আমদানির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি চার গুণ বেশি
Published: 4th, April 2025 GMT
পাল্টা শুল্ক বা রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ হার ঘোষণা করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি বেশি, সেসব দেশেই বেশি পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। সে বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থা ষষ্ঠ। অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি শুল্ক করা হয়েছে পাঁচটি দেশে। বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে ট্রাম্প শুল্কহার ঘোষণা করেছেন ৩৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৪৮ শতাংশ আরোপ হয়েছে পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওসের ওপর।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারসাম্য এখন বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে যত পণ্য আমদানি হয়, এর চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি রপ্তানি হয় সে দেশে। যদিও রপ্তানির সিংহভাগই তৈরি পোশাক। তবে এখনো বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে। এই ১৫ শতাংশের সঙ্গে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক বাড়তি হিসেবে যুক্ত হবে।
ইউএস সেনসাস ব্যুরোর হিসাবে, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি প্রায় আড়াই শ কোটি মার্কিন ডলার বেড়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি বেড়েছে সোয়া শ কোটি ডলারের মতো। যে গতিতে দেশের রপ্তানি বেড়েছে, সেই গতিতে আমদানি বাড়েনি।
সর্বশেষ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। তাতে গত বছর বাণিজ্য–ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬১৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের পক্ষে আছে।
• ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য• যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে মোট ২২১ কোটি ডলারের পণ্য।
• শুল্ক আরোপের প্রভাব পর্যালোচনা করতে রোববার সভা ডেকেছে এনবিআর।
এক দশক আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৫৯৯ কোটি ডলারের পণ্য। তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসেছে মাত্র ৯৪ কোটি ডলারের পণ্য। ওই বছর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি হয়েছিল ৫০০ কোটি ডলারের মতো। এরপর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি শুধু বেড়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য–ঘাটতি আরও বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে যা যায়
বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যত পণ্য রপ্তানি হয়, তার মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি হলো তৈরি পোশাক। ২০২৪ সালে দেশটিতে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
এ ছাড়া চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য, ওষুধ, প্লাস্টিক, মনোহারি পণ্য বেশি রপ্তানি করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর ৮-১০ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য, ২-৩ কোটি ডলারের ওষুধ, ১-২ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য ও মুদি পণ্য রপ্তানি হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যা আমদানি হয়
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যভান্ডারে দেখা যায়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল রয়েছে ২৯ কোটি ডলারের। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পণ্য এসেছে ২৬২ কোটি ডলারের।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি হিসাবের সঙ্গে বাংলাদেশের এনবিআরের হিসাবের পার্থক্যের কারণ সময়ের ব্যবধান। এনবিআর পণ্য খালাসের পর হিসাব করে, যুক্তরাষ্ট্র পণ্য রপ্তানির সময় হিসাব করে। হিসাবে পার্থক্যের আরেকটি কারণ হলো, তৃতীয় দেশ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আসছে বাংলাদেশে, যা যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবে দেখানো হয় না।
এনবিআরের হিসাবে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য আমদানি হওয়া ২৬২ কোটি ডলারের পণ্যের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ক-কর দিতে হয়নি। যেমন গম ও তুলার মতো পণ্যে শুল্ক-কর নেই। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে গড়ে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে কাস্টমস শুল্ক-কর আদায় করেছে ১ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ হাজার ৫১৫টি এইচএসকোডের (পণ্যের শ্রেণিবিভাজন) পণ্য আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে আট ধরনের পণ্যই আমদানি হয়েছে ৬৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এ পণ্য আমদানি হয় ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া মোট পণ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ। গড়ে ৪ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে পুরোনো লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ পণ্য আমদানিতে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হিসেবে এলপিজির উপাদান বিউটেন আমদানি হয়েছে ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। এর ওপর গড় শুল্কহার হলো ৫ শতাংশ।
তৃতীয় সর্বোচ্চ আমদানি হয় সয়াবিন বীজ। এ পণ্য আমদানি হয়েছে ৩২ কোটি ডলারের। এটি আমদানিতে অবশ্য শুল্ক-কর নেই।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা। এই পণ্য আমদানি হয়েছে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের। এটিতেও শুল্ক-কর প্রযোজ্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির তালিকায় আরও রয়েছে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), হুইস্কি, গাড়ি, গম, উড পাল্প, পুরোনো জাহাজ, সয়াকেক, কাঠবাদাম ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞরা যা বলেন
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুল্ক-কর কমিয়ে কৃত্রিমভাবে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং দেশে মার্কিন বিনিয়োগ আনা হলে সহজভাবে আমদানি বাড়বে। কারণ, মার্কিন উদ্যোক্তারা নিজ দেশ থেকে বাংলাদেশে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানি করবেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শুল্ক আরোপের পর সব দেশই নানামুখী নীতি নিচ্ছে। আমাদের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বাইরে অন্য কোনো সুযোগ নেই। আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করি, তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রান্তিক মানুষের জন্য। আবার তাদের তুলা ব্যবহার করছি। বিষয়টি যদি আমরা যুক্তি দিয়ে দাঁড় করাতে পারি এবং যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনায় নেয়, তাহলে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে বিশেষ প্রণোদনা দিতে পারে সরকার।’
বাংলাদেশের উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এনবিআর ট্যারিফ লাইনে থাকা পণ্যগুলোর ওপর শুল্ক-কর হার পর্যালোচনা করছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের শুল্ক আরোপের পর করণীয় কী, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআর। পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক-কর কমানোর বিষয়ে এনবিআরের পক্ষ থেকে কী করা যেতে পারে, তা–ও চিন্তা করা হচ্ছে। তিনি জানান, আগামী রোববার এ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) বৈঠক হবে।
এদিকে ট্যারিফ কমিশন রপ্তানিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সেটি বিশ্লেষণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় কি না, তা পর্যালোচনা করা হবে। ছুটির পর অফিস খুললে এ নিয়ে কাজ শুরু করবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার রেশ দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বাজারবিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই পাল্টা শুল্ক বিশ্বকে বাণিজ্যযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও মন্দা পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সে দেশের বিশেষজ্ঞরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ২০২৪ স ল শ ল ক কর আমদ ন ত র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
শক্তিশালী ব্যালান্স শিট প্রবৃদ্ধিসহ ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্য
চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সত্ত্বেও ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিতভাবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় (এনপিএটি) পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ সমন্বিতভাবে ব্যাংকটি ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৮২৮ কোটি। ব্যাংকিং খাতে এটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি।
একক (স্ট্যান্ডঅ্যালন) ভিত্তিতে ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকায়, যেখানে আগের বছরের ৭৩০ কোটি টাকার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সত্ত্বেও ব্র্যাক ব্যাংক ব্যালান্স শিটে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজের চেয়েও অনেক বেশি। এ সময় ব্যাংকটি এককভাবে গ্রাহক আমানতে ৩৪ শতাংশ এবং ঋণে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২৮ এপ্রিল ২০২৫ ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটির ২০২৪ সালের আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করে। ব্যাংকটির আর্থিক বিবরণীতে উঠে আসা উল্লেখযোগ্য সূচকগুলো এখানে তুলে ধরা হলো—
শক্তিশালী গ্রাহক-ভিত্তি এবং খাতভিত্তিক সহায়তা২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেল ব্যাংকিং সেগমেন্টে সাড়ে তিন লাখ নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকটির রিটেইল ব্যাংকিং সেগমেন্টে এখন মোট গ্রাহকসংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এই অর্জন পারসোনালাইজড ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান ব্যাংকিং প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারে ব্যাংকটির নিবেদিত প্রচেষ্টার প্রতিফলন। দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর এসএমই খাত। ব্যাংকটি এই সেগমেন্টে এক লাখের বেশি নতুন সিএমএসএমই গ্রাহক যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, যা উদ্ভাবন ও তৃণমূল উদ্যোক্তাদের সহায়তার ব্যাপারে ব্যাংকটির ব্যক্ত করা প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এ ছাড়া ব্যাংকটি করপোরেট ব্যাংকিং সেগমেন্টে ক্লায়েন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ হাজার। এভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের করপোরেট ব্যাংকিং সেগমেন্ট দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
কৌশলগত ডিজিটাল উদ্যোগ২০২৪ সালেও ব্র্যাক ব্যাংক ডিজিটাল রূপান্তরযাত্রায় ধারাবাহিক বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। নতুন অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ৭৭ শতাংশই খোলা হয়েছে ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট ওপেনিং প্ল্যাটফর্ম ‘ইকেওয়াইসি’র মাধ্যমে। ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকটির আস্থা অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ লাখ। এই ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপে ২০২৪ সালে ২ কোটি ৭০ লাখের বেশি লেনদেনের মাধ্যমে দেড় লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা গ্রাহকদের সহজ, সুবিধাজনক ও নিরাপদ ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের ব্যাপারে ব্যাংকটির প্রতিশ্রুতি প্রতিফলন।
সমাজের মানুষকে ক্ষমতায়ন এবং টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিতকরণব্র্যাক ব্যাংকের গৃহীত উদ্যোগ আর্থিক সাফল্যের চেয়েও বেশি কিছু। ব্যাংকিং খাতে মোট জামানতবিহীন সিএমএসএমই ঋণের ৪৩ শতাংশই অর্থায়ন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকটির ‘উদ্যোক্তা ১০১’ কর্মসূচির আওতায় দেশের ২১০ জন নারী উদ্যোক্তা বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা পেয়েছেন। ৯৭৯ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক গ্রামীণ উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
বৈশ্বিক খাতে অবদান এবং পরিবেশগত উন্নয়নরপ্তানিতে ২.০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানিতে ৩.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যক্রম সম্পন্নের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সবুজ কারখানা ও টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক পরিবেশগত খাতে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদানএকটি দায়িত্বশীল করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০২৪ সালে কর প্রদানের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক সরকারের রাজস্ব কোষাগারে ১ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকার অবদান রেখেছে।
নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণদেশের আরও বেশি মানুষের কাছে সহজ ও সুবিধাজনক ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ব্র্যাক ব্যাংক নিজেদের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করে চলেছে। ২৬৩টি শাখা ও উপশাখা, ৩২৯টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস এবং ১ হাজার ১১৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিস্তৃত ব্যাংকিং নেটওয়ার্কগুলো মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। সর্বাধিক বিস্তৃত ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহকদের আরও উন্নত, সহজ, সুবিধাজনক ও উপভোগ্য ব্যাংকিং সেবা দিতে ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০২৪ অর্থবছরে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স• সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২০২৩ সালের ৪.৩০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে ৬.৯৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
• শেয়ার প্রতি সমন্বিত নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) আগের বছরের তুলনায় ৩৭.৬০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪.১১ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
• শেয়ার প্রতি সমন্বিত নিট ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) ২০২৩ সালের ৩৭.০৫ টাকার তুলনায় ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০.৯১ টাকায়।
• ইয়ার-অন-ইয়ার ভিত্তিতে ব্র্যাক ব্যাংকের লোন পোর্টফোলিও বেড়েছে ২০ শতাংশ, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজ ছিল ৭ শতাংশ।
• এ সময় গ্রাহক আমানত ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজ ছিল ৭ শতাংশ।
• সমন্বিত রিটার্ন অন ইকুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) যথাক্রমে ১৯.৮০ শতাংশ এবং ১.৫১ শতাংশ।
• ঋণ প্রবৃদ্ধি, দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং বেশি নন-ফান্ডেড আয়ের ফলে ইন্টারেস্ট আয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে ২০২৪ সালে মোট সমন্বিত আয় ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
• ব্যাংকের কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মানবসম্পদ, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের ফলে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মোট সমন্বিত পরিচালন ব্যয় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
• বিশেষ করে আন্ডাররাইটিং, মনিটরিং এবং রিকভারির ওপর জোর দেওয়ার ফলে নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ২০২৩ সালের ৩.৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২.৬৩ শতাংশ হয়েছে।
প্রবৃদ্ধিযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক রেগুলেটরি ক্যাপিটাল বৃদ্ধির প্রতি জোর দিয়েছে। সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২০২৪ সালে ব্যাংকটির রেগুলেটরি ক্যাপিটাল ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৫ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা।
২০২৪ অর্থবছরের এই অসাধারণ অর্জন সম্পর্কে মন্তব্য করে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালে আমাদের এই অর্জিত সাফল্য গ্রাহক, সমাজ ও দেশের প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের অবিচল প্রতিশ্রুতির উদাহরণ। গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের আস্থা ও বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে আমরা উদ্ভাবন, ক্ষমতায়ন এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে অবদান অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।’
সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সব স্টেকহোল্ডারের কাছে ব্র্যাক ব্যাংক এখন এক আস্থার নাম। করপোরেট সুশাসন, কমপ্লায়েন্স এবং মূল্যবোধনির্ভর ব্যাংকিংয়ে ব্র্যাক ব্যাংক রোল-মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এমন অর্জনের জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহকদের প্রতি—তাঁদের অবিচল আস্থার জন্য; আমাদের পরিচালনা পর্ষদের প্রতি—তাঁদের ধারাবাহিক দিকনির্দেশনার জন্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি—চ্যালেঞ্জিং সময়েও তাঁদের দূরদর্শী রেগুলেটরি দিকনির্দেশনার জন্য।’
আর্থিক তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে: https://www.bracbank.com/en/investor-relations#financialStatements