গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ; চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়ন এবং অনিময়, দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে নাগরিক মঞ্চের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডে অবস্থিত গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) সামনে কর্মসূচি পালন করা হয়।  

গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবুর সভাপতিত্বে, অ্যাডভোকেট ফারুক কবীরের সঞ্চালনায় কর্মসূচির শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক হেদায়েতুল ইসলাম বাবু এবং সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির তনু।

কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন, নাগরিক মঞ্চের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, কুশলাশীষ চক্রবর্তী, মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, মানবাধিকার কর্মী শহিদুল ইসলাম, মনির সুইট, আদিবাসী নেতা বৃটিশ সরেন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফজাল সিরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজমাইন মাহতাব, রুয়েট শিক্ষার্থী পার্থ সারথি, মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী সন্ধান বর্মন প্রমুখ। 

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১২ জনের হেলথ কার্ড প্রদান

ওসমানী মেডিকেল 
সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়া নিয়ে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ হামলা, আহত ৩ 

বক্তারা বলেন, গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতাল নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে। রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া হচ্ছে। নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালের ভিতর ও বাইরে দুর্গন্ধ। বারবার অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠলেও আজও প্রতিকার মেলেনি।

বক্তারা আরো বলেন, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যার অনুমোদন পেয়েছে, কিন্তু ২৫০ শয্যার জনবল অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বর্তমানে মাত্র ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে হাসপাতালটি চলছে। এতে অনেক পদ শূন্য রয়েছে। ফলে সেবাপ্রত্যাশী জনগণ কাঙ্খিত চিকিৎসক না পেয়ে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে বেড না পেয়ে রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। শয্যা সংকট নিরসনের জন্য নতুন বহুতল ভবন দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এছাড়া হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য আইসিইউ ইউনিট চালু করতে হবে। 

বক্তারা আরো বলেন, বরাদ্দকৃত ঔষধ রোগীদের না দিয়ে বাইরে বিক্রি করে ওষুধ সংকট দেখানো হয়। রোগীদের প্রায়শই বাইরে থেকে ওষুধ কিনে এনে চিকিৎসা নিতে হয়। চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান কম; ইসিজি, এক্সরে মেশিন অকার্যকর। ভর্তিরত রোগীদের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই এই হাসপাতালে।

বক্তারা গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে সকল দুর্নীতি এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া; পর্যাপ্ত ঔষধ, যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

এক মাসের মাঝে দাবি পূরণ করা না হলে আগামী ৩ মে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতারা জানান। 

ঢাকা/মাসুম/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বক ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা

‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়। 
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে 
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। 
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে। 
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার 
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রঙের শেষ প্রলেপসহ টুকটাক কাজ বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলেই এসব কাজ করা হবে। 
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা