বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিমসটেক সদস্য দেশগুলোকে পারস্পরিক স্বার্থ ও সবার কল্যাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা এই আহ্বান জানান। খবর বাসসের

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদের স্বপ্ন লালন করে আসছে। আমরা এমন একটি অঞ্চলের স্বপ্ন দেখি, যেখানে সব দেশ ও জনগোষ্ঠী ন্যায্যতা, পারস্পরিক সম্মান, পারস্পরিক স্বার্থ ও যৌথ কল্যাণের ভিত্তিতে সম্পৃক্ত হতে পারে।’

তিনি বলেন, বিমসটেক অঞ্চল বিশ্ব জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের আবাসস্থল, যেখানে বহু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনায় হিসেবে রূপান্তর করা গেলে সব দেশের জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

সরকার প্রধান বলেন, ‘অনেকে আমাদের জনসংখ্যাকে একটি ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ, আমাদের জনগণের মধ্যে অপূর্ণ সম্ভাবনার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।’

ড.

ইউনূস উল্লেখ করেন, বিমসটেক সচিবালয় হোস্টিং করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সংস্থার বিশাল সম্ভাবনাকে অর্থবহ উপায়ে কাজে লাগাতে প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি বলেন, বিমসটেক অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যৌথভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সীমান্ত পেরিয়ে বিদ্যুৎ বাণিজ্য এবং জ্বালানি দক্ষতা ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে আমাদের জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।’

সরকার প্রধান দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত ‘বিমসটেক গ্রিড ইন্টারকানেকশন চুক্তি’ জ্বালানি খাতে সহযোগিতার সূচনা পর্ব হতে পারে।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা আমাদের বিমসটেক অঙ্গীকার অনুযায়ী কানেক্টিভিটি বাড়াতে, পারস্পরিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসার, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত গমনাগমন সহজ করা বিমসটেক জনগণের সমৃদ্ধ কল্যাণের মূল চাবিকাঠি।

‘বর্তমানে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য মাত্র ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন খাতের নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত ‘বিমসটেক এফটিএ চুক্তি’ বাস্তবায়নের জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত কানেক্টিভিটি বাড়াতে অবদান রাখবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পঞ্চম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত ‘পরিবহন কানেক্টিভিটি মাস্টার প্ল্যান’-এর সময়মতো বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড. ইউনূস বলেন, ‘কিছু দেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে অনেক কিছু অর্জন করেছে। তবে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একত্রীকরণ ও উন্নয়নের সুফল পেতে হলে যৌথ আঞ্চলিক উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’

বাংলাদেশ এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক ইউনূস জানান, বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত ‘বিমসটেক সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি’ বিমসটেক অঞ্চলে বিশেষ করে ভূমিবেষ্টিত দেশ ও ভারতের সাত রাজ্যের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সরকার প্রধান বলেন, বিমসটেক ২৮ বছরের সংস্থা, তবে সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে এর প্রভাব এখনো সব সদস্য দেশে স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়নি।

ড. ইউনূস বলেন, সনদে স্বাক্ষর ও অনুমোদন এবং প্রাসঙ্গিক কার্যপ্রণালী প্রণয়নের মাধ্যমে বিমসটেক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্য শক্তি অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজ বিশেষভাবে চায় বিমসটেক কার্যকর, ফলপ্রসূ ও প্রকল্পভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করুক।’

বাংলাদেশ বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যানশিপ গ্রহণ করছে উল্লেখ করে তিনি সংস্থাটিকে পুনরুর্জীবিত করার জন্য সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সকল সদস্যদেশকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মতভেদ উপেক্ষা করে আমাদের পারস্পরিক আস্থা ও স্বার্থে সত্যিকার অর্থে সমৃদ্ধি ভাগাভাগির মনোভাব থাকা দরকার। যা কিছু আমরা একত্রে গ্রহণ করি, তার যেন প্রভাব থাকে ও ফলপ্রসূ হয়।’

তিনি বিমসটেকের অধীনে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কৌশল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুজ্জীবিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, আয় বৈষম্য ও পছন্দের বৈষম্য দূরীকরণ এবং অর্থনীতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য খাতভিত্তিক সহযোগিতা প্রদান করা অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থে কাজ করলেও, আমাদের উচিত আলোচনায় অন্যদের স্বার্থকেও সম্মান জানানো এবং সামগ্রিক সহযোগিতামূলক এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়া।’

সরকার প্রধান বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বিগত দশকের পরিবর্তনের সাথে তুলনা করা অনেকটাই অতীত কাহিনীর মতো মনে হয়, বহু পুরনো নীতি ও নিয়মাবলী আজ ভেঙে পড়ছে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে যুগোপযোগী করতে আমি আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার এবং এমন সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ চালুর পক্ষে, যা শুধু সম্পদ বৃদ্ধির পরিবর্তে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’

তিনি আরও বলেন, অঞ্চলজুড়ে ও এর বাইরেও বহু সম্পদ, সক্ষমতা ও সমাধান বিদ্যমান, যা আমাদের নিত্য সমস্যাগুলো, যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব মসট ক ক সহয গ ত ব মসট ক ইউন স ব কল য ণ র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপগঞ্জে লিফলেট বিতরণ 

আওয়ামীলীগ দেশের মানুষের অধিকার হনন করেছে। তাই, দেশে এক গণবিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে। ২৪এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ এ দেশ থেকে বিতারিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও রূপগঞ্জ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ দুলাল হোসেন। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর বাজার এলাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণকালে মোহাম্মদ দুলাল হোসেন এসব কথা বলেন। 

লিফলেট বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ, বিএনপি-যুবদলসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

মোহাম্মদ দুলাল হোসেন আরও বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে এ দেশের জনগণ একদলীয় শাসন ও ফ্যাসিবাদের শিকার হয়ে জিম্মি হয়ে ছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের গণজাগরণের মধ্য দিয়ে জনগণ আবারও তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। এখন সময় এসেছে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার, একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার।”

তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমানের ৩১ দফা দেশের পুনর্গঠনের পথনির্দেশনা। এই দফাগুলোতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”

এসময় স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দও লিফলেট বিতরণে অংশগ্রহণ করেন। তারা সাধারণ মানুষকে বিএনপির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করেন যে, দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে তারা রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত এবং জনগণের পাশে থাকবে।

স্থানীয়রা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার। একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা করছেন তারা। এ ধরনের লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমে জনগণ আরও বেশি সচেতন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলতি বছরের শুরুতে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যেখানে রাষ্ট্র সংস্কার ও জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য তুলে ধরা হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসির প্রতিটি কাজে জবাবদিহি থাকতে হবে
  • জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন
  • সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত বন্দর গড়তে চাই : সাখাওয়াত
  • বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপগঞ্জে লিফলেট বিতরণ 
  • জুলাই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়াবেন না: টুকু
  • সবাই অপেক্ষা করছে একটা নির্বাচনের জন্য
  • সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান
  • সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান
  • ট্রাম্পের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন ৪০ শতাংশে ঠেকেছে
  • জাতিসংঘে সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বৈঠক, ফিলিস্তিন ইস্যুতে উদ্বেগ