বাংলাদেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ রিটেলিয়েট (প্রতিশোধমূলক) ট্যারিফ আরোপ করেছেন। এর ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৭৪ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করে, এর প্রতিশোধ হিসেবে তারা বাংলাদেশের পণ্যে তার অর্ধেক, অর্থাৎ ৩৭ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করেছে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ১৫ শতাংশ ট্যারিফ প্রদান করে।

নতুন এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের অতিরিক্ত ২২ শতাংশ ট্যারিফ প্রদান করতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি করে, তাই এমন অবস্থায় বজায় থাকলে নিঃসন্দেহে তা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কিন্তু ট্রাম্পের এমন ট্যারিফ ঘোষণায় বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরি করেছে। সেটি হলো, বাংলাদেশ যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ট্যারিফের থেকে কম, অর্থাৎ ১০ শতাংশ ট্যারিফ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শক্ত অবস্থান করে নিতে পারবে। কারণ, ট্রাম্পের সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে ট্যারিফ আরোপ করেছে।

এখন বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে বিদ্যমান ট্যারিফ ৭৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে, তাহলে বাংলাদেশের পণ্যেও যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশই ট্যারিফ আরোপ করবে। এতে বরং বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এখন পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন, তাতে বাংলাদেশের লাভ হবে কি না? চলুন, সরলভাবে হিসাব করে দেখি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দপ্তরের অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।

২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানি ছিল ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ (৩৪.

০ মিলিয়ন ডলার) কমেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি ছিল ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ (৮৯.৩ মিলিয়ন ডলার) বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২ শতাংশ (১২৩.২ মিলিয়ন ডলার) বৃদ্ধি পেয়েছে।
যদি আমরা ২০২৪ সালের আমদানি ও রপ্তানি ডেটাকে বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করি, তাহলে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে বর্তমান হারে, অর্থাৎ ৩৭ শতাংশ ট্যারিফ ধরলে প্রায় ৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার ট্যারিফ যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদান করতে হবে।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এখন এতে যদি বাংলাদেশ ৭৪ শতাংশ হারে ট্যারিফ নেয়, তাহলে বাংলাদেশ ট্যারিফ পাবে ১ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। ফলে বিদ্যমান হিসাবে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার ট্যারিফ যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদান করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র। আমার এই তৈরি পোশাকের কাঁচামাল তুলার অন্যতম আমদানির বাজারও যুক্তরাষ্ট্র। তৈরি পোশাক খাত আমাদের অর্থনীতির অন্যতম লাইফলাইন। কাজেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেকোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আগেই বাংলাদেশের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যত দ্রুত করা যাবে, ততই মঙ্গল।

এখন যদি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ট্যারিফ কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে, সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের পণ্যে ১০ শতাংশ ট্যারিফ প্রদান করবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ট্যারিফ প্রদান করবে শূন্য দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ট্যারিফ প্রদান করবে শূন্য দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রপ্তানিতে শূন্য দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ৬২০ মিলিয়ন ডলার বেশি ট্যারিফ প্রদান করতে হবে। ফলে বর্তমান আমদানি ও রপ্তানির তথ্যের হিসাবেও বাংলাদেশকে ৮৬০ মিলিয়ন ডলার কম ট্যারিফ প্রদান করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ কমালে বাংলাদেশের আরও বেশ কিছু সুবিধা আছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেসব পণ্য বেশি আমদানি করি, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (সয়াবিন, গম, তুলা), মেশিনারি ও ইলেকট্রনিকস (জেনারেটর, মেডিকেল যন্ত্রপাতি) এবং কেমিক্যালস ও ফার্মাসিউটিক্যালস।

এখন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমালে সয়াবিন, গম ও তুলার আমদানি খরচ কমবে, ফলে সয়াবিন তেল, আটা ও তুলা বা সুতার দাম কমবে। যেহেতু এসব পণ্য বাংলাদেশের চাহিদা তুলনায় অনেক কম আমদানি করতে হয়, তাই এগুলো আমদানি বাড়ালে আমাদের কৃষি খাত ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা কম; বরং এসবের আমদানি খরচ কম হলে আমরা আরও কম দামে তৈরি পোশাক বানাতে পারব।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের খারাপ খবর, তবে সুযোগ সম্ভাবনাও আছে০৩ এপ্রিল ২০২৫

এ ছাড়া সয়াবিন ও আটার মতো খাদ্যপণ্যের দামও কমে আসবে। অন্যদিকে মেশিনারি ও ইলেকট্রনিকস (জেনারেটর, মেডিকেল যন্ত্রপাতি) এবং কেমিক্যালস ও ফার্মাসিউটিক্যালসের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রভাব হবে। বর্তমানে দাম বেশি পড়ায় একটু সস্তায় পেতে এগুলোর বেশির ভাগ চীন, ভারত বা জাপানের মতো দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়। এসব পণ্যে আমাদের চীন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। এখন যদি একই দামে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য পাওয়া যায়, তাহলে সেটি আরও নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

এ কথা সত্য যে আমি যত সরলভাবে হিসাবটি দেখিয়েছি, বাণিজ্যের হিসাব–নিকাশ একটু জটিল। তবে আপনি যেভাবে হিসাব করেন না কেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা সেসব পণ্য আমদানি করি, তার জন্য আমাদের স্থানীয় খাত বা শিল্পকে প্রটেকশন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা এসব খাতে আমাদের চাহিদার তুলনায় স্থানীয় উৎপাদন অনেক কম। তাই, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল নিলে ট্রাম্পের এমন প্রতিশোধমূলক ট্যারিফও আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র। আমার এই তৈরি পোশাকের কাঁচামাল তুলার অন্যতম আমদানির বাজারও যুক্তরাষ্ট্র। তৈরি পোশাক খাত আমাদের অর্থনীতির অন্যতম লাইফলাইন। কাজেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেকোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আগেই বাংলাদেশের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যত দ্রুত করা যাবে, ততই মঙ্গল।

মো. ইমরান আহম্মেদ পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ এবং বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের পলিটিকস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিভাগের পিএইচডি গবেষক।
[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল ১ দশম ক দশম ক ২ র জন য আম দ র ক য লস আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল: স্ত্রীর দাবি
  • রূপালী লাইফের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার গরমিল
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইউনিটে ভর্তি: মাইগ্রেশন, বিষয় ও প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ প্রকাশ
  • হেলথ টেকনোলজি কোর্সে ভর্তি, অপেক্ষমাণ থেকে তৃতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল ঢাকা ইন্স্যুরেন্স
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে