসুরা এখানে আসে। 

পঞ্চগড় ইকো পার্ক
পঞ্চগড় সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের মীরগড়ে গড়ে উঠেছে পঞ্চগড় ইকোপার্ক। এখনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও পার্কটি দর্শকপ্রিয় হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। পার্কের কাজও অসমাপ্ত রয়েছে। তবে প্রকৃতির একদম কাছাকাছি পার্কটি দর্শনার্থীদের তৃষ্ণা মেটাবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় ১১টি প্রকল্পের মোট ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কটির কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

রকস মিউজিয়াম
দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর রকস মিউজিয়াম। এটি পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে অবস্থিত। ১৯৯৭ সালে কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.

মো. নামজুল হক ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলেন এই রকস মিউজিয়াম। এই জাদুঘরে পঞ্চগড় জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক ও লোকজ সংগ্রহ রয়েছে এক হাজারের বেশি। রকস মিউজিয়ামের অভ্যন্তরীণ ও উন্মুক্ত দুই রকমের গ্যালারি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ গ্যালারিতে রয়েছে, বিভিন্ন আকৃতি, রং ও বৈশিষ্ট্যের আগ্নেয়শীলা, পাললিক শীলা ও নুড়ি পাথর, সিলিকা নুড়ি ও সিলিকা বালি, হলুদ ও গাঢ় হলুদ বালি, খনিজবালি, সাদা মাটি, তরঙ্গায়িত চ্যাপ্টা পাথর, লাইমস্টোন, পলি ও কুমোর মাটি এবং কঠিন শীলা। এখানে বহু বছরের পুরনো ইমারতের ইট, পোড়ামাটির মূর্তি দেখা যায়।

দেশ-বিদেশ থেকে সংগৃহীত পাথর, বালি বর্ণনাসহ সাজিয়ে রাখা হয়েছে কক্ষের মধ্যে। বাইরে সাজিয়ে রাখা পাথরগুলো নানাস্থান থেকে সংগৃহীত। পাথরের পাশাপাশি এখানে এ অঞ্চলের আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, হাজার বছরের পুরাতন ইমারতের ইট, পাথরের মূর্তি প্রভৃতি স্থান পেয়েছে। এছাড়াও আছে হাজার বছরের পুরনো দুটি নৌকা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এগুলো ব্যবহার করা হতো বলে গবেষকরা মনে করেন।

হাজার বছরের পুরনো চুক্তিনামা, মোগল সাম্রাজ্য ও ব্রিটিশ শাসনামলের রোপ্য ও তামার মুদ্রা এখানে সংরক্ষিত আছে। ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্য গৃহস্থালির জিনিসপত্র, চাষাবাদের উপকরণ এবং ধর্মীয় উপাসনার নানাবিদ দ্রব্যাদি এখানে সাজিয়ে রাখা আছে। শুধু তাই নয়, পাথরের ওপরে লেখা চীন-নেপালি লিপির মুদ্রণ দেখা যায় এখানে। বার রকমের রঙিন বালু এই মিউজিয়ামকে করেছে সমৃদ্ধ। নানা নদীর তলদেশ থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে বালু আর মাটি যা কৌতূহলী দর্শকের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে সহায়তা করে। 

তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরেই ভারতের সীমান্তবর্তী মহানন্দা নদীর তীর ঘেঁষে ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো অবস্থিত। ভিক্টোরিয়ান রীতিতে কুচবিহারের রাজা ভূমি থেকে প্রায় ১৫-২০ মিটার উঁচু গড়ের উপর এই ডাক বাংলোটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্ষাকালে তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো থেকে মহানন্দা নদীর অপূর্ব সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এছাড়া এই স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার চুড়া দেখা যায়। বর্তমানে জেলা পরিষদের অধীনে থাকা তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোটিতে একটি পিকনিক কর্ণার নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এই ডাক বাংলোটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়।

আনন্দধারা রিসোর্ট
আনন্দধারা রিসোর্ট বা কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট। পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে শালবাহান ইউনিয়নের রওশনপুর এলাকায় অবস্থিত। সুনিবিড় মনোরম পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্টটি। প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ দেখতে পাবেন এই রিসোর্টে গেলে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র অর্গানিক চা বাগান। 

দৃষ্টিনন্দন গেট দিয়ে রিসোর্টের মধ্যে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন লতাপাতার ছায়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি পথ। যেদিকে তাকাবেন দেখতে পাবেন সবুজের সমারোহ, মাঝে দেখতে পাবেন আধুনিক দৃষ্টিনন্দন একটি কটেজ। মাঝে একটা লেকও রয়েছে, তার পাশে কয়েকটি কটেজ। লেকের উপর তৈরি করা হয়েছে ব্রিজ, ব্রিজ পেরিয়ে যাওয়া যায় রেস্টহাউজে। রিসোর্টের মধ্যে আরো দেখতে পাবেন সমতলের সবুজ চা বাগান।
এই রিসোর্টটি তৈরি করা হয় সৌখিনতায়। এখানে সাধারণ লোকেদের থাকার অনুমতি নেই। কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট এর মালিক পক্ষ এবং বাহিরের বায়ারগণ এই রিসোর্টে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। এখানে প্রবেশ করার সময় গেটে থাকা দারওয়ানের নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে।

বোদেশ্বরী মন্দির
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের অন্তর্গত করতোয়া নদীর তীরে কারুকার্য মণ্ডিত প্রাচীন বোদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির অবস্থিত। ২ দশমিক ৭৮ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত মন্দিরের নামানুযায়ী বোদা উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে বলে শ্রুতি রয়েছে।

পঞ্চগড়ে কীভাবে আসবেন
ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজসহ অন্যান্য বাসে পঞ্চগড় আসতে পারবেন। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ১০০০-১১০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১৩০০-১৯০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে আসতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে পঞ্চগড় আসতে পারেন। শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেন টিকেটের ভাড়া জনপ্রতি ৬৯৫ থেকে ২৩৯৮ টাকা পর্যন্ত।

কোথায় থাকবেন
রাতযাপনের জন্য পঞ্চগড় জেলা শহরে বেশকিছু ভালো আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস রয়েছে। এসি, নন-এসি দু’ধরনেরই রুম পাওয়া যায়। ভাড়াও তুলনামূলক কম। পঞ্চগড়ের আবাসিক হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম, সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ, হোটেল মৌচাক, হোটেল রাজনগর, হিলটন বোর্ডিং, এইচ কে প্যালেস, হোটেল প্রীতম ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি রেস্ট হাউজ রয়েছে। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতেও রাত্রিযাপন করতে পারেন। এজন্য আগে ভাগেই আপনাকে সিট বুক করতে হবে। এছাড়া জেলা পরিষদের একটি বাংলো রয়েছে। সেখানে থাকতেও আগাম বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। তবে শীত মৌসুমে এগুলোতে সিট পাওয়া দুষ্কর।

ঢাকা/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই র স র ট ন র ম ণ কর বছর র প র স ন দর য উপজ ল র অবস থ ত মন দ র মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।

আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।

রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।

কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?

কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।

রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।

রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।

এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।

রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ