মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক এক করে সব দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। এর পাল্টা হিসেবে কোনো কোনো দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানেরা মার্কিন পণ্যে একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। বাগ্‌যুদ্ধও চলছে। তবে এরই মধ্যে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে বিশেষ করে বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিক্রি ও মুনাফায় সরাসরি প্রভাব পড়বে এমন আশঙ্কায় তাদের শেয়ারের দর পড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা ভয়-আতঙ্কে এসব শেয়ার ছেড়ে দিয়ে সেফ হ্যাভেন বা বিনিয়োগের জন্য ‘নিরাপদ স্বর্গ’ খ্যাত সোনায় বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। এই প্রবণতা বিশ্বে আবার মন্দার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বুধবারকে ‘মুক্তি দিবস’ ঘোষণা করেছেন। এদিন তিনি নতুন করে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেবেন। এর আগে ঘোষিত কিছু বর্ধিত শুল্ক বাস্তবায়ন শুরু হবে এদিন থেকে। এতে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ এবং এমনকি ট্রাম্পের দেশ যুক্তরাষ্ট্র নির্বিশেষে সর্বত্রই শেয়ারবাজারের সূচক পড়ে পড়ছে। আজ সোমবার সোমবার বিশ্বব্যাপী বৃহৎ শেয়ারবাজারগুলোয় দরপতন ঘটেছে। বিশেষ করে জাপানের প্রধান শেয়ারবাজার টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক ৪ শতাংশের বেশি পড়ে গেছে। এর প্রভাবে এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারগুলোতেও পতন ঘটে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত রোববারের একটি ঘোষণা বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। সেদিন তিনি বলেছেন, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, শুধু সেগুলোতেই নয়, ঢালাওভাবে সব দেশই বর্ধিত শুল্কের আওতায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ নিয়ে এজে বেল নামক সংস্থার বিনিয়োগ পরিচালক রাস মোল্ড বলেন, ট্রাম্পই বাজারে খারাপ দিন আসার মূল কারণ। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানিকারী সব দেশকে শুল্কের লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছেন। যার ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আরও অন্ধকার হয়েছে।

এদিকে ট্রাম্পের ঘোষণায় বহুজাতিক গাড়ি নির্মাতারা বেশি বিপাকে পড়েছেন। কারণ, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হয় এমন সব যানবাহন ও যন্ত্রাংশে ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণে আজ ইউরোপের শেয়ারবাজারে পোর্শে, ভক্সওয়াগনসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের শেয়ারের দাম প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে। এশিয়ায় বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি বাজারজাতকারী জাপানি প্রতিষ্ঠান টয়োটাসহ নিশান ও মাজদার শেয়ার দর ৩ শতাংশের বেশি কমেছে।

বহুজাতিক গবেষণা, ঋণমান নির্ণয়কারী ও বিনিয়োগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মুডিস-এর অর্থনীতিবিদেরা লিখেছেন, ‘গাড়িতে শুল্ক বাড়ানোয় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার। বিদেশি গাড়ি আমদানির ওপর ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন, যা বুধবার থেকে কার্যকর হতে চলেছে।

আজ জাপানের টোকিওতে নিক্কেই ২২৫ সূচক ৪ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক ১ দশমিক ৩ শতাংশ, চীনের সাংহাইয়ের সমন্বিত সূচক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।

ইউরোপে লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক ১ দশমিক ২ শতাংশ, ফ্রান্সের প্যারিসের সিএসি ৪০ সূচক ১ দশমিক ৮ শতাংশ, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের ড্যাক্স সূচক ১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ইউরোপের আঞ্চলিক সূচক স্টক্স ৬০০ সূচক ১ দশমিক ৭২ শতাংশ কমেছে। আজ ফ্রান্সের ভিডিও গেমের কোম্পানি ইউবিসফটের শেয়ারের দাম ১৫ শতাংশ কমেছে।

মজার ব্যাপার হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণায় তাঁর শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা ইলন মাস্কও বিপদে পড়তে চলেছেন। কারণ, মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলার শেয়ারের দরও আজ দিনের লেনদেনের শুরুতেই ৭ শতাংশ পড়ে যায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশের শেয়ারবাজারের সার্বিক লেনদেনও আজ লেনদেনের প্রথম দিকে ভালো হয়নি। এর মধ্যে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, নাসড্যাক ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে।

টেক জায়ান্ট তথা প্রযুক্তি খাতের বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে অ্যাপল, মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া, অ্যালফাবেট ও মেটা প্রাথমিক লেনদেনে পতন ঘটেছে। বিশেষ করে এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম ৩ দশমিক ৭ শতাংশ পড়ে গেছে। সূত্র: এএফপি ও বিবিসি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ ব ক শ য় রব জ র ক ১ দশম ক ল নদ ন শ কম ছ সব দ শ ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ